Yellow Taxi: কেন ‘মিটার ডাউন’? এবার কোথায় যাবে বাতিল হলুদ ট্যাক্সি? কী হবে চালকদের?
Yellow Taxi: সময়টা ছিল ১৯৫৮। অ্যাম্বাসাডর তৈরি করে সাড়া ফেলে দেয় হিন্দুস্তান মোটরস। যাতে অনায়াসে চারজন যাত্রী বসতে পারেন। বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই চারচাকার গাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬২-তে কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন অ্যাম্বাসাডরকে ট্যাক্সিতে পরিণত করে। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল।
সায়ন্ত ভট্টাচার্যের রিপোর্ট
বাঙালির ঐতিহ্য, বাঙালির গর্ব, বাঙালির অস্তিত্ব। সাহিত্য, সিনেমা-গল্প সবেতে যার অবাধ বিচরণ। তবু ধুঁকছে হলুদ ট্যাক্সি। জৌলুস হারিয়ে, কঙ্কালসার হয়ে এখন বিলুপ্তির পথে। দোতলা বাস, ট্রামের পর এবার হলুদ ট্যাক্সি। বাঁচানোর চেষ্টা অবশ্য একটা আছে, কিন্তু তুলনায় তা ম্রিয়মাণ। তাই হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতার পরিচিতি। কারণটা কী? কেন ট্যাাক্সির এই অবস্থা, কেন শেষের শুরু বলা হচ্ছে? কী ভাবছে প্রশাসন? সিনেমার মতো বাস্তবেও কি কলকাতায় ট্যাক্সির ভবিষ্যতের মিটার ডাউন?
একদিকে ট্যাক্সি চালকদের ক্রমাগত রিফিউজাল! মুখের উপর না বলে দেওয়া,অপরিচ্ছন্ন গাড়ি,তার ফলে অ্যাপ ক্যাবের উপর ভরসা বেড়ে যাওয়া, অ্যাম্বাসাডরই আর তৈরি না হওয়া, এর সঙ্গে ১৫ বছরের পুরনো ট্যাক্সি বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, এসবের ফলে কলকাতার আইকন হলুদ ট্যাক্সি কার্যত হারিয়ে যাওয়ার পথে! তবে এখন ট্যাক্সির যে কাঠামো, তার থেকে বেশ খানিকটা আলাদা ছিল এক শতাব্দী আগে কলকাতার রাস্তায় চলা ট্যাক্সি।
কী বলছে ইতিহাস?
১৯০৯ সালে কলকাতায় প্রথম আসে এই যান। তখন চৌরঙ্গি থেকে মিটারওয়ালা গাড়ি পৌঁছে যেত দমদম, ব্যারাকপুর, বজবজ। টকটকে লাল রঙের গাড়িগুলোয় মাত্র দুজন যাত্রী বসতে পারতেন। পরবর্তীতে আধুনিক এবং আরামদায়ক, বড়সড় ট্যাক্সি আসতে আসতে অবশ্য স্বাধীনতা পেরিয়ে যায়।
সময়টা ছিল ১৯৫৮। অ্যাম্বাসাডর তৈরি করে সাড়া ফেলে দেয় হিন্দুস্তান মোটরস। যাতে অনায়াসে চারজন যাত্রী বসতে পারেন। বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই চারচাকার গাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬২-তে কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন অ্যাম্বাসাডরকে ট্যাক্সিতে পরিণত করে। বাস, ট্রাম থাকলেও, ষাট, সত্তরের দশকে রাস্তার রাজা হয়ে উঠেছিল হিন্দুস্তান মোটরসের এই ট্যাক্সি। মফস্বল থেকে মহানগরে দোতলা বাসের মতো ট্যাক্সি চড়াও ছিল অনেকের শখ। তবে ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুস্তান মোটরসের অ্যাম্বাসাডর উৎপাদন।
ইতিহাস বলছে, ইউরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে হলুদ ক্যাবের আনাগোনা শুরু হয়। প্যারিস ও লন্ডনে সেই সময় শুধু হলুদ ক্যাবের দাপট। দশকের পর দশক ভরসা দিয়ে গেলেও, গত বছরের অক্টোবরে বন্ধ হয়ে যায়, মুম্বইয়ের বিখ্যাত চার চাকার যান, কালি-পিলি অর্থাত্ কালো-হলুদ ট্যাক্সি। এবার কলকাতার আইকনিক হলুদ ট্যাক্সিও কি সেই পথে? সেখানেও এবার মিটার ডাউন? প্রশ্নেই বাড়ছে উদ্বেগ।
প্রশ্নে প্রশাসনের ভূমিকা
