TV9 Explained: ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা ছিল, আছে এবং থাকবে’, অজয়ের দেবগণের এই দাবি আদৌ সত্যি?
TV9 Bangla Explained: অনেকেই মনে করেন হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কারণ গোটা দেশেই এই ভাষার প্রচলন রয়েছে। সেই কারণে এই ধারণা অনেকের মধ্যেই জোরাল হয়েছে।
বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগণের (Ajay Devgn) একটি টুইট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, সব জায়গায় আলোচনা চলছে। দক্ষিণী অভিনেতা কিচ্ছা সুদীপকে (Kiccha Sudeep) নিশানা করে টুইটে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা (Hindi As National Language) হিসেবে দাবি করেছিলেন অজয় দেবগণ। টুইটে অজয়ের দাবি, ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা ছিল, আছে, থাকবে।’ দক্ষিণী রাজ্য কর্নাটকে অজয়ের এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ দেখিয়েছে একাধিক সংগঠন। এমনকী কর্নাটকের শীর্ষ বিজেপি বিরোধী নেতারাও অজয়কে জোরাল আক্রমণ করেছেন। একধাপ এগিয়ে বলিউডি অভিনেতা ‘বিজেপি মুখপাত্র’ হিসেবে দাগিয়ে দিয়েছেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। অজয়ের এই দাবি ঘিরে আরও একবার নতুন করে পুরানো বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আদৌ কী হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা?
হিন্দি কি আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা?
অনেকেই মনে করেন হিন্দি আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কারণ গোটা দেশেই এই ভাষার প্রচলন রয়েছে। সেই কারণে এই ধারণা অনেকের মধ্যেই জোরাল হয়েছে। তবে জেনে রাখা ভাল, ভারতের কোনও রাষ্ট্রীয় ভাষা নেই। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এই ভাষা ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হয় বলে এই ধারণা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে। ভারতের সংবিধান কোনও ভাষাকেই জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়নি। গোটা দেশের সরকারি ও বেসরকারি কাজের ক্ষেত্রে যে ভাষা বলা বা লেখা হয়, সেটাই জাতীয় ভাষা। সংবিধান তৈরির সময় হিন্দিকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও দেখা গিয়েছিল ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ এই ভাষাতে কথা বলে। সেই কারণে সংবিধানে কোথাও জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দির উল্লেখ নেই। ২০১০ সালে গুজরাট হাইকোকর্টে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে আদালত। হিন্দিকে সরকারি ভাষা বলা গেলেও, জাতীয় ভাষা কোনওভাবেই বলা যায় না। ১৯৫০ সালের সংবিধানে দেবনগরী মুদ্রণে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উল্লেখ রয়েছে।
জাতীয় ভাষা বনাম সরকারি ভাষা
এই কথা স্পষ্ট হিন্দি কোনওভাবে রাষ্ট্রীয় ভাষা নয়, বাকি কয়েকটি ভাষার মতো এটিও একটি সরকারি ভাষা। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে বেশ কিছু সরকারি ভাষার উল্লেখ রয়েছে। যদিও ভারতে ১০০টির বেশি কথিত ভাষা রয়েছে কিন্তু দেশের সংবিধান ২২ টি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সংবিধানে ১৪ টি সরকারি ভাষা ছিল, পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে অন্য ভাষাগুলি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। অসামীয়া, বাংলা, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনি, মালায়লম, মণিপুরী, মরাঠি, নেপালি, ওড়িয়া, পঞ্জাবি, সংস্কৃত, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু, উর্দু, বোদো, সাঁওতালি, মৈথিলি এবং ডোগরি সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে।
হিন্দি ভাষা নিয়ে বিতর্ক
অজয় দেবগণের টুইটের আগে একাধিক বার হিন্দি ভাষা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবিত খসড়াতে হিন্দিকে অষ্টম শ্রেণি অবধি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল, সেই নিয়ে গোটা দেশে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার হিন্দি ভাষার ব্যবহার নিয়ে সওয়াল করে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগেই রাষ্ট্রপুঞ্জে হিন্দি ভাষা ব্যবহারে অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল। দক্ষিণী রাজ্যগুলি বরাবারই নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি অনেকে বেশি আবেগপ্রবণ। তাই ভাষা নিয়ে কোনও বিতর্ক দেখা দিলেই দক্ষিণী রাজ্যগুলি থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। অজয়ের টুইট নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক কোন দিয়ে মোড় নেয়, সেদিকে সকলের নজর থাকবে।