TET 2022: রবিবার টেট পরীক্ষা দেবেন? জেনে নিন কোথায় কেমন বন্দোবস্ত…
TET 2022: রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে টেট পরীক্ষার জন্য সতর্ক নজর রাখছে স্থানীয় প্রশাসনগুলিও। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ, সর্বত্রই সজাগ দৃষ্টি রাখছে জেলা প্রশাসন।
কলকাতা: রাত পোহালেই রাজ্যে ২০২২ সালের টেট পরীক্ষা (TET 2022)। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে এবারের টেট পরীক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে মোট ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩২ পরীক্ষার্থী রয়েছেন এবারের টেটের জন্য। এবারের টেট পরীক্ষায় নজরদারির ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখছে না পর্ষদ। মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। থাকছে সিসিটিভি নজরদারিও। এর পাশাপাশি এবার টেটের পরীক্ষার্থীদের যাতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়তি লোকাল ট্রেন চালানো হবে। মেট্রো পরিষেবাও বাড়ানো হচ্ছে। রাজ্যের পরিবহন দফতর থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রবিবার সব সরকারি বাস রাস্তায় নামবে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে টেট পরীক্ষার জন্য সতর্ক নজর রাখছে স্থানীয় প্রশাসনগুলিও। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ, সর্বত্রই সজাগ দৃষ্টি রাখছে জেলা প্রশাসন।
বারাসত – উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত মহকুমার মধ্যে মোট ৩৪টি পরীক্ষাকেন্দ্র থাকছে। রাস্তায় পর্যাপ্ত গাড়ি থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি যদি কোনও পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে তাঁদের সাহায্য করার জন্য রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় কোনও সমস্যায় পড়লে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পরীক্ষা শুরুর আগে ক্যামেরায় মুখ দেখিয়ে ভিতরে ঢুকতে হবে পরীক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে ভিতরে ঢোকা যাবে। বাইরে থাকবে পুলিশের কড়া পাহারা। স্টেশন থেকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে এই সমস্ত জায়গায় ট্রাফিকের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে।
বসিরহাট – বসিরহাট মহমুকা এলাকায় ১১টি পরীক্ষাকেন্দ্র থাকছে। ১২ জন করে ইনভিজিলেটর থাকছেন রবিবারের টেটের জন্য। পরীক্ষার্থীদের যাতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্যও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বিশেষ করে বসিরহাট ও টাকি পুরসভা এলাকায় টোটো চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যাতে শহরের রাস্তায় কোনওরকম যানজট না হয়। তবে বিভিন্ন বাস ও ট্রেন রুটগুলির সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তায় বিশেষ টোটোর রুটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে যাঁরা পরীক্ষা দিতে আসছেন, অর্থাৎ সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে নদী পারাপারের জন্য বিশেষ ফেরির ব্যবস্থা থাকছে। মহকুমা শাসকের দফতরে দ্বিতীয় তলায় একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর – ০৩২১৭২৬৫২৯৭।
বারুইপুর – দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমা এলাকায় মোট ৩৫ টি সেন্টার রয়েছে। এখানে ১৫ হাজার ৬০০ জন পরীক্ষার্থী আগামিকাল টেট পরীক্ষায় বসবেন। পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য প্রতিটি সেন্টারেই পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা থাকবেন। পাশাপাশি সিসিটিভি এবং বায়োমেট্রিকের ব্যবস্থা থাকছে। পরীক্ষা চলাকালীন যাতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় না হয় সেজন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন পর্ষদ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ট্রেন, বাস এবং অটো রাস্তায় থাকবে বলে জানিয়েছেন বারুইপুরের মহকুমা শাসক সুমন পোদ্দার।
হাওড়া – হাওড়া জেলায় মোট ৩৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে হয় তার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষার জন্য পরিবহন দফতরের তরফে অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি রেলের তরফ থেকে হাওড়া ও সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকেও বিশেষ ট্রেন পরিষেবা রাখার কথা জানানো হয়েছে। জলপথে ফেরি পরিষেবাও সচল থাকবে।