কলকাতার পরিচিতি যেমন রসগোল্লা, ট্রাম বা ফুটবলে, ঠিক ততটাই হলুদ ট্যাক্সিতেও। সোজা কথায়, হলুদ ট্যাক্সি কলকাতার ঐতিহ্য, এ শহরের পরিচিতি। অথচ সেই যান মহানগর থেকে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে! এই হলুদ ট্যাক্সিকে যাতে বাঁচানো যায়, তার জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে হল নানা আলোচনা। কয়েকদিন আগে প্রেস ক্লাবে বসেছিল আলোচনা সভা। ছিলেন সব খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা। নাম ছিল, ‘হারানো সুরে হলুদ ট্যাক্সি’। সেখানে হলুদ ট্যাক্সি কেন এত নস্টালজিক, সেকথা বারবার বললেন বক্তারা। কেউ কেউ আবার মনে করেন, রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং অদূরদর্শিতার জন্য হলুদ ট্যাক্সি অতীত হওয়ার পথে। কারও মতে রিফিউজালও সমান দায়ী। তারপরেও কোন পথে ট্যাক্সিকে তার ট্র্যাকে ফেরানো যায় সে কথাও বললেন বক্তারা। তবে রিফিউজাল রোগ সারাতে না পারলে যে ভারী মুশকিল তা মনে করালেন প্রায় সকলেই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কথাও বারবার উঠে এল।
রোগ যখন রিফিউজাল
কলকাতার সকাল মানে যেমন বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দেওয়ার ব্যস্ততা, ধোঁয়া ওঠা চা, তেমনই ট্যাক্সি। কালের নিয়ম তো বলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনোকে সরিয়ে দিতে হয়। জায়গা দিতে হয় নতুনকে। কিন্তু, পুরনো কেউ যদি নিজের দোষেই সরে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে ফেলে! হলুদ ট্যাক্সির এই ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার পিছনে তো বারবার উঠে এসেছে কারণে-অকারণে যাত্রী প্রত্যাখ্যান মানে রিফিউজালের কথা। মুখের উপর না বলে দেওয়াটা কোনও ব্যাপারই নয়।
আপনি ধরুন যাদবপুর থেকে গড়িয়াহাট যাবেন। তখন ট্যাক্সি ড্রাইভার বলে দিলেন, এত অল্প রাস্তা গেলে তাঁর নাকি পোষাবে না। তারপর দেখলেন, অন্য এক যাত্রী ওই চালককে বললেন যাদবপুর থেকে ব্যারাকপুর যাবেন। তখন সেই ট্যাক্সিচালকই আবার জবাব দিলেন, এত দূর কী করে হয়! অবাধ্য চালকদের পথে আনতে কয়েক বছর আগে ট্যাক্সিতে নো রিফিউজাল লেখাও হয় ঘটা করে। তারপর, নো রিফিউজালে সব থেকে বেশি রিফিউজের অভিযোগ ওঠে। আর ট্যাক্সিচালকদের থেকে বারবার না শুনতে শুনতে তিতিবিরক্ত যাত্রীদের একটা অংশ রিফিউজ করে ফেলছেন হলুদ ট্যাক্সিকেই!
‘ভুল’ দেখছেন না চালকেরা
চলচ্চিত্র পরিচালক দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত তো বলেই দিলেন, আমি সাংসারে এত না শুনিনি যত না আমি হলুদ ট্যাক্সিওয়ালাদের থেকে শুনেছি। নো রিফিউজাল লিখে রেখে ওরা স্পর্ধার সঙ্গে বলতে পারে আমরা যাব না। একই সুর আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বলছেন, হলুদ ট্যাক্সি চালকদের ব্যবহার এত খারাপ হয়েছিল বলে আগের রাজনৈতিক জমানায় তাঁদের নিয়ে আলাদা সেশন হয়েছে, ক্লাস হয়েছে। বোঝানো হয়েছে যাতে তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করেন।
যদিও ট্যাক্সি চালকদের অনেকেই আবার রিফিউজালে ‘ভুল’ কিছু দেখছেন না। এক ট্য়াক্সি চালক বললেন, যাত্রীসাথী অ্যাপে যে ভাড়া দেখাচ্ছে ওতে তো আমাদের তেল কেনার টাকাও ওঠে না। আর এক চালক বললেন, অ্যাপ এসেও কোনও ভাড়া বাড়েনি। পাশ থেকে আর একজন বললেন, আপনি যদি দুটো টাকা লাভ না করে বাড়ি যান তাহলে আপনার পরিবারের লোক খাবে কী? আমাদের তো সেটা ভাবতে হবে।
চালকদের অভিযোগও কম নেই
