Walking tour in Kolkata: হেঁটে দেখুন কলকাতা

Walking tour in Kolkata: কুমোরটুলি ঘাট। এখানেই নৌকো করে ঠাকুর তৈরির মাটি আসে। এই ঘাটেই অনেক বনেদি বাড়ির পুজোর দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয়। প্রায় সব সময়ই মন্ত্রোচারণের শব্দ ভেসে আসে এই ঘাট থেকে। কারণ সামনেই শ্মশান। শ্রাদ্ধ শান্তি, শেষকৃত্য এখানেই হয়।

Walking tour in Kolkata: হেঁটে দেখুন কলকাতা
হেঁটে দেখে মুগ্ধ হবেন কলকাতার এইসব জায়গা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 20, 2024 | 8:10 AM

প্রীতম দে

চলুন, একসঙ্গে হাঁটা শুরু করি। এখন আমরা আছি কুমোরটুলির গঙ্গার ঘাটে। কোথায় কোথায় যাওয়া যায় বলছি। কুমোরটুলি ঘাট থেকে মিনিট দুয়েকের মধ্যে পড়বে শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের চিকিৎসকের বাড়ি আর ডিসপেন্সারি। প্রায় ২০০ বছর আগেকার ইতিহাস।

সেখান থেকে মিনিট তিনেক হাঁটা পথে নেতাজির অজানা বাড়ি। সেখান থেকে এক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই বিখ্যাত ঠাকুর তৈরির স্টুডিও , যেখানে প্রথম থিমের দুর্গা তৈরি হয়েছিল। জি পালের স্টুডিও। জি পালের স্টুডিও থেকে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন ঢাকেশ্বরী কালী মন্দিরে। আরও আছে। একই রাস্তায় দু’বার না হেঁটে ওয়ান ওয়াকে পুরোটা সেরে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। পণ্ডশ্রম হয় না।সবার আগে কিছুক্ষণ কুমোরটুলি ঘাটে সময় কাটানো যাক। এখানেই নৌকো করে ঠাকুর তৈরীর মাটি আসে। এই ঘাটেই অনেক বনেদি বাড়ির পুজোর দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয়। প্রায় সব সময়ই মন্ত্রোচারণের শব্দ ভেসে আসে এই ঘাট থেকে। কারণ সামনেই শ্মশান। শ্রাদ্ধ শান্তি, শেষকৃত্য এখানেই হয়। ঘাটে দাঁড়িয়ে আশপাশে চায়ের দোকানে একটু চা খেয়ে রেললাইন পেরোই ,আসুন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই একটি দুটি ট্রেন আসা-যাওয়া করেছে। দেখেছেন। রেল ক্রসিং পেরিয়ে ডান দিকে দেখুন বড় বড় দুর্গা প্রতিমা রয়েছে। সিজনের অন্য সময় গেলে অন্য প্রতিমা পাবেন। এটা পশুপতি পালের স্টুডিও। এই গলিতে সোজা যেতে হবে ৩০ সেকেন্ড। তারপর আবার ডানদিক ঘুরলেই শ্রীরামকৃষ্ণের চিকিৎসক ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের ভিটেবাড়ি। এবং ডিসপেন্সারি। রামকৃষ্ণ পরমহংসের পদধূলি পড়েছিল এখানে। বাইরে থেকে দেখে সাধ না মিটলে ভেতরে গিয়ে দেখতে পারেন । ঝামেলার চান্স নেই। কারণ ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের পরিবারের সবাই খুব মিশুকে। ভেতরে ঢুকলে দেখতে পাবেন সেই ঐতিহাসিক কাঠের চৌকি, যার ওপরে বসে রোগী দেখতেন তৎকালীন অত্যন্ত বিখ্যাত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার।

কাশী মিত্র শ্মশান ঘাট

যে গলি দিয়ে ঢুকেছিলেন সে গলি দিয়েই বেরিয়ে আসুন। রেল ক্রসিংয়ের উল্টোদিকে হাঁটতে থাকুন। অর্থাৎ গলি দিয়ে বেরিয়ে ডানদিকে। আগে পড়বে নেতাজির অজানা বাড়ি। কুমোরটুলির বাজারের ঠিক পাশে। সর্বজনীন দুর্গাপুজোর ঠিক পিছন দিকটায় তাকিয়ে দেখুন। বিশাল বড় পুরনো ভগ্নপ্রায় একটি বাড়ি। বাড়ির স্থাপত্য শৈলী পুরনো কলকাতার বনেদি বাড়ির মত। কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোর সভাপতি ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস। শোনা যায় সেই সময়ে বেশ কিছুদিন এই বাড়িটিতে কাটিয়েছিলেন নেতাজি। আজ বাড়িটির সিংহ দুয়ার ঠেলে ভেতরে ঢুকলে ভুতুড়ে বাড়ি বলেই মনে হবে। নিচের তলায় একটি ব্যাংকও চলে এখন।এবার চলুন যাই জি পালের আশ্চর্য স্টুডিওতে। নেতাজির বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে অর্থাৎ গলির ভেতরে ঢুকেই ডানহাতে পড়বে এই হেরিটেজ স্টুডিও। ভেতরে ঢুকলেই দেখবেন এক অন্যজগৎ। বলে রাখি যে এই সেই জি পাল, যিনি এক রাতের মধ্যে আস্ত দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে দিয়েছিলেন। মাটির প্রতিমা করে এমন নাম করেছিলেন যে লন্ডনে পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। ভেতরে এখনও তাঁর হাতে তৈরি বহু মাটির প্রতিমা গোটা এবং অর্ধেক অবস্থায় রয়েছে বহু মনীষীর মূর্তি দেখতে পাবেন দেখতে পাবেন দুর্গা প্রতিমাও। এই জি পালই প্রথম একচালা ঠাকুরের কনসেপ্ট ভেঙে নতুন ধরনের প্রতিমা তৈরি শুরু করেন। এর ফলে বিতর্ক কম হয়নি।

জি পালের স্টুডিও

জি পালের স্টুডিও থেকে আবার কুমোরটুলি বাজার হয়ে গলি পেরিয়ে মেনরোড ক্রস করে ঢুকে যান প্রতিমা শিল্পীদের গলির ভেতরে। হেঁটে বড়জোর তিন মিনিট। চারমাথার মোড় থেকে বাঁ হাতে ঘুরলেই ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মায়ের মন্দির। মন্দিরের ভেতরে জ্বলজ্বল করছে ধাতু দিয়ে তৈরি দুর্গা প্রতিমা। দেশভাগের সময়কার ইতিহাস বয়ে বেড়াচ্ছেন এই দুর্গা। ঢাকেশ্বরী। ঢাকায় পুজো হত। বঙ্গভঙ্গের সময় ওদেশ থেকে এদেশে নিয়ে আসা হয় মাকে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরটির একেবারে পাশ থেকেই এক সে বড় কর এক প্রতিমা দেখতে পাবেন। প্রতিমা শিল্পীদের আখড়া। প্রতিভার আঁতুড় ঘর। একবার এর মধ্যে ঢুকে পড়লে হাঁটতেই থাকবেন আর চোখ ঘুরবে চারদিকে। শুধু আমি আপনি নন, বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা মানুষ পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখেন এই চত্বর।