Abhishek Chatterjee Demise: ‘পিছন থেকে কাউকে ছুরি মারেনি, দুইজনেই ছিল ভীষণ আবেগি’, স্মৃতিচারণায় তাপস-পত্নী নন্দিনী
Abhishek Chatterjee Demise: অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় 'মিঠুদা'। না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন যিনি। কেরিয়ার শুরু তরুণ মজুমদারেরর 'পথভোলা' দিয়ে। আদরের মিঠাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণ তাপস পালের স্ত্রী নন্দিনীর।
সকলের কাছে ও অভিষেক, ইন্ডাস্ট্রি ডাকে মিঠু বলে আর আমার কাছে শুধুই মিঠাই। প্রথম আলাপ পথভোলার সময়ে। এনটিওয়ান স্টুডিয়োতে ওই ছবির এক স্ক্রিনিং চলছিল। আমি তখন প্রেগন্যান্ট। মিঠুর তখনও বিয়ে হয়নি। তাপস আলাপ করিয়ে দিল, ওই সেই প্রথম চেনা। এভাবেই কখন যে মিঠাই পরিবারের অংশ হয়ে গেল বুঝতেও পারলাম না।
হয়তো বললাম মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাব, ও এসে বলল আমিও যাব। জিজ্ঞাসা করলাম যদি ছুটি হতে দেরি হয়? এক মুহূর্ত চিন্তা না করে বলল দাঁড়াব। মেয়েকে তোলার পরেই আমার কাছে আবদার দোকানে নিয়ে চল। বললাম কী কিনবি? মিঠাই বলত, ইংরেজি গানের সিডি। কিনে দিলাম। ও বাড়ি ফিরে গেল। এমনই ছিল আমাদের মিঠাই। আবার পুজোর সময় আমি, মিঠাই, তাপস আমার মেয়ে সবাই মিলে গাড়ি করে ঘুরতে গিয়েছি। ফিরে এসে তাপস ক্লান্ত। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। খাটের একধারে মিঠাই আর একধারে আমি বসে গল্প করতে করতে তাকিয়ে দেখি সকাল হয়ে গিয়েছে। তারপরেই অর্ডার, দিদি চা দাও। চা খেয়েই বেরিয়ে পড়ল শুটে।
একটা ছোট্ট কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, অনেক বছর আগের কথা। টলিউডের এক প্রোডিউসারের মেয়ের বিয়ে। কলকাতার পাঁচতারায় নিমত্রণ। তাপস আউটডোরে শুটে। আমি গিয়েছি মেয়েকে নিয়ে। হঠাৎ পেছন থেকে কে একটা এসে ধরল, তাকিয়ে দেখি মিঠাই। দেখা হতেই বলল বাড়ি চল। আমি বললাম, দাঁড়া কিছু খাব না। মিঠাই কপট রাগ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেন তুমি খেতে পাও না? বলেই টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এল আমাদের। ওই রাত্রে বাড়ি এসে আবার ওর আবদারে মাছের ঝোল দিয়ে কাতলা মাছ রাঁধতে হয়েছিল আমায়। রাত তখন প্রায় একটা। এতটা ছেলেমানুষ আমার মিঠাই, এতটাই আমার উপর অধিকারবোধ ছিল ওর। ফুলকপি আলু দিয়ে মাছের ঝোল ছিল বড় পছন্দের। মশলা টশলা বেছি পছন্দই করত না।
মিঠাই ছিল আমার দেওর। যত আবদার আমার কাছে। তাপসও অসম্ভব ভালবাসত ওকে। দুজনের একসঙ্গে কম ছবি তো করেনি। জানেন তাপসের শেষ ছবিতেও সঙ্গী ছিল মিঠাই। আরও একটা কথা মনে পড়ে গেল। মিঠাইয়ের একবার এক ফাইট সিকুয়েন্স করতে গিয়ে কেটে গিয়েছে। তাপসকে ফোন করে বলল আমাকে আসতে। আমি গেলাম। আমাকে দেখেই বলে বৌদি আমার মুখে দাগ হয়ে গেল, আমি কি আর অভিনয়ে ফেরত আসতে পারব? বারবার বলছে, কী করব ডাবের জল মাখব? কীভাবে ঠিক হবে? সেই ওকে ডাবের জল কিনে দিয়ে তবে বাড়ি গেলাম।
দুজনের মন ছিল ভীষণ পরিষ্কার। আমার স্বামী আর আমার দেওর কোনওদিনও অঙ্ক করে চলেনি। ইন্ডাস্ট্রির মাপজোক কোনওদিনই বুঝে উঠতে পারেনি তারা। মাথা নয় আবেগ দিয়েই চলেছে এতগুলো বছর। আজকের যুগে আবেগ দিয়ে চললে তো মুখ থুবড়েই পড়তে হয়। ওদের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে, তবে কী জানেন তো আমার চোখে ওরা জয়ী। দিনের শেষে আয়নার সামনে চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে পেরেছে। এর চেয়ে শান্তি আর কী বা হতে পারে? কাজের জন্য কখনও কাউকে ম্যানিপুলেট করেনি। মিষ্টি কথায় কাউকে কখনও পিছন থেকে ছুরিও মারেনি ওরা। অভিনেতা হিসেবে তাই দুজনেই সফল। যা বলত দুজনেই মুখের উপর বলত। ওই যে বললাম আড়ালে লুকিয়ে কিছু বলার অভ্যেস ওদের ছিল না। কারচুপির সংজ্ঞা জানা ছিল না, প্রভাব খাটাতে পারলে হয়তো আজ তথাকথিত আরও বড় বড় জায়গায় থাকতে পারত।
দুবছর আগে আমার স্বামী চলে গেল, আর দুদিন আগে আমার স্বামীর ছোট ভাই চলে গেল। এক মায়ের সন্তান ছিল না ওঁরা, ছিল না রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু তাপস আর অভিষেককে কাছ থেকে আমি দেখেছি তো এতগুলো বছর, জোর গলায় বলতে পারি জন্মগত ভাই না হয়েও ওরা ছিল তার চেয়েও বেশি। এমনই মধুর ছিল ওদের সম্পর্ক, ছিল এতটাই মজবুত।