West Bengal Weather: তাপপ্রবাহ চললেও এপ্রিলের হিসেব বলছে স্বাভাবিকের নীচেই ছিল ‘কলিকাতার’ তাপমাত্রা
West Bengal Weather Update: আলিপুর আবহাওয়া অফিস বলেছে, এপ্রিলে আলিপুরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা হয় ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কমলেশ চৌধুরী
কলকাতার রাজপথে উট! অলিগলিতে উট! রেলস্টেশন থেকে বাজার, কোথায় নেই উট? গরমে কাহিল মহানগর ছেয়ে গিয়েছিল এমনই সব হাজারো মিমে। কিন্তু দহন সত্যিই কি লাগামছাড়া হল? হল না! বলছে তাপমাত্রার অঙ্কই। ভরদুপুরে যখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট, তখনই রেকর্ড হয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর কলকাতায় এপ্রিলের সেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় থাকল স্বাভাবিকের নীচেই।
স্বাভাবিকের নিচে? অবাক হলেও সত্যি!
আলিপুর আবহাওয়া অফিস বলেছে, এপ্রিলে আলিপুরের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা হয় ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই বার তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাত্, একটু হলেও কম। কিন্তু যে বছর গরমের বাড়াবাড়ি নিয়ে এত হাহুতাশ, সে বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের নিচে থাকা অবশ্যই তাত্পর্যপূর্ণ।
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, এপ্রিলের শুরুতে তাপমাত্রার বাড়াবাড়ি তেমন ছিল না। গরম বাড়তে শুরু করে পয়লা বৈশাখ থেকে। তবে গরমে হাপিত্যেস করলেও ২৪ এবং ২৫ এপ্রিল, মাত্র এই দু’দিনই পারদ ছিল ৩৯ ডিগ্রির উপরে। গোটা মাসের হিসেব বলছে, ১৭ দিন আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের নিচে। আর ১০ দিন ছিল স্বাভাবিকের উপরে। তারই ছাপ পড়েছে মাসিক অঙ্কে।
চলতি বছর দেশে মার্চ ছিল ১২২ বছরের মধ্যে উষ্ণতম। তাকে জোর টেক্কা দিয়েছে এপ্রিলও। উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতে এই বারের এপ্রিলই ছিল উষ্ণতম। তবে দেশের নিরিখে চতুর্থ উষ্ণতম। এই ধরনের রেকর্ডের ধারে-কাছে নেই কলকাতার এপ্রিল। বরং, হাল আমলের এপ্রিলেই এর চেয়ে বেশি গরমে পুড়েছে মহানগর।
২০০৯ ও ২০১৬ সালে ৮ দিন করে আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চল্লিশ পেরিয়েছিল। ২০১০, ২০১৪ সালেও চল্লিশ পেরোনো গরম সয়েছে কলকাতা। একাধিকবার ৪১ ডিগ্রির উপরেও উঠেছে পারদ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় আরও অন্তত ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি, এমনও হয়েছে। গরমের সেই দৈত্যের সামনে নেহাতই শিশু বাইশ। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহ থাবা বসালেও, কলকাতা সেই তাপ-বলয়ে আসেনি। একদিনও চল্লিশ পেরোয়নি পারদ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাহলে আমজনতার এত গরম লাগল কেন?
একমাত্র কারণ, ভ্যাপসা আবহাওয়া। তাপপ্রবাহের হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল যে জলীয় বাষ্প, সে-ই ঘামিয়ে নাকাল করেছে এই সময়ে। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “যখন দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহ চলছে, তখন ছাড় পেয়েছে শুধু কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা আর পূর্ব মেদিনীপুর। আসলে বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে জলীয় বাষ্প ঢুকছিল উপকূল, বড়জোর কলকাতা পর্যন্ত। কিন্তু বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের অবস্থান পুরোপুরি অনুকূল না হওয়ায়, সেই জোলো বাতাস ছোটনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত পৌঁছচ্ছিল না। তাই দেখা মিলছিল না বৃষ্টি, কালবৈশাখীরও। জলীয় বাষ্প ছিল, কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছিল না, তাতেই অস্বস্তি চরমে পৌঁছয়। ফলে তাপে কিছুটা ছাড়, কিন্তু ভ্যাপসা গরমের মার।
এখন যেমন বৃষ্টি হতেই গরম কমেছে। মে-র প্রথম সপ্তাহের মধ্যে গরম বাড়ার আশঙ্কাও কম। ৫ মে পর্যন্ত স্থানীয় ঝড়-বৃষ্টি চলবে। তার পরও বৃষ্টি হবে কি না, তা ঠিক করবে আন্দামান সাগরের সম্ভাব্য নিম্নচাপ। সব নজর তাই সাগরেই।
আরও পড়ুন: Meeting at Nabanna: নবান্নে বসছে জরুরি বৈঠক, কোন কোন বিষয় থাকবে নজরে?