ED: ৫ হাজার কোটির দুর্নীতির ‘নায়ক’ নিজের বিয়েতে খরচ করেন ২০০ কোটি, কে এই সৌরভ?

ED: পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে। নাম জড়িয়েছে ১৪ জনেরও বেশি বলিউড তারকার নাম। আর এই সংস্থারই এক অন্যতম মালিক হলেন সৌরভ চন্দ্রাকার।

ED: ৫ হাজার কোটির দুর্নীতির ‘নায়ক’ নিজের বিয়েতে খরচ করেন ২০০ কোটি, কে এই সৌরভ?
মহাদেব বেটিং অ্যাপের মালিক সৌরভImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Sep 16, 2023 | 8:46 AM

কলকাতা: সৌরভ চন্দ্রাকার। এই নামটি দেশের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ‘মহাদেব বেটিং অ্যাপ’ নামে এক অনলাইন বেটিং চক্রের তদন্তে নেমেছিল ইডি। তাতে পেঁয়াজের খোসার মতো একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে। নাম জড়িয়েছে ১৪ জনেরও বেশি বলিউড তারকার নাম। আর এই সংস্থারই এক অন্যতম মালিক হলেন সৌরভ চন্দ্রাকার। যিনি নিজের বিয়েতেই খরচ করেছেন ২০০ কোটি টাকা।

কে সৌরভ চন্দ্রাকার?

বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। বাড়ির ছত্তীসগঢ়ের প্রত্যন্ত এলাকা ভিলাইতে। দীর্ঘদিন ধরেই থাকেন সৌদি আরবে। সেখানেই ব্যবসা জমিয়ে বসেছিলেন। ‘অনলাইনে বেটিং অ্যাপ’। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবে যিনি বিয়ে করেন, আর তাতে খরচ করে ২০০ কোটি টাকা! বিয়েতে নিমন্ত্রিত আত্মীয়রা প্রত্যেকে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত বিমানে। আমন্ত্রিত ছিলেন বলিউডের একাধিক তারকা। বিয়ের একটি ভিডিয়োর সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে বিয়েতে ‘পারফর্ম’ করেছেন আতিফ আসলাম, নেহা কক্কর, বিশাল দাদলানিরা। এই সৌরভ চন্দ্রাকারই দেশের ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্ক্যামে’র মূল চক্রী!

কীভাবে উত্থান সৌরভের?

ছত্তীসগঢ়ের প্রত্যন্ত এলাকার দৃশ্যত ছাপোষা এক যুবক কীর্তি কীভাবে প্রকাশ্যে এল? সম্প্রতি ইডি অনলাইন বেটিংয়ের নামে প্রতারণা করার অভিযোগে চার যুবককে গ্রেফতার করে। সেই শুরু। জেরায় উঠে আসে একাধিক ব্যক্তির নাম। তাঁদের কয়েকজনকে নিজেদের হেফাজতে নেন আধিকারিকরা। তাঁদের মুখ থেকেই উঠে আসে ‘মহাদেব বেটিং অ্যাপের’ নাম। ইডির র‌্যাডারে পড়েন এই চক্রের দুই পান্ডা সৌরভ চন্দ্রাকার ও রবি উপ্পাল। রবিও ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, প্রথমে ছোট কোনও বেসরকারি সংস্থাতে কাজ করতেন। পরে এই ‘অনলাইন বেটিং’ চক্রের ফাঁদ পাতেন। পরে তাঁরা চলে যান দুবাই। তাঁরা মূলত দুবাই থেকে নিজেদের ‘অপারেশন’ চালাতেন।

কীভাবে বিছিয়েছিলেন প্রতারণার জাল?

সৌদি আরবে ছিল ‘মহাদেব বেটিং অ্যাপ’ সংস্থার সদর অফিস। তারা গোটে দেশে একাধিক মেট্রো সিটিতে তাদের শাখা খুলেছিল। একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি দিত। সহকারির সঙ্গে ৭০-৩০ অনুপাতে ব্যবসার ডিল হত। এই ব্যবসার বেশিরভাগ টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে যেত। অনলাইন বেটিং অ্যাপগুলি সাধারণ যা করে থাকে, অর্থাৎ মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের টানত। প্রতারণার মাধ্যমে সেই টাকা জমা পড়ত একাধিক বেনামী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

কীভাবে ফাঁদ বিছিয়েছিল ‘মহাদেব’?

ইডি- আধিকারিকরা দাবি করছেন, এই বেটিং অ্যাপ, তার সংস্থার প্রচারের জন্য একটি বিশাল অঙ্কের টাকা বিজ্ঞাপনের পিছনে খরচ করত। তারকাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন, যাতে গ্রাহক আকৃষ্ট হন। ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার জন্য আরও লোক বিনিয়োগ করেন। বিজ্ঞাপন আর বিনোদনের বিষয়টি দেখার জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও অ্যাড এজেন্সিকেও ১১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।

কলকাতাতেও এই চক্রের ফাঁদ

সম্প্রতি ইডি আধিকারিকরা মুম্বই, ভোপাল, কলকাতায় একযোগে তল্লাশি চালায়। তাতে নগদ-সহ মোট ৪১৭ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করে আধিকারিকরা। ইডি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় এই ব্যবসা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বিকাশ ছাপাড়িয়া নামে এক ব্যক্তির ওপর।

সৌরভ ও রবির পাতানো প্রতারণার এই সাম্রাজ্যের জাল বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দাবি করছেন ইডি আধিকারিকরা। আপাতত তাঁরা ‘গায়েব’। তাঁদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। তবে এই তদন্তে ইডি-র র‌্যাডারে রয়েছেন বলিউডের ১৪ জন প্রথম সারির তারকা, গায়কের নামও।