Ranjit Mallick: কোয়েলকে বলেছিলাম বাবা-টাবা দিয়ে চলবে না, নিজেকে প্রমাণ কর: রঞ্জিত মল্লিক

Ranjit Mallick Interview: কোয়েল তো বিশ্বাসই করতে পারেনি।বলে বাবা, তুমি আমায় বাদ দিয়ে দিতে বললে আসলে কী বলুন তো,বাদ দেওয়ার কথা বলেছিলাম দু'টো কারণে।একটা ফিল্ম তৈরিতে অনেক টাকা লাগে। তাই নতুন মেয়ে যদি ঠিক করে টানতে না পারে।কোনও কারণে রিজেক্টেড হলে বাবা হিসেবে আমার খারাপ লাগবে।

Ranjit Mallick: কোয়েলকে বলেছিলাম বাবা-টাবা দিয়ে চলবে না, নিজেকে প্রমাণ কর: রঞ্জিত মল্লিক
রঞ্জিত মল্লিক
Follow Us:
| Updated on: Sep 29, 2023 | 11:37 AM

বিহঙ্গী বিশ্বাস

ঘড়ির কাঁটা জানাচ্ছিল বিকেল গড়িয়েছে। অথচ বাইপাসের ধারের অফিসটিতে ঠায় বসেছিলেন মানুষটা। কালো ফ্রেমের চশমা, একগাল হাসি নিয়ে সাংবাদিকের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন অনবরত। ইদানিং শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছে না তাঁর, অথচ রঞ্জিত মল্লিককে দেখে বোঝার উপায়ই নেই। সম্ভাষণ-প্রতি সম্ভাষণের পর শুরু হল সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার না বলে বোধহয় ঘরোয়া আড্ডা বলাই ভাল। টিভিনাইন বাংলার নানা প্রশ্নের উত্তরে উঠে এল মল্লিক বাড়ির পুজো থেকে শুরু করে গুরুর সঙ্গে খুনসুটি– ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ।

এখন শরীর কেমন আছে?

শরীর ভাল আছে। এখন বেশ ভাল আছি আমি।

আর এই ভাল থাকার উৎস যে, মানে আপনার ‘গুরু’, সে কেমন আছে?

(প্রাণখোলা হাসি) গুরু… এহ বাবা, নামটা আপনারাও জেনে গিয়েছেন। সে তো ভালই আছে। গুরুকে নিয়েই তো এখন আছি। ওইটিই তো আমার এখন সবচেয়ে আনন্দের জায়গা।

মেয়ে কোয়েল মল্লিকের ছেলে কবীরকে ভালবেসে গুরু বলে ডাকেন রঞ্জিত মল্লিক। আর ছোট্ট কবীরও তাঁর দাদুকে ডাকে ওই একই নামে…

সম্পর্কটা তাহলে দুই গুরুর বলছেন, শিষ্য নেই কোনও?

(আবারও সেই একগাল হাসি) না না আমরা দু’জনেই দু’জনের গুরু। শিষ্য নেই। ও গুরু, আমিও গুরু।

মল্লিক বাড়িতে তো এখন বেশ ব্যস্ততা চলছে, পুজো তো এসেই গেল…

জন্মাষ্টমীতে তো আমাদের কাঠামো পুজো হয়। সেটিই হয়ে গিয়েছে। বাড়িতেই মূর্তি তৈরি হয়, জন্ম থেকে সেটাই দেখে আসছি। প্রতি বছর যা হয় এবারেও তাই হবে। মাঝে দু’বছর শরীর টরির খারাপ হল সবার তাই বাইরের কেউ আসতে পারেননি। তবে এবার আর ওই সব নেই। সবাই আসবেন।

( একটু থেমে)

তবে তার আগে আরও এক গুরুদায়িত্ব রয়েছে, হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় আমার ছবি ‘তারকার মৃত্যু’ মুক্তি পাচ্ছে।

শোনা গিয়েছিল, আপনি আর ছবি করবেন না, খবরটা সত্যি নয় তবে?

না না সত্যি আমি ভেবেছিলাম আর ছবি করব না। অনেক দিন তো হল, আর ভাল লাগছিল না। ভেবেছিলাম ঘুরে টুরে বেড়াব, এদিক ওদিক দেখব।

তবে এই মত বদল?

২০২০ সালে আমার ফিল্মি কেরিয়ারের ৫০ বছর পূর্ণ হয়। আমার হঠাৎ মনে হল, একটা ছবি করলে কেমন হয়। কোয়েল (মল্লিক)কে বললাম। ভেবেছিলাম যদি ছবি করি এমন একটা ছবি করব যা আগে করিনি। কোয়েল বলল, “বাবা যদি তুমি সত্যিই এমন কিছু ভেবে থাক, তবে একটা মার্ডার মিস্ট্রি করো না। কোনওদিন তো করোনি।” ভাবলাম খারাপ তো বলেনি। হরনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। ওর ছেলের থেকে আইডিয়া নিয়ে পদ্মনাভের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা স্ক্রিপ্ট লেখা হল। মার্ডার মিস্ট্রি তার মধ্যে আবার একটা ভৌতিক ব্যাপারও আছে। সব মিলিয়ে না এমন একটা ব্যাপার আমি সত্যি আগে করিনি।

ছবির নাম ‘তারকার মৃত্যু’, তারকাদের কি সত্যিই মৃত্যু হয়?

