‘বেসরকারি সেক্টরেও ৫০ শতাংশের ওয়ার্ক ফ্রম হোম’, কোভিড মোকাবিলায় কোন কোন নির্দেশিকা মমতার

রাজ্যে প্রত্যাকদিন গড়ে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার ক্ষমতায় এসেই রাস হাতে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিলেন নতুন একাধিক নির্দেশিকা।

'বেসরকারি সেক্টরেও ৫০ শতাংশের ওয়ার্ক ফ্রম হোম', কোভিড মোকাবিলায় কোন কোন নির্দেশিকা মমতার
ফাইল ছবি। (পিটিআই)
Follow Us:
| Updated on: May 05, 2021 | 4:31 PM

কলকাতা: তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শপথ নিয়েই তিনি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই তাঁর প্রথম লক্ষ্য। আর শপথের কয়েক ঘন্টা পরই সাংবাদিক বৈঠকে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ দিন একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তিনি। মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা।

এক নজরে কী বললেন তিনি-

 কোভিড বেড বাড়ানো হচ্ছে:

মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন,  ‘বেড ইতিমধ্যেই বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ৮৭ হাজার বেড রয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে আরও তিন হাজার বেড বাড়ানো হবে। ৯০ হাজার বেড রাখা হচ্ছে।’ মমতা বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ২ লক্ষ ভ্যাকসিন দিচ্ছি। দ্বিতীয় ডোজকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

ভ্যাকসিন দিচ্ছে না কেন্দ্র, অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছে:

মুখ্যমন্ত্রী বলেন,  ‘আমরা যেখানে কয়েক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন চেয়েছি, সেখানে কয়েক লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অক্সিজেন নিয়ে অন্যান্য রাজ্য চলে যাচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিগুলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সেখান থেকেই আপাতত অক্সিজেন আনছি।’

পড়ে থাকা দেহ সৎকারে উদ্যোগ:

অনেক সময় করোনা আক্রান্তের দেহ পড়ে থাকছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘এর জন্য সরকার দায়ী নয়। আরটি পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট আসতে ৭২ ঘণ্টা লাগে। তাই অনেক সময় দেহ নিয়ে যাওয়া যায় না। আমরা ঠিক করেছি অ্যান্টিজেন টেস্ট করে নেব, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যায়। তারপর সৎকারের ব্যবস্থা করব। তিন দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।’

কোয়াক ডাক্তারদের গাইডলাইন:

জেলায় জেলায় কোয়াক ডক্তার আছে। কোয়াক ডাক্তারদের গাইডলাইন দেবে রাজ্য। গ্রামে কেউ আক্রান্ত হলে কী কী করা উচিৎ, তা বলে দেওয়া হবে। যাতে গ্রামে কেউ আক্রান্ত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা তারা শুরু করতে পারবে।

পরিবহণকর্মী, সাংবাদিক ও হকারদের আগে ভ্যাকসিন

ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কিছু কমিউনিটিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান,পরিবহণকর্মী, সাংবাদিক ও হকারদের আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, কারণ এরাই মানুষের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করেন। 

আগামিকাল থেকে সব লোকাল ট্রেন বন্ধ:

একসঙ্গে গাদাগাদি করে এত লোক আসার ফলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তাই আগামিকাল থেকে লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মেট্রো-সহ অন্যান্য পাবলিক সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাইরে থেকে এলে কোভিড টেস্টের রিপোর্ট বাধ্যতামূলক:

বাইরের রাজ্য বা দেশ থেকে বিমানে আসতে গেলে আরটি-পিসিআর টেস্ট করে সেই রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। কলকাতা, অন্ডাল ও বাগডোগরা বিমাবন্দরের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ৭ মে থেকে। অনেক ক্ষেত্রে ফেক রিপোর্ট নিয়ে আসছেন অনেকেই, সেটা ধরতে কড়া নজর রাখা হবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু বিমান নয়, দূর থেকে আসা ট্রেন যাত্রীদেরও রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ব্যাংকের উপস্থিতি:

সরকারি ও বেসরকারি সব সেক্টরে ৫০ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করবে।  বৌবাজারে গয়নার দোকানে সকালে কেউ আসে না, তার জন্য ওই দোকানগুলি দুপুর ১২ টা থেকে ৩টে খোলা থাকবে। হোম ডেলিভারি যেমন চালানো হচ্ছে সেটা হবে। ব্যাংকের কাজের সময় কমানো হচ্ছে। সকাল ১০ টা থেকে ২ টো পর্যন্ত খোলা থাকবে ব্যাংক। কারখানা, চা বাগানে প্রত্যেক শিফটে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করবে। দমকল, টেলিকম, বিদ্যুতের মত জরুরি পরিষেবা কোভিড বিধির বাইরে।

পুলিশ প্রশাসনে রদবদল:

বিধানসভা ভোট শেষ হতেই রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন পদে ফিরলেন অফিসাররা। পুলিশ প্রশাসনে বড়সড় রদবদলের ঘোষণা মমতার। একই সঙ্গে ফের রাজ্যের ডিজির দায়িত্বে এলেন বীরেন্দ্র। এডিজি, আইনশৃঙ্খলাতে ফিরলেন জাভেদ শামিম। নবান্নে বৈঠক শেষে এমনটাই ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।