Nepal: তিব্বতের সংস্কৃতির সাক্ষী হতে চান? ট্রেক করে আসুন নেপালের লো মানথাং থেকে
নেপালের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এই গ্রামটিতে ছিল আলাদা রাজ্য। নেপালের শহুরে জনবসতি থেকে এখনও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এই লো মানথাং। এখানে বাস তিব্বতীদের। ১৩৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লো মানথাং এবং সেই সময় এই প্রাচীন শহর ছিল আপার মুস্তাংয়ের রাজধানী।
নেপাল ভ্রমণপিপাসু ও পর্বতারোহীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি জায়গা। শুধু যে এভারেস্টের কারণে তা নয়। এই দেশ হিমালয়ের এমন অংশে অবস্থিত যেখানে একাধিক ট্রেকিং রুট রয়েছে। অন্যদিকে, কেউ যদি তিব্বতের সংস্কৃতি, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আগ্রহী হন, সেখানে নেপালের থেকে সেরা গন্তব্য কোথাও নেই। তবে তার জন্য যেতে হবে নেপালের অফবিটে, হিমালয়ের আরও একটু কাছে। জায়গার নাম লো মানথাং।
নেপালের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এই গ্রামটিতে ছিল আলাদা রাজ্য। নেপালের শহুরে জনবসতি থেকে এখনও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এই লো মানথাং। এখানে বাস তিব্বতীদের। ১৩৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লো মানথাং এবং সেই সময় এই প্রাচীন শহর ছিল আপার মুস্তাংয়ের রাজধানী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই লো মানথাং ৩৮০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং জোমসোম থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে।
এই গ্রামে আনুমানিক ৯০০ লোকের বাস, তাদের তিব্বতী ভাষায় বলা হয় লোবাস। পুরো অঞ্চলটিই প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। এই অঞ্চলটি কোরালা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত যা তিব্বতী বর্ডার। স্থানীয় লোকেরা এখনও তিব্বত থেকে এই পথ দিয়ে পণ্য কেনাবেচা করে।
লো মানথাং তিব্বতী বংশোদ্ভূত হিসাবে সাংস্কৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলে বেশিরভাগ লোবাসের জাতিগত গোষ্ঠীরাই বাস করেন। এখানকার সংস্কৃতিতে তিব্বতের ছোঁয়া পাওয়া যায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়ে হল লো মানথাং গ্রামের কাছে প্রায় বারোটি গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে রয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ চিত্রকলা। এই গুহাগুলি ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় পাওয়া গেছে। এমনকি এই রূপা এবং সোনার চিত্রকলার মধ্যে তিব্বতী লিপিতে খোদাই করা ত্রয়োদশ শতাব্দীর তারিখগুলি স্পষ্ট দেখা যায়।বেশিরভাগ চিত্রগুলির মধ্যে নিউয়ারি প্রভাব রয়েছে। এই গুহাগুলিতে বৌদ্ধের বিভিন্ন রূপ চিত্রিত। এমনকি এই গুহার ভিতরে অনেক বৌদ্ধ স্তূপও পাওয়া গেছে।
প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতি, হাজার বছরের পুরানো মঠ, সংস্কৃতি, মানুষ এবং সুন্দর দৃশ্যগুলি অন্বেষণ করতে পর্যটকরা লো মানথাং এবং আপার মুস্তাংয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসেন। এই এলাকার সমস্ত স্থানীয় বাড়ি মাটির ইট দিয়ে নির্মিত। তবে এখানে যাওয়ার জন্য নেপালের ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। আলাদা ভাবে এখানে যাওয়ার জন্য পারমিট পাওয়া সম্ভব নয়। পারমিটের খরচ জনপ্রতি ৫০০ ডলার, যা মাত্র ১০ দিনের জন্য বৈধ। যেহেতু এটি নেপালের একটি ট্রেকিং রুট তাই স্বতন্ত্র ভাবে এখানে পারমিটের জন্য আবেদন করা যায় না। আপনাকে কোনও নেপালি ট্রেকিং সংস্থার মাধ্যমেই এই পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।
কীভাবে যাবেন-
কাঠমান্ডু হয়ে পোখরা থেকে যাত্রা শুরু করতে পারেন। এত ১৭ দিনের একটি ট্রেকিং রুট। তবে পোখরা থেকে জোমসোম পৌঁছানোর পরই ট্রেকিং শুরু হয়, যা শেষ হতে সময় নেয় ১১ দিন। আপনি যদি ট্রেকিং করতে ইচ্ছুক নন, তাহলে সড়ক পথেও লো মানথাং যেতে পারেন। এর জন্য রয়েছে জিপের ব্যবস্থা। আপার মুস্তাং এখন বেনি থেকে জোমসোম এবং কাগবেনি হয়ে রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত। তবে রাস্তা অত্যন্ত রুক্ষ ও ভঙ্গুর। এই সোজা চলে যাচ্ছে নেপাল তিব্বত বোর্ডার পর্যন্ত, যা লো মানথাং থেকে আরও 20 কিলোমিটার দূরে। তবে কাঠমান্ডু থেকে এই রাস্তা ধরে লো মানথাং পৌঁছানোর জন্য আপনাকে ৪৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে।
আরও পড়ুন: মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে নানান বিশ্বাস! তবুও মানসরোবরের টানে ছুটে যায় পর্যটকরা