World Suicide Prevention Day 2022: মানসিক স্বাস্থ্যের ভাঙন আপনাকে আত্মহননের দিকে ঠেলছে না তো? সাবধান করবে স্মার্টফোন

Suicide Prevention Day: ফেসবুক লাইভ, পোস্ট, ভিডিয়ো বা অডিও পডকাস্ট... একাধিক অংশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরির চেষ্টা করে AI।

World Suicide Prevention Day 2022: মানসিক স্বাস্থ্যের ভাঙন আপনাকে আত্মহননের দিকে ঠেলছে না তো? সাবধান করবে স্মার্টফোন
ছবি - TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Sep 10, 2022 | 4:54 PM

Mental Health: জীবনের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে কাজের প্রকৃতি। দূর হয়েছে নিকট, বদলে কমে এসেছে সময়। কমেছে কথা বলার সময়, নিজেকে প্রকাশ করার সময়। আর এরই ফলস্বরূপ বাড়ছে আত্মহননের প্রবণতা। আজ ১০ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এই উপলক্ষে সচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে সারা বিশ্বেই, কিন্তু অন্যদের সচেতন করতে কতটা সফল হচ্ছে সচেতন নাগরিকরা? এই খামতি পূরণে মানুষ শরণাপন্ন AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।

“প্ৰযুক্তির উন্নতিসাধনে বাধা আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে যে সুযোগের দরজা একের পর এক খুলে যায়, তা অভাবনীয়”, আশাবাদী স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা রেবেকা বার্নার্ট। গবেষকদের মতে, আত্মহত্যার প্রবণতা বোঝার ক্ষেত্রে একজন কাউন্সিলরের পাশাপাশি কাজে লাগানো যেতে পারে AI-কেও। রোগীর স্বাস্থ্য রেকর্ড, দিনলিপি ও আচার-ব্যবহার খতিয়ে দেখে একজন ডাক্তারের সমতুল্য কাজ করতে সক্ষম AI। WHO-এর রিপোর্ট বলছে, আত্মহত্যা যাঁরা করেন, তাঁদের প্রায় ৪৫%-ই আত্মহননের মাত্র একমাস আগে হয়তো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, এমনকী তার মধ্যেও মাত্র ২০% নাগরিক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছিলেন!

ব্যস্ততার মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার অবসর নেই কারওই। আর তাই এক্ষেত্রে প্ৰযুক্তিই যে একমাত্র পন্থা, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন গবেষকরা। AI-কে সর্বাত্মকভাবে কাজে লাগিয়ে চলছে গবেষণা। উন্নতিসাধন করে নতুন কৌশলে চলছে মানসিক স্বাস্থ্য মাপজোক করে নেওয়ার চেষ্টা। আর এক্ষেত্রে হাতের মুঠোয় থাকা মুঠোফোনই যে আত্মহত্যা রুখতে বড় ভূমিকা নিতে পারে, তা জানাচ্ছেন প্ৰযুক্তিবিদরাই।

আপনার কণ্ঠস্বরই আপনার মনের আয়না

স্মার্টফোন ব্যবহার করেন? তাহলে এবার সেই ফোনই জানাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের কথকথা। সম্প্রতি ওয়ার্কেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এমন এক AI নির্ভর অ্যাপ নির্মাণ করার চেষ্টায় আছেন, যা স্মার্টফোনকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বলে দেবে যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর আত্মহত্যা করার প্রবণতা ঠিক কতখানি!

AI নির্ভর এই প্রোগ্রামের নাম EMU (Early Mental Health Uncovering)। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই অ্যাপ ফোনে সব রকমের অনুমোদন পেয়ে গেলে সেন্সর ব্যবহার করে কণ্ঠ বিশ্লেষণ করবে। এক্ষেত্রে অ্যাপে থাকা নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট পাঠ করতে হতে পারে, আবার কল রেকর্ডিংয়ের কিছু অংশও নিতে পারে এই অ্যাপ। মনস্তাত্বিক এডুইন বর্ডিয়াক্সের মতে, “মানুষের কণ্ঠে তার মনোভাব প্রকাশ পায়। সাধারণ মানুষের পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়, তবে অনেক মানুষের উপর পরীক্ষা চালানোর ফলে AI এই কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী হয়ে ওঠে।”

আপাতত নির্মাণের স্তরে রয়েছে এই অ্যাপ। “এই অ্যাপ যা করবে, তাকে এক কথায় ফোনের ময়নাতদন্তও বলতে পারেন”, জানালেন বর্ডিয়াক্স। ফলে ফোনে সঞ্চিত তথ্য বা প্রাইভেসি নিয়ে বিশেষ সচেতন থাকলে কথা বলুন আপনার থেরাপিস্টের সঙ্গে। অ্যাপ যদি কোনওভাবে আত্মহত্যার তিলমাত্র প্রবণতা খুঁজে পায়, তাহলেই সে সরাসরি সতর্ক করতে পারবে আপনার থেরাপিস্টকে। ফলে এই ধরনের কোনও অ্যাপ ব্যবহারের আগে যে থেরাপিস্টের অনুমোদন প্রয়োজন, তা জানাচ্ছেন গবেষকরাই।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে মাঠে এবার টেক জায়ান্টরা

Futuristic Suicide Prevention Tech in Development that might Help People

শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষকরাই নন, আত্মহনন রুখতে মাঠে নেমেছে টেক জায়ান্টরাও। ন্যাশনাল সুইসাইড প্রিভেনশন লাইফলাইন (Suicide Prevention Lifeline) ও ট্রেভর প্রজেক্ট (Trevor Project) নামক LGBTQ হটলাইন থেকে তথ্য আহরণ করেছে গুগল (Google)। সূত্রের খবর, চ্যাট, ফোন বা অফলাইন মেসেজের মাধ্যমে তিনটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় ট্রেভর প্রজেক্টে এবং তারপরই ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন কর্তৃপক্ষ। উত্তরের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর বাক্যের শব্দচয়ন গুরুত্ব সহকারে দেখে AI। আর এই শব্দই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন ঘটায়। এই প্রজেক্টে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছে Google.org Fellows, খবর সূত্রের।

পরিযায়ী শ্রমিকদেরও প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা

করোনাকালে কাজ হারিয়ে আত্মহননের মাধ্যমে মুক্তির পথ বেছে নিয়েছেন বহু মানুষ। সেনা, পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মী… মহামারীর মাঝে মানসিকভাবে আহত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন এই জীবিকার বহু মানুষ। যদিও নির্মাণকার্যের সঙ্গে যুক্ত নাগরিকদের আত্মহননের প্রবণতা যে খুব একটা কম নয়, তা সাফ জানাচ্ছে মার্কিন স্বাস্থ্য দফতর (CDC)। নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের শারীরিক ক্ষতিসাধনের হার বেশি, শারীরিক ধকলও বেশি, পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাজ হারানোর সম্ভাবনাও মারাত্মক।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে মাঠে নেমেছে মার্কিন সংস্থা জবসাইটকেয়ার (JobSiteCare)। মূলত টেলিমেডিসিনের (Telemedicine) মাধ্যমে নির্মাণ কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এই সংস্থা। ২৪X৭ চালু এই সংস্থার হেল্পলাইন। যদিও ভারতের মতো দেশে যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিত্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেখানে এই ধরনের টেলিমেডিসিন পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে ধন্ধে বিশেষজ্ঞরা।

AI কিন্তু মানুষ নয়, তাই সাবধান!

AI আর যাই-ই হোক, মানুষ নয়। আর তাই AI-এর ভুল করার সম্ভাবনাও অধিক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভুলে কোনও নাগরিককে ভুলবশত ‘আত্মহত্যাপ্রবণ’ বলে দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব, আর এর জেরে হয়তো যে সত্যিই মানসিক সমস্যায়, সে থেকে যেতে পারে আঁধারে। মেটা (Meta) সূত্রে খবর, ফেসবুক (Facebook) ইতিমধ্যেই AI কাজে লাগিয়ে নেটিজেনদের (Netizen) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পেরেছে।

প্ৰযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুক লাইভ, পোস্ট, ভিডিয়ো বা অডিও পডকাস্ট… একাধিক অংশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরির চেষ্টা করে AI। পশ্চিমী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু সংস্থা মেটার সঙ্গে হাত মিলিয়ে নেটিজেনদের মানসিক সাপোর্ট দিতে শুরু করেছে বলে খবর। ফেসবুক মেসেঞ্জারের (Facebook Messenger) মাধ্যমে নেটিজেনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভারতের মতো দেশে এই ধরনের টেক সাপোর্ট কবে চালু হবে, সে বিষয়ে এখনই সদুত্তর দিতে অপারগ বিশেষজ্ঞরা।

আপনার তথ্যের গোপনীয়তা বজায় থাকবে?

তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে AI-এর সামান্যতম ভুলচুকে সমস্যায় পড়তে পারেন আপনি, জানাচ্ছেন প্ৰযুক্তি বিশেষজ্ঞরাই। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করে অনেক ক্ষেত্রেই রীতিমতো পুলিশ ডেকেছে AI, মার্কিন মুলুকে এমন নজিরও সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে। এমতাবস্থায় এই ধরনের অ্যাপের ওপর এখনই ভরসা করা যে ভুল, তা সাফ জানাচ্ছেন মনস্তাত্বিক এডুইন বর্ডিয়াক্স। এডুইনের মতে, “পুলিশ ডাকলে একেবারেই কাজের কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে যিনি মানসিকভাবে দুর্বল, তিনি আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতে সকলে সমান স্বচ্ছন্দ না-ই হতে পারেন।”

জার্নাল অফ ল’ অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেসের (Journal of Law and the Biosciences) তথ্য মোতাবেক, প্রাইভেসি বজায় রাখার জন্যই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (European Union) ফেসবুকের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি AI যদি আপনার ফোন থেকে সকল তথ্য জানতে থাকে, আপনার সম্পর্কে সবকিছু জেনে যায় অনায়াসে, সেক্ষেত্রে তথ্য চুরির একটা ভয় থাকেই। মানসিক সাপোর্ট দেওয়ার নামে যে সব অ্যাপ এখনও পর্যন্ত প্রচলিত, সেগুলো যে আপনার অজান্তেই তথ্য হ্যাকারদের হাতে তুলে দিচ্ছে না, তা নিশ্চিত করবে কে? প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।