কোথায় গেল শ্যামাপোকারা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বড়সড় বিপদ আসতে চলেছে’
Kali Puja: কালীপুজো এল, কালীপুজো গেল। দেখা নেই সেই শ্যামাপোকার। কোথায় গেল ওরা? কেউ কেউ একেবারে ফেসবুক পোস্ট করে খোঁজখবর শুরু করে দিলেন। অর্থাৎ, তারা যে আচমকা গায়েব হয়েছে তা নজরে পড়েছে অনেকেরই।
উৎসব-আলো আর তারা নেই এ আবার হয় নাকি! প্যান্ডেলের জমাটি ভিড় হোক বা অদূরে জ্বলতে থাকে রকমারি আলো, সর্বত্রই ছিল তাদের অবাধ বিচরণ। খাবারের দোকান হোক বা বাড়ির ভিতরে টিউবলাইট বা আলোর আশেপাশে, সর্বত্র ভনভন করে ঘুরতে দেখা যেত। কালীপুজোর আগাম খবর নিয়ে দলে দলে এসে ভিড় করতো ওরা। আর কালীপুজোয় আলোর দাপাদাপি বাড়লে তাদের আর ধরে রাখতো কে! তখন যেন একেবারে উৎসবের মেজাজ! কিন্তু, বিগত কয়েক বছর ধরে আচমকা চেনা ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। চলতি বছরেও একই ছবি।
কালীপুজো এল, কালীপুজো গেল। দেখা নেই সেই শ্যামাপোকার। কোথায় গেল ওরা? কেউ কেউ একেবারে ফেসবুক পোস্ট করে খোঁজখবর শুরু করে দিলেন। অর্থাৎ, তারা যে আচমকা গায়েব হয়েছে তা নজরে পড়েছে অনেকেরই। ধীরে ধীরে এই ধরনের একাধিক পতঙ্গ উধাও হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ থেকে। কিন্তু নেপথ্যে কী কারণ? উষ্ণায়ণ নাকি বলগাহীন দূষণ? আচমকা শ্যামাপোকাদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ থেকে পতঙ্গবিদ প্রত্যেকের কথায়, এটা ভালো দিক নয়। বড়সড় বিপদের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। যেভাবে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিকে নষ্ট করার প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠেছে, তাতেই এই ধরনের পতঙ্গরা বিদায় নিচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কেন সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পতঙ্গবিদ থেকে পরিবেশবিদরা?
পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, “ওদের সংখ্যা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। যেটা সত্যিই ভয়ের। এটা আসলে পরিবেশ পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত। এবার কলকাতা শহরে ওদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম। তবে শহরের থেকে গ্রামে ওদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ, কৃষিজমিতেই ওরা বেশি মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু, এখন কৃষি জমিতে দেদার কীটনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফল ভুগছে শ্যামাপোকা।” খানিক একই সুর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ঘোষের গলাতেও। তিনি অবশ্য এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই কাঠগড়ায় তুলছেন।
যেভাবে দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, ঋতুচক্রে তার ছাপ পড়ছে, তারই সামগ্রিক বদল দেখা যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্র থেকে সমগ্র পরিবেশের উপরেও। সে কারণেই বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি দ্রুত বিলুপ্তির পথে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। ছাড় পাচ্ছে না কীটপতঙ্গরাও। তুহিনবাবু বলছেন, “শ্যামাপোকা তো হু হু করে কমছে। আগে যে পরিমাণে ওদের দেখা মিলত তা একেবারেই কমে গিয়েছে। ক্রমশ আরও কমছে। এর সঙ্গে তাপমাত্র পরিবর্তন কিন্তু সরাসরি দায়ী। কলকাতায় হু হু করে তাপমাত্র বাড়ছে। বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনও এর পিছনে একটা বড় কারণ হিসাবে উঠে আসতে পারে।”
তুহিনবাবুর জোরালো দাবি, সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে খেলা দেখাচ্ছে দূষণ। যেভাবেভাবে দূষণের মাত্রা রেকর্ড ভাঙছে তাতে এই ধরনের পোকাদের বিলুপ্তির পথ আরও মসৃণ হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমরা যেহেতু একটা নির্দিষ্ট সময়ে শ্যামাপোকাদের দেখা পাই তাই ওদের নিয়ে চিন্তা করতে অনেককেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শুধু শ্যামাপোকা নয়। আরও অনেক পোকাই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ অবশ্যই দূষণ। এটা অবশ্যই চিন্তার। এগুলো প্রকৃতিরই সম্পদ। তাতেই প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে।”
কোথায় গেল ওরা?
পরিবেশবিদরা একযোগে বলছেন, চিন্তা এখন না করলে হয়তো পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কারণ এই সমস্ত কীট-পতঙ্গেরই বাস্তুতন্ত্রে একটা বড় অবদান রয়েছে। তাই তাঁদের হারিয়ে যাওয়ার ফলে আরও নানা ধরনের বিপদ আসতে পারে। আর বাস্তুতন্ত্র ঘেঁটে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রের উপরেও।
পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস আরও সহজ বোঝালেন বিষয়টা। তাঁর কথায়, “আমরা আগে জানতাম বর্ষাকালে বাতাস আর্দ্র হয়। কিন্তু আমরা মে মাসে দেখলাম ৫০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তখন আর্দ্রতা বেশি ছিল। কিন্তু বর্ষায় আবার বৃষ্টির ঘাটতি। তাপমাত্রা উর্ধ্বমুখী। কিন্তু আর্দ্রতা কম। এদিকে আর্দ্র পরিবেশে সাধারণত এই ধরনের পোকা-মাকড় বেশি জন্মায়। ফলে তারা সহজেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে।” তবে এত নেগেটিভিটির মধ্যে খানিকটা হলেও পজেটিভিটি দেখতে পাচ্ছেন তিনি। বলছেন, “আজকাল কিন্তু শহরের লোকজনের মধ্যে লতা জাতীয় গাছ লাগানোর একটা প্রবণতা বেড়েছে। আর এই ধরনের পোকারা এই গাছে আশ্রয় করে থাকতে খুবই পছন্দ করে। তাই অবস্থার কিছুটা বদল আগামীতে হলেও হতে পারে। আমরা আবার হয়তো দেখলেও দেখতে পারি সেই চেনা ছবিটা।”