Balasore Train Accident Update: দেহ এক, দাবিদার অনেক, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ‘লোভে’ উদয় হচ্ছে ভুতুড়ে পরিবার
Dead body Identification: উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা আঞ্জারুল হকের পরিবারের অভিযোগ, তাদের আত্মীয়ের দেহ অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মোবাইলে ছবি দেখিয়ে দেহ শনাক্ত করেন, কিন্তু যখন তাঁরা ভুবনেশ্বরের হাইটেক হাসপাতালে দেহ নিতে গেলে, তাদের অন্য দেহ দেখানো হয়।
ভুবনেশ্বর: মৃতদেহ একটা, এদিকে দাবিদার দুই-তিনজন। সকলেরই দাবি, এই দেহ তাঁর আত্মীয়ের। দুর্ঘটনায় যেহেতু দেহগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং পচন ধরতেও শুরু করেছে, তাই খালি চোখে দেখে দেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে এক দেহের দাবিদার তিনজন কী করে হতে পারেন। অন্য কারোর হাতেই বা দেহ চলে যাচ্ছে কী করে? জানা গিয়েছে, ক্ষতিপূরণের লোভেই এই কাজ করছেন অনেকে। রেল মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল, ওড়িশা সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় (Coromandel Express Accident) মৃতদের ক্ষতিপূরণ (Compensation) দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপূরণ হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই অনেকে মৃতদেহগুলি নিজের পরিবারের সদস্য বলে দাবি করছেন।
ক্ষতিপূরণের লোভে একজনের দেহ অন্য কেউ নিয়ে চলে যাচ্ছে, সেই অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ভুবনেশ্বর এইমসের ডিরেক্টর আশুতোষ বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযোগ এসেছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহ শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কী হচ্ছে ওড়িশার হাসপাতালে?
শুক্রবার রাতে বালেশ্বরের বাহানগার কাছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। মেইন লাইনের বদলে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মালগাড়ির সঙ্গে। দুর্ঘটনার জেরে লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডলের ২১টি কামরা। তিনটি কামরা পাশের ডাউন লাইনেও গিয়ে পড়ে। সেই লাইনে আবার আসছিল ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়। ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত ৭০০-রও বেশি যাত্রী। শনিবার রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুবনেশ্বর এইমসে মৃতদেহগুলি আনা শুরু হয়। কিন্তু দেহ শনাক্তকরণের কাজ শুরু হতেই সামনে এসেছে গরমিল।
উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা আঞ্জারুল হকের পরিবারের অভিযোগ, তাদের আত্মীয়ের দেহ অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মোবাইলে ছবি দেখিয়ে দেহ শনাক্ত করেন, কিন্তু যখন তাঁরা ভুবনেশ্বরের হাইটেক হাসপাতালে দেহ নিতে গেলে, তাদের অন্য দেহ দেখানো হয়। যে আটটি দেহ শনাক্তকরণের জন্য় দেখানো হয়, তাদের মধ্যে একটিও আঞ্জারুল হকের নয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাদের বলা হয়, দেহ হস্তান্তর করা হয়ে গিয়েছে। তারা যেন এই ছবি কাউকে না দেখানো না হয়, সেই কথাও বলা হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদের দেহ হস্তান্তরের নোডাল সংস্থা হিসাবে কাজ করছে ভুবনেশ্বর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন। দেহ বদল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, পুরসভার তরফে আঞ্জারুলের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেই জানানো হয়েছে। তবে সেই আশ্বাস আদৌই পূরণ হবে কি না, সেই সদুত্তর নেই কারোর কাছে।
জানা গিয়েছে, শনিবার মধ্যরাত থেকে এইমসে দেহ আসতে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই ৬১টি অ্য়াম্বুল্যান্সে ১২৩টি দেহ আসে। সেই রাত থেকেই শুরু হয়েছে লড়াই। ১১৮ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিরলস ভাবে মন শক্ত করে চালিয়ে যাচ্ছেন ময়নাতদন্তের কাজ। শুধু ভুবনেশ্বর এইমস নয়। রায়পুর, নাগপুর, দিল্লির থেকেও অ্যানাটমি-ফরেন্সিক বিভাগের ১৮ জন চিকিৎসকের এখন আস্তানা ভুবনেশ্বর এইমস। ১৬২ দেহের শুধু ময়নাতদন্ত নয়। দেহে যাতে পচন না ধরে সেই চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করতে হয়েছে এইমসের চিকিৎসকদের। এমব্লামিং নামে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয়েছে মৃতদেহ। ভুবনেশ্বর এইমসের অ্যানাটমি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর প্রভাসরঞ্জন ত্রিপাঠী জানান, ফর্মালিন ও গ্লিসারিন দিয়ে সমস্ত দেহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া পারাদ্বীপ থেকে বিশেষ কন্টেনার আনানো হয়েছে, যেখানে মৃতদেহগুলি রাখা হচ্ছে। এই কন্টেনারের তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি হওয়ায় পচন ধরার সম্ভাবনা কম।