Business Opportunities in Bengal: তৃণমূলের আন্দোলনে ফিরেছিল টাটা, কিন্তু শিল্প ফিরল কি সেই তৃণমূলের সরকারে?

গোড়ার দিকে একাধিক মঞ্চে শিল্প জগতের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের জমি নীতি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সংশয় দূর করতে আশ্বাস দেন রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত জমি আছে।

Business Opportunities in Bengal: তৃণমূলের আন্দোলনে ফিরেছিল টাটা, কিন্তু শিল্প ফিরল কি সেই তৃণমূলের সরকারে?
১১ বছরে রাজ্যে শিল্পের ছবিতে আদৌ কি বদল হল। নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 06, 2022 | 5:46 PM

কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের ফিরে যেতে হয়েছিল। ২০১৬ সালে সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফেরানোর মঞ্চ থেকেই টাটাদের নাম করে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তারা মনে করলে রাজ্যের অন্য কোথাও বড় কারখানা গড়তেই পারেন। রাজ্যের শিল্প বান্ধব ভাবমূর্তি গড়তে দেশ বিদেশের উদ্যোগপতিদের আমন্ত্রণ করে বাংলায় শিল্প সম্মেলনের ধারাবাহিক আসর বসিয়েছেন সেই মমতা। বৃহৎ পুঁজির সন্ধানে সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানির মত দেশেও সফর করেছেন রাজ্যের শীর্ষ আমলা এবং উদ্যোগপতিদের সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু প্রত্যেক শিল্প সম্মেলনের শেষেই একই প্রশ্নে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, আসছে কি লগ্নি? তথ্য কিন্তু আলাদা ইঙ্গিত দিচ্ছে। গ্লোবাল বিজনেস সামিটে প্রস্তাবিত লগ্নি ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৭৮ কোটি। লগ্নি হয়েছে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি। প্রস্তাবিত লগ্নির ৩৬ % এসেছে।

গোড়ার দিকে একাধিক মঞ্চে শিল্প জগতের প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের জমি নীতি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সংশয় দূর করতে আশ্বাস দেন রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত জমি আছে। তবে সরকারের কাছে এক লপ্তে কয়েক শো একর জমি চেয়েও পাননি এমন অভিযোগ করেননি কোনও উদ্যোগপতি। বিরোধীদের অবশ্য দাবি, জমিজটে জড়াতে চান না কোনও শিল্পপতিই। বিরোধীদের যুক্তি, গোড়ায় গলদ থাকায় একলপ্তে কয়েকশ একর জমির প্রস্তাব পেশ করার ঝুঁকিই নিতে চান না কোনও বিনিয়োগকারী। ব্যবসার সুবিধার পরিবেশের মাপকাঠিতে ব্যবসার সুবিধার পরিবেশের মাপকাঠিতে রাজ্যের স্থান কিছুটা পিছনের সারিতেই। অন্ধ্র প্রদেশ, গুজরাত বা ঝাড়খণ্ড-এর ধারেকাছেও নেই এ রাজ্য। বরং ব্যবসার পরিবেশের র‍্যাঙ্কিং-এ লড়াই উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এবার এগিয়ে যাচ্ছে।

কোথায় এগিয়ে? ব্যবসার সুবিধার পরিবেশের নিরিখে ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ ৯য়ে ছিল। উত্তর প্রদেশ ২য়ে। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল ১০য়ে, উত্তর প্রদেশ ছিল ১২ স্থানে। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ ১৫ নম্বরে ছিল, উত্তর দেশ ছিল ১৪তে। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ ১১ স্থানে ছিল, উত্তর প্রদেশ ছিল ১০য়ে। সরকারে এসে অমিত মিত্র কে শুধুই অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন মমতা। কিন্তু পরে বণিক সভা ফিকির প্রাক্তন কর্তা অমিত মিত্রের হাতেই শিল্প দফতরের ভার দিয়ে মমতা শিল্প জগৎকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। এমনকি ষষ্ঠ বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চেও মমতা মূল সঞ্চালকের দায়িত্ব দেন অমিত মিত্রকেই। যিনি এখন আর মমতার মন্ত্রিসভার কেউ নন।

২০১৯ সালের বাণিজ্য সম্মেলনে মুকেশ অম্বানিকে হাজির করিয়ে শিল্প মঞ্চের গরিমা বাড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে বেড়েছিল রাজ্যবাসীর প্রত্যাশাও। ২০২২ সালের বাণিজ্য সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির উপস্থিতি নতুন উদ্দীপনা জাগিয়েছে। বাংলায় আগামী এক দশকে দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন এই ধনকুবের। তবে মমতার সরকার তাকিয়ে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের দিকে।

শিল্প গড়ার তাগিদ থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী কোনও ক্ষেত্রেই তাড়াহুড়ো করতে চান না। দেউচা পাচামিতে সরকারের ধীরে চলো নীতি থেকেই তা স্পষ্ট। মমতার আশা এখানে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে রাজ্যের অর্থনীতি তে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। আদিবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে পুনর্বাসনের কাজে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আমলে শিল্পায়নের প্রসঙ্গ উঠলেই ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোগের সাফল্য তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

ক্ষুদ্র সাফল্য

দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ক্ষুদ্র শিল্পে এ রাজ্য ৩৭ লক্ষ ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প আছে রাজ্যে ৮৬ লক্ষ লোক কর্মরত ক্ষুদ্র শিল্পে

শতাব্দীর শুরু, ২০০০ থেকে ২০০৫। ব্র্যান্ড বুদ্ধকে শিল্পবান্ধব দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, শিল্পপতি আজিম প্রেমজি, পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তাকে সরিয়ে মমতা সরকারের শুরু হয়েছিল একটু নেতিবাচক ভাবেই। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের পর মমতার ইমেজ কিছুটা যেন শিল্প বিরোধী। আদানি থেকে অম্বানি, দেউচাপাচামি থেকে তাজপুর। চেষ্টা চলছেই ভাবমূর্তি বদলের, শিল্পে গতি আনার। এগারো বছর পার। রাজ্যের মুখ বদলাচ্ছে। বন্ধের সংস্কৃতি আর প্রায় নেই। কিন্তু শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন কিছুটা হলেও থেকে যাচ্ছে।