ISRO: মহাকাশে ট্রাফিক জ্যাম, একটু হলেই ঘটত মহা বিপদ!
Space Jam: ইসরো-ই জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি তাদের বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে ১ অক্টোবর সংঘর্ষ হতে চলেছে। সেইমত, ১৯ সেপ্টেম্বরই তারা চন্দ্রযান-টু-এর অরবিটরের ম্যানুভার সেরে ফেলেন। যার ফলে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এটি খুব বড় একটা সাফল্য।
নয়া দিল্লি: দুর্ঘটনা কি আর শুধু রাস্তাঘাটেই হয়? মহাকাশেও ঘটছিল মহা বিপত্তি। অল্পের জন্য এড়ানো গেল বিপদ। আর এই সবের মধ্য দিয়েই ফের একবার মহাকাশ গবেষণায় ভারতের দক্ষতা দেখতে পেল দুনিয়া। সারা বিশ্বকে ইসরো দেখিয়ে দিল, কতটা দায়বদ্ধতা বজায় রেখে এগিয়ে চলছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা।
প্রথমে সাফল্য বা উত্কর্ষতার কথায় আশা যাক। রাস্তায় গাড়িতে-গাড়িতে যে ধাক্কা লাগে, তা কোনও নতুন কথা নয়। আকাশ অনেক বড়। তবুও কিন্তু কখনও কখনও দুটি বিমানের মধ্যেও সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। এরকম সংঘর্ষ একাধিকবার হয়েওছে। আকাশের চেয়ে মহাকাশের পরিসর আরও বড়। সেখানেও কিন্তু এমন সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে।
শুনে খটকা লাগলেও কারণটা হল মহাকাশে মানুষের পাঠানো নানা অবজেক্ট বা বস্তুই বহুক্ষেত্রে একটাই নির্দিষ্ট অরবিটে ঘুরে চলে অবিরাম। ২০১৯ সালে রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান-টু। সেবার চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করা যায়নি। যা কিনা গতবছর চন্দ্রযান-থ্রি-তে সম্ভব হয়েছে। তবে, চন্দ্রযান-টু-এর অরবিটর কিন্তু এখনও চাঁদের চারপাশে ঘুরে চলেছে। সে অ্যাক্টিভ আছে। এবং পৃথিবীতে নিয়মিত নানারকম তথ্যও পাঠাচ্ছে। এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ারও একটা অরবিটর চাঁদের চারপাশে ঘুরছে। নাম, পাথফাইন্ডার লুনার অরবিটার (Pathfinder Lunar Orbiter) বা পিএলও।
গত ১ অক্টোবর চন্দ্রযান-টু এবং এই পিএলও-র মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। ইসরো তাদের নানা খবরাখবর নির্দিষ্ট সময় অন্তর সামনে আনে। ইসরো-ই জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে মাঝামাঝি তাদের বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে ১ অক্টোবর সংঘর্ষ হতে চলেছে। সেইমত, ১৯ সেপ্টেম্বরই তারা চন্দ্রযান-টু-এর অরবিটরের ম্যানুভার সেরে ফেলেন। যার ফলে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এটি খুব বড় একটা সাফল্য। এর ফলে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দুটো অরবিটরই ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেল। অর্থের অপচয় এড়ানো গেল। চাঁদ নিয়ে গবেষণাতেও ভাটা পড়ল না।
এটা তো একটা দিক। আর কয়েনের উল্টো পিঠটাই হল দায়বদ্ধতা। আগেও স্পেস ডেবরি (Space Debris) বা মহাকাশ বর্জ্যের বিপদ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। নানা দেশ মহাকাশযান ও স্যাটেলাইট পাঠায়। কিন্তু, মেয়াদ শেষ হলে সেগুলো আর ফিরিয়ে আনা হয় না। মহাকাশে দিকভ্রষ্ট হয়ে এগুলো ঘুরতে থাকে। তাদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কা লাগে। ভেঙে যায়, টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ফলে, ভবিষ্যতে নতুন কোনও মহাকাশযান বা স্যাটেলাইট পাঠানো সমস্ত দেশের কাছেই বিপদের হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, মহাকাশে একবার যদি এইসব ভাঙা যন্ত্রাংশের সঙ্গে ধাক্কা লাগে, তাহলে মিশনের বারোটা বেজে যাবে।
ইসরো আগেই জানিয়েছিল যে আগামীদিনে ভারতের সব মহাকাশ গবেষণা হবে স্পেস ডেবরি ফ্রি। মানে ভারত যা কিছু পাঠাবে, মেয়াদ শেষে সেগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়েও আনা হবে। এই যে চন্দ্রযান-টু-এর ম্যানুভার করে সংঘর্ষ এড়ানো গেল, এটা প্রমাণ করে যে ২০১৯ সালের পুরনো মিশন থেকে কোনও বিপদ হতে পারে কিনা, সেটা সমানে ট্র্যাক করে যাচ্ছিল ইসরো। এটাই মহাকাশ গবেষণায় ভারতের দায়বদ্ধতা। এই মুহূর্তে নাসার লুনার রেনেসেন্স অরবিটার (Lunar Reconnaissance Orbiter)-ও চাঁদের চারপাশে ঘুরছে। চন্দ্রযান-টু ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অরবিটরের মধ্যে সংঘর্ষ হলে, সেখান থেকে ভাঙা যন্ত্রাংশ ছিটকে গিয়ে নাসার অরবিটরের গায়েও লাগতে পারত।
ভাঙা যন্ত্রাংশগুলো আপন খেয়ালে চাঁদের চারপাশে ঘুরতে থাকলে, ভবিষ্যতে যে কোনও দেশের লুনার মিশনেই সমস্যা হত। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে, দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কেবল আমাদের মহাকাশযানকেই রক্ষা করেননি। তাঁরা সারা দুনিয়াকেই বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। সামনেই ইসরোর আরও একাধিক মিশন রয়েছে। তার মধ্যে গগনযানের কথা তো জানেনই। একইসঙ্গে, ইসরো শুক্র অভিযানেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা তাঁদের দায়বদ্ধতার কথা ভোলেননি।