Srijit Mukherji: সৃজিত পরিচালক হিসেবে কৌশিককে আদৌ কি গুরুত্ব দেন? এতদিনে খোলাখুলি বললেন সবটা
চায়ের আড্ডায় দুই পরিচালকের এমন গপ্পো, সত্যিই বিরল। আর এমন বন্ধুত্ব যদি আরও জমাট বাঁধতে থাকে, তাহলে সত্যিই যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে তা শুভ, তা কিন্তু হলফ করে বলা যায়।
টলিউড হোক বা বলিউড, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নামে একটা অভিযোগ রয়েছে, নায়কে-নায়কে, নায়িকায়-নায়িকায় সামনা-সামনি দেখা হলে, যতই মিষ্টি ব্যবহারের ঝলক ফুটুক না কেন, ভিতরে ভিতরে বক্স অফিসের রেষারেষি বর্তমান। অনেকে আবার গুঞ্জন এড়াতে একে হেলদি প্রতিযোগিতা বলতেই বেশি পছন্দ করেন। তবে ইদানিং তো এরকম রেষারেষির কাণ্ড পরিচালকের সঙ্গে পরিচালকের মধ্যেও ঘটছে। সদ্য তার প্রমাণ রয়েছে টলিপাড়ায়। হঠাৎ টলিপাড়া দুই দ্বিগজ পরিচালক সকাল সকাল রাস্তায় চায়ের ঠেকে বসে, নিজেদের সিনেমা নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণে করছেন। একে অপরকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মাপকাঠি রেখেছেন। হ্যাঁ, এই দুনিয়ায় সত্যি বলে সত্যি কিছু না থাকলেও, কিছু কিছু সত্যিকারের বন্ধুত্ব কিন্তু নজরে পড়ে। এই যেমন ,সৃজিত মুখোপাধ্য়ায় ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের চায়ের আড্ডা আর বন্ধুত্ব। যা ধরা পড়ল টিভি নাইনের ঘরের বায়োস্কোপের ক্যামেরায়।
ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’। টলিউডের একঝাঁক তারকাকে একফ্রেমে ধরেছেন সৃজিত। এই ছবিতে দেখা যাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, সুহত্র মুখোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্রর মতো অভিনেতারা। আর সেই ছবির মুক্তির আগেই সম্প্রতি সকাল সকাল বাজার করতে বেরিয়ে পড়লেন টলিউডের দুই পরিচালক। তবে বাজারে পা রাখার আগে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। রাস্তার ধারে গাছে নিচে বসে ফিল্মি আড্ডায় মেতে উঠলেন সৃজিত ও কৌশিক। আর সেখানেই ফাঁস হল, দুই পরিচালক যখন নতুন কোনও ছবি তৈরি শুরু করেন, তখন তাঁদের মগজে ঠিক কী চলে?
এই খবরটিও পড়ুন
চায়ের কাপ হাতে হাঁটতে হাঁটতে কথা শুরু করলেন সৃজিত -কৌশিক। কৌশিককে প্রথমেই সৃজিত জিজ্ঞাসা করলেন, ”তুমি যখন লেখো কিংবা শট নাও, তখন কি তোমার কখনও মনে হয়, এই জায়গাটা আমার মতো হয়ে যাচ্ছে? আমার ক্ষেত্রে আমি কিন্তু চাই, কিছু কিছু জায়গা তোমার মতো হোক। মানে যেমন, কিছু কিছু দৃশ্য, সম্পর্কের সংলাপ, অন্তরঙ্গ মুহূর্ত বা সংবেদনশীল মুহূর্তে আমি তো প্রচণ্ডভাবে চাই, আমার লেখাটা তোমার মতো হোক। তাতে ওই দৃশ্যটা একটু জাতে ওঠে।” এর উত্তর দিতে গিয়ে, কৌশিক খুব একটা সময় নেননি। কৌশিক বলেন, ”দেখো সত্যি-মিথ্যের বাইরে, এটা একটা পরম্পরা হয়ে গিয়েছে। আমি যখন আগে লিখতাম, তখন নেড়া মাথা এক বুদ্ধ সন্ন্যাসীর মতো একটা লোক ইন্দ্রাণী পার্কে বসে, ও কী পড়ত বা ও কী লিখত সেটা নিয়ে ভাবতাম। এই দৃশ্যটা তো ওর মেজাজের দৃশ্য! তাই ওটা কিছু করার নেই। আবার যখন আমি অন্য়ধরনের কিছু একটা করছি, তখন মনে হয়েছে, মানে ঈর্ষার থেকে বা লোভ থেকে, যখন তোর হলের বাইরে হাউজফুল বোর্ড ঝুলে রয়েছে দিনের পর দিন এবং বক্স অফিস ফাটিয়ে দিচ্ছে। তখন আমার কিছু কিছু ছবিতে এমন হয়েছে, সব ছবিতে হয় না। তখন একজন মানুষ হিসেবে মনে হবে না যে, আমার যদি এমন হত! সেরকম বিষয় নিয়ে যখন কাজ করতে যাচ্ছি, তখন মনে হয়, এই বিষয়টার ব্যাপারে তুই কেমন ভাবে ভাবতি। তুই কী করতি, এর মধ্যে আবার দুটো অপশন রয়েছে, তুমি ওর মতো করবে, নাকি ওটাকেই এড়িয়ে যাবে। ওটা খুবই ইন্টারেস্টিং ব্য়াপার।” কৌশিকের এমন কথায় কিন্তু একেবারেই সহমত সৃজিত। তিনি বলেন, দেখো, একেবারে অনুকরণ তো সম্ভব নয়, তবে তোমার লেন্সের মধ্যে দিয়ে যদি, তোমার গুরুর শৈলী প্রস্ফুটিত হয়, তাহলে, সেটার একটা নিজস্বতা চলে আসে। ব্যাপারটা খুবই অরগানিক ভাবে হয়ে যায়।”
সৃজিত জানালেন, ‘নির্বাক’ ছবি তৈরির সময় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা, স্টাইল অফ ওয়ার্ক মাথায় ঘুরছিল। এমনকী, তিনি জানান, নির্বাকের সময় কৌশিক তাঁকে মেসেজ করে বলেছিলেন, বক্স অফিসের বাইরের দুনিয়ায় তোমাকে স্বাগত। সৃজিতের মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে কৌশিক বললেন, ”আমি যখন কাবেরী অন্তর্ধান বা দৃষ্টিকোণ বানাচ্ছি, তখন কীভাবে তোকে অস্বীকার করব। আমি তোর মতো জিনিসটা বানাতে পারব না। আবার এর পাশাপাশি, আমি অস্বীকারও করতে পারব না যে, তুই যেভাবে বিষয়টাকে দেখছিস। এটা পরস্পরকে ক্রমাগত অবসার্ভ করতে থাকা।”
চায়ের আড্ডায় দুই পরিচালকের এমন গপ্পো, সত্যিই বিরল। আর এমন বন্ধুত্ব যদি আরও জমাট বাঁধতে থাকে, তাহলে সত্যিই যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে তা শুভ, তা কিন্তু হলফ করে বলা যায়।