মুর্শিদাবাদ – মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ১৪৭ টি। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার ৯০০। জেলা প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যদি কোনও পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থার উপরেও, যাতে কোথাও যানজটের সমস্যা না হয়। বাড়তি বাস নামানো হচ্ছে। যদি কেউ কোনও সমস্যায় পড়েন, সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঁকুড়া – বাঁকুড়া জেলায় মোট ৮৬টি টেট পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার ৮০০ জন। ইন্দাস, মেজিয়া, রাইপুর, বারিকুল এই চারটি থানা এলাকা বাদ দিলে বাকি সমস্ত থানা এলাকাতেই পরীক্ষা কেন্দ্র থাকছে। পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদমর্যাদার ২০০ জন পুলিশ আধিকারিক ও ৮০০ কনস্টেবল ও হোমগার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নিজস্ব কন্ট্রোল রুম ছাড়াও বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমা এলাকায় পৃথক তিনটি কন্ট্রোল রুম থাকছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে জেলার প্রতিটি রাস্তায় মোতায়েন থাকছে যথেষ্ট ট্রাফিক পুলিশ।
পশ্চিম মেদিনীপুর – রবিবারের টেটের জন্য প্রস্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনও। জেলায় মোট ৯৪ টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার ৪৫০। যাতে কোথাও কোন ধরনের গোলমাল না হয়, সেদিকে নজর রাখার জন্য থাকছে যথেষ্ট পুলিশি বন্দোবস্ত। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর মেদিনীপুর শহরের যেহেতু প্রায় বেশিরভাগ পরীক্ষা কেন্দ্রে রয়েছে, সেক্ষেত্রে শহরে অযাচিত কারণে কোনও গাড়ি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখছে পুলিশ। বিশেষ করে মেদিনীপুর শহরে রিং রোডের উপর যাতে কোথাও অযথা কোনও গাড়ি দাঁড়িয়ে না থাকে বা কোনও ভিড় না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখছে পুলিশ প্রশাসন। মেদিনীপুর শহর কোতোয়ালি থানার পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামিকাল যাতে রাস্তার উপরে কেউ ব্যবসা না করে বা অযথা ভিড় না বাড়ায়।
নদিয়া – নদিয়া জেলায় এবার টেট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজারেরও বেশি। সেখানে এবার মোট ৮৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে থাকছে মেটাল ডিটেক্টর,সিসি ক্যামেরা, বায়ো মেট্রিক ব্যবস্থা। কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না পরীক্ষাকেন্দ্রে। কারও কোনও শারীরিক সমস্যা হলে, তার জন্য মেডিক্যাল টিমও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় বেসরকারি বা সরকারি বাসে কিংবা ট্রেনে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান – পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ৫৬টি সেন্টার রয়েছে। জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার। পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, তার জন্য পুলিশ, আরটিও,বিদ্যুৎ দফতর ও দমকলের আধিকারিকরা মিলে একটি সমন্বয় বৈঠক করেছেন। যাতায়াতের জন্য আরটিও দায়িত্বে আছেন। তিনি প্রতিটি সেন্টারে যাতে সকাল ১১ টা অবধি সরকারি বাস চলে, তার ব্যবস্থা করা হবে। ট্রাফিকে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। অন্যদিকে রেলকে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে ওইদিন ট্রেন পরিষেবা ঠিকমতো চলে।
শিলিগুড়ি – শিলিগুড়িতে এবারের টেটের জন্য মোট ১৪টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার মহিলা পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীদের যাতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বাড়তি বাস ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জলপাইগুড়ি – জলপাইগুড়ি জেলায় টেট পরীক্ষা দেবেন ১৫ হাজার ৭১৯ জন। জেলায় মোট ৩৮ টি ভেন্যু রয়েছে। রবিবার টেট পরীক্ষার জন্য একদিকে যেমন ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজর দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি বাস বেশি করে চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পুরুলিয়া – পুরুলিয়ার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ৫১৫ জন। তাঁদের মধ্যে মহিলা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ২৯৪। জেলায় মোট পরীক্ষাকেন্দ্র করা হয়েছে ৮২টি। বাকি সব জেলাগুলির মতো পুরুলিয়াতেও পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ভ্যেনুতে পৌঁছাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার দিকে নজর রাখছে স্থানীয় প্রশাসন।