AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

EXCLUSIVE Chiranjeet Chakraborty: ‘দর্শককে কাছে আসতে বলে হিরো নিজেই দূরে সরে যাচ্ছেন… খুবই মুশকিল’, বললেন চিরঞ্জিত

Bengali Films: চিরঞ্জিতও কি বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ানোর আর্তি জানাচ্ছেন? নাকি কথা বলছেন গোড়ায় ঘটে যাওয়া গণ্ডগোল নিয়ে? TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বললেন অভিনেতা-পরিচালক?

EXCLUSIVE Chiranjeet Chakraborty: 'দর্শককে কাছে আসতে বলে হিরো নিজেই দূরে সরে যাচ্ছেন... খুবই মুশকিল', বললেন চিরঞ্জিত
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।
| Updated on: Jun 20, 2022 | 2:22 PM
Share

স্নেহা সেনগুপ্ত

দীপক চক্রবর্তী। বাংলা ছবির জগতে তিনি পরিচিত ‘চিরঞ্জিত’ নামে। বাংলা কমার্শিয়াল ছবির জগতে একসময় দাপিয়ে অভিনয় করেছিলেন চিরঞ্জিত। কেবল অভিনয় নয়, তিনি জমিয়ে পরিচালনাও করেছেন। গ্রামগঞ্জের মানুষের জন্য ছবি তৈরি করেছেন। তাঁর ছবিতে হলে সিটি পড়েছে, পয়সা ছুড়েছে দর্শক। সেই হল নেই। সেই দর্শকও নেই। এ দিকে বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ানোর আর্তি জানাচ্ছেন কিছু স্বঘোষিত টলিউডপন্থী। চিরঞ্জিতও কি বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ানোর আর্তি জানাচ্ছেন? নাকি কথা বলছেন গোড়ায় ঘটে যাওয়া গণ্ডগোল নিয়ে? TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বললেন অভিনেতা-পরিচালক?

তথাকথিত কিছু টলিউডপন্থী সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আর্তি জানাচ্ছেন দর্শককে—’বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’, ‘বাংলা ছবি দেখুন’। এমন কী ঘটল যে, হঠাৎ করে আলাদাভাবে বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে দর্শকদের?

চিরঞ্জিত: এটাই তো মুশকিল। ছবি ভাল হলে মানুষ সেই ছবি এমনিই দেখবেন। পাশে এসে দাঁড়াতে বলা খারাপ কিছু নয়। আমি একটা ছবি তৈরি করে মানুষকে সেটা দেখতে বলতেই পারি। সেটাই হয়তো পাশে এসে দাঁড়াতে বলা। সবাই জানেন, বাংলা ছবি খুব ভাল চলছে না। হাউজ়ফুল কমে গিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিকে যদি বাঁচাতে হয়, তা হলে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করে ছবির মানের উপর। অনেকে আছেন দর্শককে টাকা দিয়ে হল হাউজ়ফুল করেন। কিন্তু সেটা তো সব শোয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। একটা, দু’টো, তিনটে, বড় জোর চারটে শো চলতে পারে এই ভাবে। তার বেশি তো পারবে না। কিন্তু একটা ছবি চালাতে গেলে ৩-৪ সপ্তাহ ভালভাবে ছবিটা চলতে হবে। শিবুদের (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) ছবি ভালই যাচ্ছে। ‘বেলাশুরু’ ভাল যাচ্ছে। ‘অপরাজিত’ ভাল যাচ্ছে। ভাল ছবি হলে গিয়ে মানুষ দেখছেন।

প্রচুর ছবিতে আপনিও অভিনয় করেছেন। কত ছবি আপনি পরিচালনাও করেছেন। আপনাকে তো কোনওদিনও বলতে হয়নি—’বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়ান’…

চিরঞ্জিত: না আমাকে বলতে হয়নি। এখন হয়তো বলতে হয়।

কোথাও গিয়ে কি মনে হয়, দক্ষিণ ভারত কিংবা বলিউডের ছবির প্রতি বাংলার দর্শক ঝুঁকেছেন দেখে এখন নির্মাতারা ভীত? ফলে এই কাতর আর্তি?

চিরঞ্জিত: কিছুটা হতেই পারে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এসে যাওয়ার কারণেও অনেকটা সাফার করছে বাংলা ছবি। অনেকে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই কারণেই, একটা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে, আহ্বান তো করতেই পারে। আসলে আমাদের ‘মাস’ দর্শক চলে গিয়েছে। কতিপয় দর্শক রয়ে গিয়েছেন। হলের সংখ্যা ছিল ৭৫০। সেখানে রয়ে গিয়েছে ৪০টা।

এটা কেন হল বলে মনে হয় আপনার?

চিরঞ্জিত: আমরাই দর্শকদের হাত ছেড়ে দিয়েছি। ওদের কথা চিন্তা করিনি। সোজা অঙ্ক হল, ধরুন একটি রেস্তোরাঁ। যে দর্শক মাছ-ভাত খান, ডাল-ভাত খান… আমরা তাঁকে সেটা দিইনি। অন্যরকম খারাপ পরিবেশন করেছি গত ২০ বছর ধরে। শিক্ষিত দর্শকের ছবি তৈরি করছি আমরা। তার ফলে ‘মাস’ দর্শক মুখ ফিরিয়েছে। গালাগালি করে বেরিয়ে গিয়েছেন। এর ফলে হাউজ়গুলো, হলগুলো চলে গিয়েছে।

এর জন্য দক্ষিণী ছবির রিমেক কতখানি দায়ী?

চিরঞ্জিত: না, না। আমার মনে হয় বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করছিল না। আমরা আরও ভাল সিনেমা তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। কিছু দর্শক নিশ্চয়ই আছেন সেই সব ছবির। দেড় কোটি দর্শকের মধ্যে ২ লাখ দর্শক সেই ছবিই দেখেন। কিন্তু গ্রাম বাংলায় তো সেই ধরনের ছবি কেউই দেখেন না। সেই ধরনের ছবি চলে না গ্রাম বাংলায়। ফলে কমার্শিয়াল সেট-আপের ছবি তৈরি করতে হবে, যা দক্ষিণীরা করেন। ওঁরা ‘পুষ্পা’ তৈরি করেন, ‘আরআরআর’ তৈরি করেন। সেই ধরনের ছবি আমরাও করেছি। অ্যাকশন ছবি তৈরি হয়। আজগুবি শট থাকে। মারধর থাকে অনেক বেশি। হিরোকে হাইলাইট করা হয়। যা ছিল আগে, সেটাই দক্ষিণ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাই (পড়ুন বাংলা ছবির জগৎ) মাঝখানে ভুলে গিয়েছি বিষয়টা। এই ধরনের বাংলা ছবিকে আমরা ‘খারাপ ছবি’, ‘কুৎসিত ছবি’ বলতে শুরু করেছি। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ইত্যাদিতে ফেলে দিয়েছি। বেটার সিনেমায় ঢোকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বেটার সিনেমার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

বাংলা ছবির বাজেট কি অন্যতম কারণ নয়?

