মন্ত্রী-নেতাদের সামনেই চেয়ার ছোড়াছুড়ি, রণক্ষেত্র নেতাজি ইনডোর চত্বর
বিক্ষোভকারীদের মাঝে পড়েন মলয় ঘটক। কোনওমতে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হলেও প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পথ অবরোধ, অবস্থানে এসএলও কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিসকে।
কলকাতা: অসংগঠিত শ্রমিকদের সমাবেশ ঘিরে ধুন্ধুমার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম চত্বরে। মন্ত্রী মলয় ঘটককে ঘিরে বিক্ষোভ সেল্ফ এমপ্লয়েড লেবার অর্গানাইজার বা এসএলও কর্মীদের। ঘটনাস্থলে হেয়ার স্ট্রিট থানা ও লালবাজারের বিশাল বাহিনী। সোমবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ছিল এসএলও সংগঠনের মহা সমাবেশ। অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের কাজ নেই। আয়ের সব পথ বন্ধ। তাঁরা আশা করেছিলেন এই সমাবেশ থেকে তাঁদের জন্য সদর্থক কিছু ঘোষণা করা হবে।
সংগঠনের কর্মীদের দাবি, তাঁদের বেতন পরিকাঠামো থেকে সামাজিক সুরক্ষা, কোনও কিছুই ঠিকঠাক নয়। এদিনের সমাবেশ থেকে এ সংক্রান্ত কোনও স্পষ্ট বার্তা মিলবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে দেখা যায়, কিছুই কিছু না। সেই পুরনো আশ্বাস, প্রতিশ্রুতিই শুনিয়ে গেলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। প্রথমে নেতাজি ইনডোরের ভিতরে বিক্ষোভ দেখান। চেয়ার ছোড়াছুড়ি থেকে ফ্লেক্স, ব্যানার ছিঁড়ে হইচই, মুহূর্তে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্টেডিয়ামচত্বর।
এরপর একে একে ফিরহাদ হাকিম, সাধন পাণ্ডে, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা বেরিয়ে যাওয়া পরই স্টেডিয়ামের বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। হোর্ডিং, ফ্লেক্স, ব্যানার ভেঙে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। নেতাজী ইনডোরে বাইরের গেটে এদিনের অনুষ্ঠানের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটক এবং সাধন পাণ্ডের ছবির ফ্লেক্স দিয়ে গেট বানানো হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা সেই গেট ভেঙে ফ্লেক্স ছিঁড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের মাঝে পড়েন মলয় ঘটক। কোনওমতে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হলেও প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে পথ অবরোধ, অবস্থানে এসএলও কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিসকে।
গোটা রাজ্যে প্রায় ৬৫০০ জন শ্রমিক বন্ধু বা এসএলও কর্মী রয়েছেন। নির্মাণ কর্মী, রিকশা চালক-সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কাছ থেকে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা ফর্ম পূরণ করে সেগুলি অনলাইন পোর্টালে এন্ট্রি ও গ্রাহকদের কাগজ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন তাঁরা। অসংগঠিত শ্রমিকদের সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই এই শ্রমিক বন্ধুদের কাজ। তবে তাঁদের আয় একেবারেই সামান্য। ফর্ম প্রতি যে কমিশন পান তা মাত্র ২ টাকা। অভিযোগ, এপ্রিল মাস থেকে সরকার গ্রাহকদের যেহেতু যোজনার টাকা সরাসরি দিয়ে দিচ্ছে, তাঁদেরও কমিশন বন্ধ। কোনও আয় নেই, পরিবার নিয়ে পথে বসার জোগাড়।
এদিনের সমাবেশে কোনও স্থায়ী সুরাহা মিলবে বলেই আশা করেছিলেন কয়েক হাজার শ্রমিক বন্ধু। কিন্তু তেমনটা হয়নি বলেই দাবি। সমাবেশে রাজ্যের তাবড় মন্ত্রীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও অসংগঠিত শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই থেকে গেল বলে অভিযোগ করেন শ্রমিক বন্ধুরা। এরপরই সমাবেশ শেষ হতেই ধুন্ধুমার শুরু হয়ে যায় সভাকক্ষে। সমাবেশ স্থলে ঢোকার মুখে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ফিরহাদ হাকিম, সাধন পাণ্ডে, মলয় ঘটকদের ছবি দিয়ে যে গেট তৈরি হয়েছিল সেখানেই ভাঙচুর চলে। রাস্তায় বসে পড়েন প্রায় ৫০০ জন শ্রমিক বন্ধু। এর ফলে বাবুঘাট বা আকাশবাণী ভবনের পথ একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নাকানি চোবানি খায় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিস। হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি নিজে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা নিজেদের অবস্থানে অনড়। ঘটনাস্থলে আসে লালবাজারের বিশাল পুলিস বাহিনীও। অবস্থানকারীদের নির্দিষ্ট ব্যারিকেডে রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তারা। সন্ধে ৬টা নাগাদ পুলিসের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ তুলে নেন শ্রমিক বন্ধুরা।