ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা: জেনে নিন এই রোগের কী-কেন

এই রোগ আসলে কী? রোগের লক্ষণই বা কী কী? কীভাবে মানুষ সতর্ক হবেন? ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমার প্রভাব কী----TV9 বাংলা-কে এইসব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন পালমোনোলজিস্ট অনির্বাণ বিশ্বাস।

ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা: জেনে নিন এই রোগের কী-কেন
ধরুন আপনি বিছানা ঝাড়লেন, ঘরের ঝুল পরিষ্কার করলেন, একটা আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলেন কিংবা অ্যালার্জি হয় এমন জিনিস যেমন- চিংড়ি মাছ খেলেন, সেক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
Follow Us:
| Updated on: Feb 10, 2021 | 8:06 PM

ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমার শিকার ছিলেন কাজল আগরওয়াল। সদ্যই একথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই সমস্যা ছিল তাঁর। শীতের সময় কষ্ট বেড়ে যেত। তখন ইনহেলারই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা। কেবল কাজল নন, ছোট থেকে অনেকেই ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমার শিকার হন।

এই রোগ আসলে কী? রোগের লক্ষণই বা কী কী? কীভাবে মানুষ সতর্ক হবেন? ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমার প্রভাব কী—-TV9 বাংলা-কে এইসব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন পালমোনোলজিস্ট অনির্বাণ বিশ্বাস।

ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা আসলে কী?

অনির্বাণ- আমাদের শ্বাসনালীতে স্প্যাজম থাকলে সেটা সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে সঠিকভাবে বাতাস ঢুকতে না পারার কারণে সাঁইসাঁই শব্দ হয়।

এখন প্রশ্ন হল কী এই স্প্যাজ়ম? কীভাবেই বা শ্বাসনালীতে এটা আসে?

দেখুন সকলের তো আর শ্বাসনালী সংকুচিত হয় না। তবে যাঁদের একটা জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে বা অ্যাস্থমার সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট হয়, তাঁদের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। আমাদের শ্বাসনালীতে যখন বাইরের বাতাস ঢোকে, তখন বিভিন্ন তাপমাত্রার ফারাক, ধুলো-বালি-দূষণ সবই শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে। এর ফলে যাঁদের হয়তো একটু শ্বাসকষ্টের প্রবণতা রয়েছে তাঁদের সমস্যা হয়।

অনেকের ক্ষেত্রেই শ্বাসনালীতে বাইরের বাতাসের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান ঢোকার ফলে রি-অ্যাকশনস্বরূপ শ্বাসনালীর ভিতরের অংশ থেকে বলা ভাল শ্বাসনালীর ভিতরের দেওয়াল থেকে অনেক জিনিসের ক্ষরণ হয়। এর ফলে তৈরি হয় স্প্যাজম। যার প্রভাবে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে সঠিকভাবে বাতাস ঢুকতে পারে না। যাঁর জেরে শ্বাসকষ্ট এবং বুকে সাঁইসাঁই শব্দ হতে পারে। এই পরিস্থিতিকেই বলে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা।

মূলত কাদের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা হতে পারে?

অনির্বাণ- যাঁদের একটা জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে, অর্থাৎ শ্বাসনালীর জিনগত রিঅ্যাক্ট করার প্রবণতা যাঁদের থাকে, তাঁদের এই সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের কাছে কোনও রোগী এলে আমরা আগে পারিবারিক ইতিহাস জিজ্ঞেস করি। তখন হয়তো দেখা যায় যে কারও বাবার হাঁচির সমস্যা রয়েছে। কারও মায়ের হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একেই বলে জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ড। এর প্রভাবে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা হতে পারে। বাইরের উপাদান শ্বাসনালীতে ঢুকলে যাঁদের রিঅ্যাক্ট করার প্রবণতা বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রেই সমস্যা বেশি।

এর লক্ষণ কী কী?

অনির্বাণ- ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা প্রধানত এপিসোডিক হয়। অর্থাৎ মাঝেমাঝে সমস্যা দেখা দেবে। নাগাড়ে হয়তো কোনও সমস্যা হবে না। তবে একবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হলে তা একটানা ১০ দিন পর্যন্তও থাকতে পারে। হতে পারে কাশিও। সেক্ষেত্রে সঠিক ওষুধপত্র খেলে স্বাভাবিক নিয়মেই কষ্ট কমবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, অল্প বয়স হোক বা বেশি বয়স, এমন কোনও সমস্যা দেখা দিলে এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদিও একটা কথা ঠিক যে প্রাথমিক অ্যাটাকেই প্রাণ সংশয়ের কোনও ব্যাপার থাকে না। তবে ব্যাপারটা অবহেলা করলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে। মূলত, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে সাঁইসাঁই শব্দ, অল্পেই হাঁপিয়ে যাওয়া—- ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমা হলে এইসব লক্ষণ দেখা দেয়।

কখন অ্যাটাক হতে পারে?

অনির্বাণ- ধরুন আপনি বিছানা ঝাড়লেন, ঘরের ঝুল পরিষ্কার করলেন, একটা আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলেন কিংবা অ্যালার্জি হয় এমন জিনিস যেমন- চিংড়ি মাছ খেলেন, সেক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। আচমকাই ব্যাপারটা ট্রিগার করতে পারে। শ্বাসনালীতে স্প্যাজ়ম জমা হলে সংকুচিত হয়ে যায়। তারপরই শুরু হয় সমস্যা। তবে সবসময় যে শ্বাসকষ্ট হবে এমনটা নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা না হলে এবং কেউ রোগটা অবহেলা করলে কিন্তু সারা বছরই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে পারেন। কারণ তাঁরা অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যান। তবে বাকিদের ক্ষেত্রে এমনিই খানিকক্ষণ পর শ্বাসকষ্ট কমে যায়।

দূষিত এলাকায় কি শ্বাসকষ্ট বাড়ে?

অনির্বাণ- অবশ্যই। হাতেগরম উদাহরণ কলকাতা আর দিল্লি, দুটোই খতরনাক জায়গা। অনেক সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, কয়লা খনি, চালের কারখানায় যাঁরা কাজ করেন বা পাথর ভাঙেন, তাঁরা সারাক্ষণই ধুলোবালিতে থাকেন। এর প্রভাবে ওইসব লোকের ফুসফুসে যে ধরনের অ্যাস্থমার লক্ষণ দেখা যায়, তাকে ব্লে অকুপেশনাল বা এনভায়রনমেন্টাল অ্যাস্থমা বলা হয়। দূষণ বেশি মানেই ব্রঙ্কিয়াল অ্যাস্থমার সমস্যা বেশি হতে বাধ্য। এমনকি ফুলের পরাগ রেণু থেকেও এই শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়তে পারে। শহরাঞ্চলে দূষণের মাত্রাও বেশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যাও বেশি।

এই সিজন চেঞ্জের সময়ে কী কী সতর্কতা নেবেন?

অনির্বাণ- আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের তাপমাত্রাও বদল হচ্ছে। ফলে সেটা শ্বাসনালীতে প্রভাব ফেলবেই। তাই অবশ্যই সতর্ক থাকুন। শীতের পোশাক ব্যবহার করা ছেড়ে দিলে চলবে না। কান-মাথা ঢেকে রাখতে হবে। ঠান্ডা লাগানো একেবারেই চলবে না। শুধু তাই নয়, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা আইসক্রিমও এখন না খাওয়াই ভাল। আর একটা অবশ্যই বলব। যেহেতু সামনেই সরস্বতী পুজো এবং ফুলের পরাগ রেণু থেকে শ্বাসকষ্ট হয়, তাই পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় সাবধানে থাকুন। এছাড়া এই সিজন চেঞ্জের সময় বিভিন্ন ভাইরাস, যেমন- সায়নো ভাইরাস, অ্যাকনো ভাইরাস—- এরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাবে ফুসফুসকে সংক্রামিত করতে পারে এইসব ভাইরাস। তাই যাঁদের অ্যাস্থমার সমস্যা রয়েছে তাঁরা সতর্ক থাকুন। গরম পোশাক ব্যবহার করুন, গরম জলেই স্নান করুন।

প্রতিকার কী?

অনির্বাণ- এমন নয় যে এই রোগের চিকিৎসা নেই। বরং বেশ ভাল রকম রয়েছে। ইনহেলার নেওয়াই একমাত্র উপায়। তবে হ্যাঁ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। আর যাঁরা সিগারেট খান, তাঁদের জন্য বলা যে ধূমপানের অভ্যাস কিন্তু অ্যাস্থমার প্রবণতা বাড়ায়। যাঁর শ্বাসকষ্ট নেই বা অ্যাস্থমা নেই, তাঁরও হতে পারে এই রোগ।