চিরঞ্জিত: অবশ্যই কারণ। এখনকার বাংলা ছবির বাজেট দিন-দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের সময় বাজেট বেড়েছিল। ছবি না চললে কীভাবে হবে! ওটিটি প্ল্যাটফর্ম একটা সমস্যা তৈরি করেছে। যিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দেখেন, তাঁর অ্যানড্রয়েড ফোনের প্রয়োজন হয়। অ্যানড্রয়েড সকলের থাকে না। অনেক দাম। বাঙালি দর্শক—আলুওয়ালা-পটলওয়ালদের—অ্যানড্রয়েড নেই। আমাদের সময় তাঁরাই তো দর্শক ছিলেন বাংলা ছবির। সেই মানুষগুলো ৬০ বার ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ দেখেছেন। তাঁরা আসলে সিনেমা দেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। প্রথম কথা মাল্টিপ্লেক্সে তাঁরা ঢোকেন না। জামাকাপড় যা থাকে, তাতে তাঁরা ঢুকতে ভয় পান। মল থেকে জামাকাপড় তাঁরা কেনেন না। তারপর মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকে দেখেন ১৮০ টাকার টিকিট। যদি কেউ ঢুকেও পড়েন, পালিয়ে বাঁচেন আর কী! ফলে মাল্টিপ্লেক্সে বাংলা বাণিজ্যিক ছবির দর্শক ঢোকেন না। ওটিটি প্ল্য়াটফর্মে ঢুকতে গেলে প্রতিমাসে মোটা টাকা দিতে হয়। সেটাই যদি তিনি দেন, তা হলে বড়-বড় বাজেটের হিন্দি, দক্ষিণ ভারতীয় ছবি দেখেন। বাংলা ছবি কেন দেখবেন?

আপনার কথা শুনে এটাই মনে হচ্ছে, সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য ভাল বাজেটের, হিরোকেন্দ্রিক ছবির এখন বাংলায় বড্ড দরকার…

চিরঞ্জিত: হ্যাঁ… এক্কেবারেই। যেরকম ছবি আমরা তৈরি করতাম আর কী! আমরা ‘প্রতিকার’ করেছি। আমি, ভিক্টর (অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়) অভিনয় করেছি কত। আমি ‘প্রতীক’ করেছি। ওই ধরনের ছবিগুলো খুবই চলত। সেই ছবিগুলো আমরা ভুলে গেলাম। সেটাকে ‘খারাপ’ ছবির বিভাগে ফেলে দিলাম। সুতরাং, খারাপ ছবির দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অধিকাংশ দর্শকই ‘খারাপ’ ছবির দর্শক। গ্রামেগঞ্জে, মফস্বলে প্রেক্ষাগৃহ নেই। ছবি তৈরি করলেও কোথায় দেখানো হবে? সার্ভাইভ করা এখন খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। এই সময় খুব বড় রকম পরিবর্তন দরকার। শান্তি বজায় রেখে, আলোচনা করে, বাংলা ছবিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। এরকমভাবে চললে এক্কেবারেই হবে না। কিছু ছবি তো চললও না। যেমন সোহমের ছবিটা। ‘চিনে বাদাম’…

‘চিনে বাদাম’ ছবিটার ক্ষেত্রেই দেখুন… ছবি মুক্তির ৫ দিন আগে হিরো নিজেই সরে এলেন… এটা কি কোনও নেতিবাচন বার্তা বহন করল?

চিরঞ্জিত: করলই তো। দর্শককে কাছে আসতে বলে হিরো নিজেই দূরে সরে যাচ্ছেন। এটা তো খুবই মুশকিল। হচপচ হয়ে আছে গোটাটা।

সিনিয়র হিসেবে আপনি কি বার্তা দিতে চাইবেন এখনকার বাংলা ছবির নির্মাতাদের?

চিরঞ্জিত: গ্রামের সাধারণ মানুষ, যাঁরা ছবি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁদের কথা একটু ভাবুন। এঁদের জন্যও ছবি তৈরি করুন। কেবল শিক্ষিত মানুষের জন্য নয়। গরিবের পাশে দাঁড়ান। বাংলা ছবির পাশে এসে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে ঠিকই। তাঁর আগে গরিব মানুষের, গরিব দর্শকের পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁদের মতো সাবজেক্ট নিয়ে ছবি তৈরি করুন। তবেই গরিব এসে আপনাদের পাশে দাঁড়াবেন। সাধারণ ছবিই বাংলা ছবিকে বাঁচাতে পারে। গ্রামের লোককে পাসতা খেতে দিলে তাঁরা খাবেন না। ডাল-ভাত, আলু-ভাত এসব চাই…

গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস