ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০১তম জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় পুত্র-কন্যা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেয়ে বাসবী ঘটক
১৬ এমএম স্ক্রিনে কৌতুকসম্রাটকে দেখে কি বোঝার উপায় ছিল বাস্তবে তিনি একজন ভয়ঙ্কর গুরু গম্ভীর মানুষ? পর্দায় দেখলে আর বাস্তবে দেখলে মনে হবে দুই মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর ১০১তম জন্মদিনে স্মৃতির সাগরে ভাসলেন ছেলে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেয়ে বাসবী ঘটক।
‘মাসীমা, মালপো খামু’
সাড়ে চুয়াত্তর-এর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ এক অমর সংলাপ, যা আজও ঘুরে ফিরে আসে বাঙালি সিনেপ্রেমীদের মুখে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্যময় থেকে ভানু হয়ে ওঠা নিঃসন্দেহে কোনও ছায়াছবির থেকে কম কিছু ছিল না। আজও টেলিভিশনের পর্দায় সাদা কালো ছবিতে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি, তাঁর হাস্যরসে মোড়া প্রতিটি সংলাপ এখনও আকৃষ্ট করে প্রতিটি দর্শককে। আজ তিনি ১০১। ১৯২০-র ২৬ অগস্ট ঢাকার বিক্রমপুরে জন্ম হয় সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
১৬ এমএম স্ক্রিনে কৌতুকসম্রাটকে দেখে কি বোঝার উপায় ছিল বাস্তবে তিনি একজন ভয়ঙ্কর গুরু গম্ভীর মানুষ? পর্দায় দেখলে আর বাস্তবে দেখলে মনে হবে দুই মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর ১০১তম জন্মদিনে স্মৃতির সাগরে ভাসলেন ছেলে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেয়ে বাসবী ঘটক।
তাঁর ছেলের কথায়, “বাবাকে বাড়িতে দেখা ছিল সত্যিই ভাগ্যের। বাড়িতে তো পাইনি। আমরা ভাইবোনেরা কে, কোন ক্লাসে পড়ি, তা-ও জানতেন না বাবা। আজকাল দেখি অভিনেতাদের ছেলেমেয়েরা অভিনয়ই করছে। বেশ লাইমলাইটে থাকছে। আমাদের বেলায় এসবের কোনও চল ছিল না। বাবা বলতেন: ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে তো কী হয়েছে? নিজে খেটে যদি কিছু করতে পারো তবে করো। না হলে আমার ছেলে বলে সুযোগ পাবে, তা চলবে না। এই বিষয়ে বাবা ছিলেন ভীষণঁ শক্ত খুঁটি।” ভানুপুত্রের আরও সংযোজন, “অন্যায় আবদার কোনওদিন প্রশ্রয় দেননি। বাবার খ্যাতি, বাবার গৌরব কোনওদিন আমাদের স্পর্শ করতে দেননি। বাংলাদেশ থেকে এসে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার যে লড়াইটা বাবা করেছিলেন, তার প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটা সময় আমাদের কাছে বলে গিয়েছেন।” গৌতমববাবু মনে করিয়ে দিলেন, “আমার বাবা কিন্তু শুধু অভিনেতা ছিলেন না। বাবার আরও অনেককিছু ছিল।”
জন্মদিনে বাবাকে নিয়ে স্মৃতির সাগরে ডুব দিলেন কন্যা বাসবী ঘটক। তাঁর কথায়, “যে কোনও মধ্যবিত্ত বাড়িতে বাবারা যেমন হয়। শাসন, আদর্শ, আবার আদর এই তিনে মিলে পরিপূর্ণ ছিলেন আমার বাবা। আমার সব থেকে বেশি আনন্দ হত এই কথাটা ভেবে আমার বাবাকে আমি যেমন ভালবাসি, তেমনই আবার অন্যরাও ভালবাসে। সবথেকে বেশি আমাকে আশ্চর্য করে বাবা কিন্তু অভিনয় জগতে প্রবেশ করার আগে প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীনেন গুপ্তর সঙ্গে তাঁকে দেখা যেত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছপা হতেন না কখনও। তাই আমার বাবা যদি আজ অভিনেতা না হতেন, তা হলেও কোনও না কোনও ভাবে মানুষের স্মৃতিতে তিনি ঠিক রয়ে যেতেন।”
আরও পড়ুন:বাচিক শিল্পী গৌরী ঘোষের প্রয়াণ, এক অভিভাবক হারাল আবৃত্তি শিল্প
আরও পড়ুন:মেঘলা দুপুরে শহরের হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হল নুসরতের সন্তান