প্রীতম দে: ভুয়ো টিকাকাণ্ডের জের এখনও কাটেনি। ধৃত দেবাঞ্জন দেব ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে দেবাঞ্জনের জালিয়াতির জাল। ভুয়ো টিকাকাণ্ডে (COVID Vaccination) কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই ফের টিকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। টিকাপ্রাপক হোটেল ব্যবসায়ী কৌশিক ঘোষ ও অভিজিৎ সাহা অভিযোগ করেন টিকা পাওয়ার আগেই কৌশিকবাবু শংসাপত্র পেয়েছেন। শংসাপত্র দিয়েছে খোদ কো-উইন! আর এখানেই উঠে এসেছে সংশয়।
কৌশিকবাবুর অভিযোগ, শুক্রবার ২ জুলাই তাঁর করোনা টিকা প্রথম ডোজ় নেওয়ার কথা ছিল। নিয়ম মেনে কো-উইন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনে সেরেছিলেন কৌশিক। সময় দেওয়া হয়েছিল দুপুর ১২টা থেকে ১ টার মধ্যে। শুক্রবার বাড়ি থেকে বেরনোর আগেই কৌশিকবাবুর কাছে কো-উইনের তরফে একটি বার্তা আসে। সেখানে বলা হয়, “করোনা টিকা কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় প্রাপ্তি সমাপ্ত। আপনাকে শুভেচ্ছা।” অথচ, কৌশিকবাবুর কাছে কো-উইনের তরফেই বার্তা এসে পৌঁছেছে যে ২ জুলাই শুক্রবার তাঁর টিকার প্রথম ডোজ় নেওয়ার (COVID Vaccination) কথা। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে কৌশিকবাবু দুটি ডোজ়ের কোনওটিই নেননি, সেখানে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে এমন বার্তা কো-উইনের তরফে আসে কী করে?
গোলমালের আশঙ্কা করেই সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কৌশিক ও অভিজিৎ। প্রথমে, হাসপাতালের তরফে জানানো হয় এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। পরে অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হবে। কে বা কারা এই কাজ করেছে তাদেরও খোঁজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কৌশিকবাবু। অভিযোগ করা হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনেও। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।
প্রশ্ন উঠছে খাস দক্ষিণ শহরতলীর ওই নামী হাসপাতালে যদি টিকা দুর্নীতি এইভাবে হয়ে থাকে তবে জেলার কী পরিস্থিতি হবে? শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিনের আকালে টিকাকরণ (COVID Vaccination) নিয়ে যে অনিশ্চয়তার ছবি ফুটে উঠেছিল তাতেই যেন সিলমোহর দিচ্ছে একের পর এক এই ভ্যাকসিন দুর্নীতির ঘটনা। দেবাঞ্জন-কাণ্ডে অজান্তেই ভুয়ো টিকা নিয়ে জাল সার্টিফিকেট পান তৃণমূলের অভিনেত্রী সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। কলকাতার বাইরে জেলাতেও এই বিশৃঙ্খলার ছবি বেশ স্পষ্ট। শিলিগুড়িতে এক ব্যক্তিকে দুবার টিকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপস্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, বীরভূমে মৃত বাবার নামে ভুয়ো শংসাপত্র পেয়েছেন এক টিকাপ্রাপকের পরিবার।
ভ্যাকসিন দুর্নীতি (COVID Vaccination) নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে চিঠি লিখে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবারই ভ্যাকসিন দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কড়া চিঠি লিখেছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩১৫ টাকা দিয়ে বণিক গোষ্ঠীগুলির টিকাপ্রাপ্তির ‘হিসেব নিকেশ’ চেয়েছেন শঙ্কর। এই পরিস্থিতিতে খাস কলকাতায় এ হেন টিকা দুর্নীতির ঘটনা যে নজিরবিহীন এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন: ‘৩১৫ টাকায় সরকার টিকা বিক্রি করছে’, সরাসরি কেন্দ্রকে চিঠি বিজেপি বিধায়কের