Alur Domer Mela: আলুর দমই যখন আকর্ষণ পার্বণের, মকর সংক্রান্তিতে কোথায় বসে এই মেলা?
Makar Sankranti in Bengal: বাংলার বিভিন্ন গ্রামে আলুর দমের মেলা প্রায় দু'শো বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। এই ঐতিহ্যবাহী মেলার টানে দূর-দূর থেকে মানুষ ছুটে আসেন।
বাংলার লোকসংস্কৃতির এবং গ্রামবাংলার জীবনযাপনের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মেলা। এক সময় মেলা বসত মানুষের বিনোদনের জন্য। সেখানে দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরেও রং-বেরংয়ের বিকিকিনির পসরা সাজানো হত। এখনও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলার নানা প্রান্তে মেলা বসে। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, মেলা বসে আলুর দমেরও। কোথাও লোহরি, কোথাও বিহু, আবার কোথাও পৌষ পার্বণ। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরনের উৎসব পালিত হয়। তবে, বাংলায় শুধু যে পিঠে তৈরি হয়, তা নয়। বাংলার বেশ কিছু গ্রামে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষেই এই আলুর দমের মেলা বসে।
মাঠ জুড়ে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। যতজন এই মেলার বিক্রেতা, প্রত্যেকেই বিক্রি করছেন আলুর দম। কোথাও হালকা হলুদ, আবার কোথাও গাঢ় লাল রংয়ের আলুর দম। আলুর দমের গন্ধে ম-ম করছে সারা মাঠ। আলুর দমের দাম ২০-৩০ টাকা। কেউ চাইলে কিলো দরেও আলুর দম কিনতে পারেন। আলুর বস্তার দাম অনুযায়ী এখানে আলুর দমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যদিও মেলায় কাঠের আসবাবপত্র, মাদুর, বাঁশের ঝুড়ি, বেত ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, কোদাল, কাঠের খেলনা গাড়ি, কুলো, ফল, বঁটি, মাটির তৈরি জিনিসপত্রও পাওয়া যায়। তবু মেলার প্রধান আকর্ষণ আলুর দম।
আজকাল শহুরে জনজীবনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উৎসব জড়িয়ে থাকে সারা বছর। সেখানে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে আলুর দমের মেলা প্রায় দু’শো বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। হাওড়া এবং হুগলির বিভিন্ন গ্রামে মকর সংক্রান্তির দিন এই আলুর দমের মেলা বসে। উদয়নারায়ণপুরের রাজাপুর, রাজবলহাটের জাঁন্দা এসব জায়গায় মকর সংক্রান্তি পালিত হয় এভাবেই। দামোদরের তীরে বসে এই আলুর দমের মেলা। নতুন ধান ওঠার আনন্দে যেমন পিঠে পার্বণ পালিত হয়, তেমনই নদীর তীরে চাষ হয় আলু। আলুর দমের মেলা সেই নতুন আলু ওঠার উদযাপন। হাওড়া, হুগলির মতোই মালদার বিভিন্ন অঞ্চলেও মকর সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে এই আলুর দমের মেলা বসে। মহানন্দার পাড়ে যে সব গ্রামে আলু চাষ করা হয়, সেখানে এই আলুর দমের মেলাও লক্ষ্য করা যায়।
নদীতে স্নান এবং পুজোর মধ্য দিয়ে এই আলুর দমের মেলার সূচনা হয়। পরিবারের মঙ্গল কামনার জন্য স্নানের পাশাপাশি নদীতে কলাগাছের তৈরি নৌকাও ভাসানো হয়। স্থানীয়দের মধ্যে এই রীতি এসব গ্রামে যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে। মেলা জুড়ে থরে-থরে সাজানো থাকে আলুর দমের হাঁড়ি। এই মেলাগুলোয় শুধুমাত্র নিরামিষ আলুর দমই পাওয়া যায়। শীতের মিঠে রোদ, নদীর পাড়, চাষের মাঠে আলুর দমের মেলার টানে দূর-দূর থেকে মানুষ ছুটে আসেন। এই ঐতিহ্যবাহী মেলা কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়।