World Suicide Prevention Day 2022: পুরুষদের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-এ যা বললেন মনোচিকিৎসক
Suicide: ‘ন্যাশনাল ক্রাইম স্টেশন ব্যুরো’-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জনের।
আজ ১০ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় আত্মহত্যার কারণে। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম স্টেশন ব্যুরো’-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জনের। এর মধ্যে কৃষক, বেকার, ছাত্র, গৃহবধূদের আত্মহত্যার হারই সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী এবং ১৮-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কিন্তু কেন? এই প্রসঙ্গে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি (আইপিও)-র শিক্ষক-চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি-র সুইসাইড প্রিভেনশন সেল-এর কো-অর্ডিনেটর মনোচিকিৎসক সুজিত সরখেলের সঙ্গে। আজ প্রথম পর্ব।।
প্রশ্ন: ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০,৭৩২। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যা বাড়ার কারণ কী-কী বলে আপনার মনে হয়?
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি হওয়ার কারণ হল সম্পর্কের টানাপোড়ন। দেখা যায়, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা মানসিকভাবে তুলনায় বেশি জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সম্পকর্কে কেন্দ্র করে সামান্য কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করেও তারা বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে দেয়। প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও পড়াশোনা সম্পর্কিত বিষয় নিয়েও এই বয়সের ছেলেমেয়েরা মানসিক চাপে থাকে। যেমন পরীক্ষায় পাস না করা, আশানুরূপ ফল না-করার কারণেও কিশোর-কিশোরীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
প্রশ্ন: ১৮-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ৫৬,৫৪৩। মূলত কী ধরনের সমস্যা থেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ১৮-৩০ বছর বয়সীরা?
১৮-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনার পিছনেও কিশোর-কিশোরীদের মতোই প্রেমের সম্পর্ক দায়ী হয়। প্রেমের সম্পর্ক, সম্পর্কে বিচ্ছেদ—এই ধরনের ঘটনাগুলো আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে। ১৮-৩০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে মূলত বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যা দায়ী। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিশোর-কিশোরী কিংবা ১৮-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি এত বেশি কেন? ঝোঁকের মধ্যে নিজের ক্ষতি করে ফেলার প্রবণতা এই বয়সের মানুষদের মধ্যে বেশি। দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যার জন্য কেউ হয়তো কীটনাশক বা বিষ খায়নি। হয়তো নিজের সামান্য ক্ষতি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই কীটনাশক বা বিষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিশোর-কিশোরী, ১৮-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই ধরনের আত্মহত্যার সংখ্যাটা বেশি। এই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনাকে ‘ইমপালসিভ সুইসাইড’ বলা হয়। এছাড়াও কেরিয়ার সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। এই বয়সের ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি প্রোডাক্টিভ। আর দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর এই বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যাটা একই রয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: তথ্য বলছে পুরুষদের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। আত্মহত্যার সঙ্গে লিঙ্গ বা জেন্ডার-এর কোনও সম্পর্ক আছে কি?
আত্মহত্যার সঙ্গে লিঙ্গের সম্পর্ক বহুকাল ধরেই রয়েছে। বিশ্বজুড়ে যদি আত্মহত্যার তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, মহিলারা আত্মহত্যার পথ বেশি বেছে নেয়। কিন্তু আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু বেশি হয় পুরুষদের ক্ষেত্রে। কারণ পুরুষরা আত্মহত্যার যে পথ বেছে নেয়, সেগুলো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে মৃত্যুর সম্ভাবনাও অনেক বেশি। আমাদের দেশে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার করার সংখ্যাটা বেশি। বিদেশে বেশিরভাগ মানুষ ‘গান শট’ বেছে নেন। এই উপায়ে মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। কিন্তু মহিলারা সাধারণত কোনও পিল বা ট্যাবলেটের সাহায্য নেয়। কয়েক বছর আগেও ভারতে পুরুষ ও মহিলাদের আত্মহত্যার হারটা কাছাকাছি ছিল। গৃহবধূদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যাটা বেশি। মহিলারা পণপ্রথা, গার্হস্থ্য হিংসার কারণে আত্মহত্যার পথ বেশি বেছে নেয়। অন্যদিকে, পুরুষরা কেরিয়ারের চাপে বেশি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যদিও প্যান্ডেমিকের কারণে সামগ্রিকভাবে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে।
সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশ আগামিকাল ১১.০৯.২০২২