জনপ্রিয় অভিনেতা ও গায়ক দিলজিত দোসাঞ্জ সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন। চার্টার্ড ফ্লাইটে শহরে এসে, দিলজিত্ মহানগর ঘুরেছিলেন হলুদ ট্যাক্সিতেই। কিন্তু, সেই ট্যাক্সি থেকে কেন আস্তে আস্তে মুখ ফেরাল আমবাঙালি। অনেকেই বলছেন, ট্যাক্সির ভাড়া থেকে প্রত্যাখ্যান নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা। তার ফলে অস্তিত্ব হারানোর পথে হলুদ ট্যাক্সি। তবে চালকদের অভিযোগও কম নেই। ২০১৮ সালের পর ভাড়া বাড়েনি। পুলিশের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের জরিমানা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নতুন ট্যাক্সি কেনা ও পারমিটের ক্ষেত্রেও রয়েছে জট।
প্রচারের আড়ালে ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ
কলকাতায় ধুঁকছে হলুদ ট্যাক্সি। অথচ, লন্ডনে ব্ল্যাক ক্যাব অর্থাত্ কালো ট্যাক্সিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেখানে সংস্কৃতি বাঁচিয়ে পরিবহণের চাকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। অনেকেই বলছেন, যাত্রী সাথী অ্যাপ আনার পর ট্যাক্সি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হয়রানি কমলেও, সেই অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রচারের অভাব পদে পদে। এখানেও তো সেই প্রশ্ন সদিচ্ছার। এখন তো স্মার্টফোন থাকলেই অ্যাপের মাধ্যমে নিমেষে ট্যাক্সি বুক হয়ে যায়। আবার সেই বেসরকারি অ্যাপ নির্ভর ক্যাব নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু, তারপরও অ্যাপ ক্যাবের গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুলো কারণে। কিন্তু রাত-বিরেতে যদি কোনও প্রয়োজন হয় তখন হলুদ ট্যাক্সিচালককে বারবার আবেদন করা হলেও সে তো যেতেই চান না। আর এসবের ফলশ্রুতি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে ট্যাক্সি। করোনার পর পরিস্থিতি তো আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে।
ধীরে ধীরে ‘উধাও’ ট্যাক্সি!
সূত্রের খবর, করোনার আগে কলকাতায় রাস্তায় চলত ১৬,৫০০ ট্যাক্সি। এখন মহানগরের রাস্তায় ট্যাক্সির সংখ্যা কমে ৭-৮ হাজার। কলকাতায় সকালের রাস্তায় প্রায় ২,৫০০ বৈধ ট্যাক্সি চলে। রাতে প্রায় ৩০০০ ট্যাক্সি চলে, ৯০ শতাংশের বৈধ নথি নেই। চালকের অভাব ও অন্যান্য কারণে বসে ৬,৫০০ ট্যাক্সি। সেই ২০১৪ সাল থেকে হিন্দুস্তান মোটর্সের অ্যাম্বাসাডর গাড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ। এবার ধরুন যে ট্যাক্সির মেরামতির প্রয়োজন হল, তখন আবার গাড়ির আসল যন্ত্রাংশ অনেক সময় মিলছে না। হাজারও সমস্যা। তার উপর ধরুন, মান্ধাতার আমলের মিটার।
এসবের মধ্যে ২০০৮-০৯ থেকে যে সব ট্যাক্সি পথে নেমেছিল, তাদের মেয়াদও ফুরোনোর মুখে। মাঝখানে অতিমারি-পর্বে দু’বছরেরও বেশি হলুদ ট্যাক্সি কার্যত বসে ছিল। চালকদের একাংশ বলছেন, তখন গাড়ির ইঞ্জিনের সেভাবে ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু, গাড়ি না নামায় রোজগারও তো বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ব্যাঙ্কে ঋণের কিস্তি মেটাতে হয়েছে। অতিমারি কেটে যাওয়ার পরে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও জ্বালানির দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চালকদের অভিযোগ, ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙায় জরিমানা বেড়েছে অনেকটাই। পুলিশের জুলুম জলে। এর পাশাপাশি কমেছে যাত্রী। সব মিলিয়ে সঙ্কটের মুখোমুখি। এর ফলে একের পর এক ট্যাক্সি বসে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দুষছে একাধিক সংগঠন।
ইচ্ছা থাকলেও উপায় হবে?
