ওয়ার্কেশন- বন্দি দশার নতুন মুক্তি?

Tv9 বাংলা ডিজিটাল: বিগত ৯ মাস ধরে অতিমারির (Pandemic) কবলে পড়ে আমরা গৃহবন্দি। ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা, পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফুচকাও খাওয়া হয়নি বহুদিন। অন্য দিকে, এই নিউ নর্ম্যাল (New Normal)-এ ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ (work From Home)-এর চাপে পড়ে অফিস করার নির্দিষ্ট সময়সীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে বেশ খানিকটা। সব্জি থেকে সালোয়ার, ভরসার নাম অনলাইন শপিং […]

ওয়ার্কেশন- বন্দি দশার নতুন মুক্তি?
ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 24, 2020 | 12:08 PM

Tv9 বাংলা ডিজিটাল: বিগত ৯ মাস ধরে অতিমারির (Pandemic) কবলে পড়ে আমরা গৃহবন্দি। ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা, পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফুচকাও খাওয়া হয়নি বহুদিন। অন্য দিকে, এই নিউ নর্ম্যাল (New Normal)-এ ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ (work From Home)-এর চাপে পড়ে অফিস করার নির্দিষ্ট সময়সীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে বেশ খানিকটা। সব্জি থেকে সালোয়ার, ভরসার নাম অনলাইন শপিং (Online Shopping)।

ভাবলেন, থোড়বড়ি খাড়া জীবন থেকে মুক্তি পেতে সমুদ্রে বা পাহাড়ে ছোট্ট ট্রিপ। অফিসকে না জানিয়ে। তাহলে তো, লগ-ইন (Log-In) করতেই হবে সেই সকাল ৯টায়। নট নড়নচড়ন। তাহলে প্রয়োজন উন্নতমানের ইন্টারনেট (Internet Facility)। আর নিস্তব্ধ এক পরিবেশ। যেখান থেকে অনায়াসেই অফিসের  ভিডিও কনফারেন্সে (Video Conference) যোগ দিতে পারবেন আপনি ।

workation in pandemic

ভিডিও কনফারেন্স- ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

আরও পড়ুন : কোভিড-পৃথিবীতে (Covid-19) নিউ নর্ম্য়ালে  ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির অভিধানে নতুন সংযোজন ‘ওয়ার্কেশন’।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আদৌ তাহলে ‘ওয়ার্কেশন’ (Workation) বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেবে আমাদের?

আপাতদৃষ্টিতে ‘ওয়ার্কেশন’ নামের এই নতুন ট্রেন্ড বেশ আকর্ষণীয়। দীর্ঘদিনের বন্দিদশায় অফিসের কাজের চাপ থেকে দু’দণ্ড মানসিক স্বস্তি লাভের জন্য এর থেকে ভালো উপায় আর কি-ই বা হতে পারে! তবে এ ব্যাপারে মতবিরোধও বিস্তর।

ট্র্যাভেল ব্লগার (Travel Blogger), চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা নেহুল জেইন (Nehul Jain) বললেন, “ওয়ার্কেশন বিষয়টি এই অতিমারি পরিস্থিতিতে ফলদায়ক হলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রথমত, সাধারণ হস্টেলের থেকে এই জস্টেল (Zostel) বিষয়টি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তাছাড়া যদি ছুটি কাটাতে গিয়েও বদ্ধ ঘরে অফিসের বসেরই ফরমায়েশ পালন করতে হয়, তবে সেই বেড়াতে যাওয়ার কি যুক্তি?”

Zostel for workation

জস্টেল- ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

অন্য দিকে, ছুটি মানে নিটোল আনন্দ। ১০টা-৫টার জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ। সেই মুক্তির স্বাদে ভালবাসার ডিএসএলআর, মেকআপ কিটের বদলে যদি রুকস্যাকে ল্যাপটপ, চার্জার, ডঙ্গল থাকে, সেটা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তো?

প্রসঙ্গে ট্র্যাভেল ব্লগার সৌরভ সাবিখি বলেন, “এখন দু’ধরনের মানুষ রয়েছেন। যাঁদের শহরে কোভিডের প্রকোপ বেশি, তাঁরা নিজের শহর থেকে অন্য শহরে পাড়ি জমিয়ে তৈরি করছেন নিজের অস্থায়ী ‘বেসক্যাম্প’। আরেক দল, যাঁরা এই ৯ মাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তির খোঁজে যাচ্ছেন অন্য কোথাও। স্রেফ চাপ কাটাতে।”

হাজার-হাজার টাকা খরচ করে মাস খানেক কিংবা দুয়েকের জন্য ঘর-বাড়ি ছেড়ে এক অপরিচিত স্থানে একা-একা বসে কাজ করাটা আদৌও সুখকর হতে পারে? ছুটি কাটাতে গিয়ে যদি ছুটি উপভোগই না-করতে পারেন, তাহলে এই গ্য়াঁটখরচ তো অর্থহীন। অন্য দিকে, গোদের ওপর বিষফোঁড়া এই করোনা। পরিবহণের ভোগান্তি এখনও নেহাত কম নয়। রেল পরিষেবা চালু হলেও তা ষোল আনা মসৃণ নয়। আবার আকাশপথে পাড়ি দিতে হলেও কোভিড টেস্ট জরুরি। এই ঝক্কি পেরিয়ে পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছলেও নিজের এবং স্থানীয় মানুষদের কথা ভেবে ১৪ দিন থাকতে হবে কোয়ারেন্টিনে (Quarentine)। ৩০ দিনের ১৪ দিন যদি আবারও বন্দিদশায় কাটে তাহলে সেই ঘুরতে যাওয়ার কি মানে? আর শুধু জানলার বাইরের মনোরম দৃশ্যই আপনার বা আমার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট? সেই তো দিনের ৮-৯ ঘণ্টা কাটবে স্মার্ট ফোন কিংবা ল্যাপটপের সামনেই।

view from the window

ছবি সৌজন্যে ইন্টারনেট

প্রশ্ন হচ্ছে, এই জস্টেল কি আদৌ সূদূরপ্রসারী পরিকল্পনা? কারণ হোটেলে বা হোমস্টে-র চেয়ে এই ‘ওয়ার্কেশন স্পট’গুলি খানিক ব্যয়সাপেক্ষ। এই প্রসঙ্গে সৌরভ বলছেন, “ওয়ার্কেশন-এর জন্য প্রয়োজন দু’টি। এক ,মনোরম পরিবেশ। দুই, উন্নতমানের ইন্টারনেট পরিষেবা। আশঙ্কা একটাই, ব্যবসায় লক্ষ্মী না-এলে তো এই ‘ওয়ার্কেশন’ কনসেপ্ট লম্বা দৌড়ে টিঁকে থাকবে কি না।” তাই আপাতত ‘ওয়ার্কেশন’-এর ধারণা ‘ইন’ হলেও তা ভবিষ্য়তে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েই গিয়েছে।