এখানে তো ওই ভাবে বলা হয়নি। একজন লেখকের মৃত্যু হয়েছে। সেই অর্থে তারকা…

সে তো এই ছবিতে, আর সাধারণভাবে যদি প্রশ্ন করি আপনাকে, তাহলে?

(আবারও সেই প্রাণখোলা হাসি) না না, তারকার কী করে মৃত্যু হবে? তারকা তো তৈরি হয় সকলের ভালবাসা পেয়ে। তাই ঝট করে তাঁদের মৃত্যু হয় না।

একটু আগে বলছিলেন, সিনেমাটিতে নাকি এক ভৌতিক অধ্যায়ও আছে, বাস্তব জীবনে আপনিও তেনাদের দেখা পেয়েছেন?

না তা পাইনি। তবে ভূতে বড়ই ভয় পাই আমি। চোর-ডাকাতের সঙ্গে ঘুষোঘুষি করে লড়ে জিতে যাব আমি। কিন্তু ভূতকে তো আর ঘুষোঘুষি করা যায় না। তাই ভূতকে একটু সমীহ করেই চলি।

হরনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে তো আপনার সেই কবেকার সম্পর্ক, প্রথম আলাপের কথা মনে আছে?

অঞ্জন চৌধুরী আমার বিশেষ বন্ধু ছিলেন। ওঁর ‘শত্রু’ ছবিতে সহকারী পরিচালক ছিল হর। সেখান থেকেই আলাপ। সে দেখতে গেলে প্রায় ৩৫-৪০ বছর হয়ে গেল। এতদিন ধরে কাজ করে ওর সঙ্গে একটা আলাদা র‍্যাপো তৈরি হয়ে গিয়েছে।

কোয়েলকে যখন প্রথম হরনাথ চক্রবর্তী লঞ্চ করেন তখন আপনি কী বলেছিলেন? ইন্ডাস্ট্রিটা তার আগে এতদিন ধরে দেখেছেন একটা তো মতামত নিশ্চয়ই ছিল…

এই রে, সেটা শুনলে কোয়েল এখনও রেগে যায়…।

সে কী! কী এমন বলেছিলেন আপনি?

(হাসি) হর তো আমাদের ঘরের ছেলে। হর যখন ‘নাটের গুরু’তে ওকে নিল, আমি পরিষ্কার করে হরকে বললাম, “হর দু’দিন দেখবেন, যদি দেখেন পারছে না তাহলে ওকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে নেবেন।”

কোয়েল আপনাকে এটা জানার পর কিছু বলেনি! যেখান স্বজনপোষণ নিয়ে এত কথা, সেখানে আপনি নিজের মেয়েকেই বাদ দিয়ে দিতে বললেন!

কোয়েল তো বিশ্বাসই করতে পারেনি। বলে বাবা। তুমি আমায় বাদ দিয়ে দিতে বললে! আসলে কী বলুন তো, বাদ দেওয়ার কথা বলেছিলাম দু’টো কারণে। একটা ফিল্ম তৈরিতে অনেক টাকা লাগে। তাই নতুন মেয়ে যদি ঠিক করে টানতে না পারে। আর দুই, যদি কোনও কারণে রিজেক্টেড হয়ে যায় পরে বাবা হিসেবে আমারও তো খারাপ লাগবে। তাই আগেই বলেই রেখেছিলাম বাজে করলে বাদ। কিন্তু কোয়েলের ভাগ্য ভাল। সবটা ভাল হয়েছিল।

আর প্রথম ছবি মুক্তির আগে মেয়েকে কী বলেছিলেন?

বলেছিলাম, কোয়েল, একটা কিংবা মেরকেটে দু’টো ছবিতে লোকে তোমায় পাঠ পাইয়ে দেবে রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে বলে। অনেকের কৌতুহল থাকবে, যাই দেখে আসি, রঞ্জিত মল্লিকে মেয়ে কী অভিনয় করেছে। কিন্ত থার্ড ছবি থেকে নয়। ওটা তোমাকে নিজেকে প্রমাণ দিতে হবে। বাবা-টাবা দিয়ে চলবে না। এটাই নিয়ম। শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়। সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাবা দিয়ে হয় না। নিজে যদি মনযোগী না হয়। সে দিক দিয়ে আমি খুশি। কোয়েল নিজের কাজটা মন দিয়ে করে।

আপনি-কোয়েল এতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে, অথচ আপনাদের কোনও শত্রু নেই, সংসারটাও করেন মন দিয়ে, কাজটাও করেন, ডিভোর্সের জমানাতে সবটা ব্ল্যালেন্স করেন কী করেন?

ভাল আর মন্দ না সব জায়গাতেই আছে। সেই রামায়ণ-মহাভারতের যুগ থেকেই আছে। শুধু যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আছে তা নয়, সব পেশাতেই আছে। কিন্তু বাপ ঠাকুরদারা যা শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে, ভাল মন্দ, এই এগুলো একটু মেনে চলা। একটু নাম ধাম হয়ে গেলেই লোকে এই সব ভুলে যায়। একটু ব্যালান্স করে চলা, লোভে না পড়া, এই সব মেনে চললেই দেখবেন জীবন অনেক সুন্দর হবে।

যদি নিজের জীবন নিয়ে একটা বই লেখেন বা ছবি বানান, তবে তাঁর নাম কী দেবেন?

এই রে, নাম! (একটু ভেবে) ‘নানা রঙের দিনগুলি’ রাখা যায়, কম দিন তো হল না। এই নামটাই বোধহয় পারফেক্ট হবে।