তবে ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, কিংবা অন্যভাবে ভাবলে যে পরিস্থিতির সঙ্গে লড়া যায় তার উদাহরণ তো কলকাতায় কম নেই। ২০০৯ সালে শেফালি রায় কলকাতার প্রথম মহিলা হলুদ ট্যাক্সি চালক হন। উদাহরণ আরও আছে। ধনঞ্জয় ওরফে বাপি চক্রবর্তীর এই ট্যাক্সির মাথায় সবুজের সমারোহ। প্রথমে তাঁর এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই হাসাহাসি করেছিলেন। এখন এই ট্যাক্সিই কলকাতার অন্যতম আলোচনার বিষয়। পরিবেশকে যে এভাবে গুরুত্ব দেওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন এই ট্যাক্সি চালক। তবে এত ঝড়,ঝাপটার মধ্যেও ট্যাক্সি চালকদের সংগঠন আশাবাদী আবার সুদিন ফিরবে। কিন্তু, আগামী বছরের মার্চের গোড়ায় শহর কলকাতা থেকে প্রায় আড়াই হাজার হলুদ ট্যাক্সি বাতিলের পথে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত সরকারের দিকে তাকিয়ে ট্যাক্সিচালকরা। জীবন-জীবিকা বাঁচানোর দাবি সহ একাধিক বিষয় নিয়ে এবার পরিবহণমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন ট্যাক্সিচালকদের সংগঠনগুলি।
কী বলছে সংগঠনের নেতারা?
সিটু নেতা সুবীর বসু বল ঠেলছেন রাজ্য় সরকারের দিকেই। সমালোচনার শুরু বলছেন, পুরোটাই হচ্ছে রাজ্য সরকারের জন্য। কারণ ওদের কোনও নির্দিষ্ট পরিবহণ নীতি নেই। পরিকল্পনাহীনভাবে একটা দফতর যদি চলতে থাকে তাহলে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে। সাধারণ মানুষ চাইছে সরকারি পরিবহণ গোটা কলকাতা শহরে থাক। কিন্তু, সরকার মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান দিচ্ছে না।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্য়াসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসীম বসু বলছেন, হলুদ ট্যাক্সি অবলুপ্তির পথে যাচ্ছে। কিন্তু, আমরা ওদের বাঁচাতে চাইছি। এদিকে ১৫ বছরের বেশি বয়সের গাড়ি চলাচলে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সরকার যে চিন্তাভাবনা করেছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। বিভিন্ন কোম্পানির কিছু গাড়িকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই মন্ত্রীর সঙ্গে। আমরা আশাবাদী এর মধ্যে সমস্যা সমাধানের একটা পথ বের হবে।
এখনও পর্যন্ত যে সাত হাজার মানুষ হলুদ ট্যাক্সি চালান, তাদের উপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ। ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পরিবারের কী হবে? দোতলার বাসের মতো হারিয়ে যাবে না তো হলুদ ট্যাক্সি? প্রশ্ন ঘুরছে হাওড়া ব্রিজ থেকে ময়দানের আনাচে-কানাচে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটরস কমিটির সাধারণ সম্পাদক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলছেন, “মন্ত্রীর কাছে আমরা হলুদ ট্যাক্সি বাঁচানোর জন্য আবেদন করব। চালকদের ভবিষ্যত, রুটি-রুজি, পরিবাররে আয় সব তো এর সঙ্গে জড়িত। ওদের বাঁচাতেই হবে। সরকারকে বলব দেখতে।”
সমস্যা মিটতে পারে কোন পথে?
প্রসঙ্গত, বাতিল ট্যাক্সি কাটাইয়ের জন্য এমনিতে কাটাই কারখানায় পাঠানো হয়। এক ট্যাক্সি পিছু চালকেরা/মালিকেরা মূলত পান ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু, এই টাকায় কিছুই হবে না বলে সাফ জানাচ্ছেন ট্যাক্সি চালকেরা। ইতিমধ্যেই সমস্যা সমাধানের জন্য সংগঠনগুলির তরফে বেশ কিছু সুরাহার পথও বাতলানো হচ্ছে। যাঁরা নতুন গাড়ি কিনছেন কিন্তু ফেলে রাখছেন, বা পড়ে থাকছে তাঁদের কাছে এমনিতেই পাঁচ বছরের পারমিট থাকছে। এখন যদি সেই গাড়িগুলি চালকেরা সেকেন্ড হ্যান্ড হিসাবে কম দামে কেনেন তাহলে চিন্তা কিছুটা কমতে পারে। সংগঠনগুলির নেতারা বলছেন, সেই গাড়িগুলি কিনে হলুদ রঙ করে ফেলা হবে। তারপর সেগুলিকে হলুদ ট্যাক্সি হিসাবে পথে নামানো হোক। পারমিটের বিষয় যাতে আরও সরল করা যায় তা দেখুক সরকার। যদিও সূত্রের খবর, বর্তমানে কোনও ট্যাক্সির ক্ষেত্রেই আর কোনও পারমিট দেওয়া হচ্ছে না সরকাররে তরফে। তাই সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করা প্রয়োজন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের।