শ্রাবণ মাস হল শিবভক্তদের মধ্যে ভোলেবাবা নিয়ে মগ্ন থাকার সময়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, বাবা ভোলেনাথ এই সময় ভক্তদের আশীর্বাদ বর্ষণ করে থাকেন। মহাদেব হলেন দেবতাদের মহান। অত্যন্ত মুক্ত হৃদয়ের দেবতা দেবাদিদেব মহাদেব।
দেবতা হোক বা অসুর, কঠোর তপস্যার বর হিসেবে তিনি সবকিছু উজার করে দেন। সমকটের সময় মহাদেবের শরনাপন্ন হলে তিনি ভক্তদের কৃপা করেন। কোনও রকম ভেদাভেদ ছাড়াই তিনি আশীর্বাদ করেন নির্বিঘ্নে। শিবের রূপেরও রয়েছে আশ্চর্য মহিমা।
গঙ্গা: শিবের জটার উপর রয়েছে দেবী গঙ্গার অবস্থান। পৌরাণিক কাহিনি মতে, সমুদ্রমন্থণের সময় মারাত্মক বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন মহাদেব। গলায় বিষের জ্বালা শান্ত রাখার জন্য গঙ্গার অবস্থান। এছাড়া মহাদেবের রুদ্র রূপকে শান্ত রাখতেও গঙ্গা সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, মর্ত্যবাসীদের কল্যাণের জন্যও শিবের জটায় রয়েছে দেবী গঙ্গার স্থান।
মহাদেবের জটা থেকে যে জল বেরিয়ে আসে , তা হল গঙ্গা নদী। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয় স্বর্গের নদী গঙ্গা যখন মর্ত্যে নেমে আসছিলেন, তখন তাঁর প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে পৃথিবী প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সেই সময় ভগীরথ তখন শিবের শরণাগত হন।
তখন মহাদেব নিজের জটায় গঙ্গাকে ধারণ করেন। সেই থেকে জটা থেকে মহাদেব ছোট ছোট ধারায় প্রবাহিত হতে দেখা যায়। সেই কারণে মহাদেবের জটা থেকে গঙ্গাকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
জটা: মহাদেবের চুলকে অনেকটা বটবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যা জীবকূলের বিশ্রামস্থল হিসেবে মানা হয়। শুধু তাই নয়, বাতাসের গতিবেগও ভোলেবাবার চুলের অন্তর্গত।
শশীশেখর: চন্দ্র হল সময়ের প্রতীক। আর এই সময়কালকে নিয়ন্ত্রণ করেন স্বয়ং মহাদেব। তবে পৌরাণিক কাহিনি মতে, অভিশপ্ত চাঁদকে সম্মান দিতেই জটার একপাশে স্থান দেওয়া হয়। তাঁর মাথায় অবস্থান করায় তাঁকে শশীশেখরও বলা হয়।
নাগ: মহাদেবের গলায় ও মাথায় জড়ানো থাকে নাগদেবতা। নাগদেবতার উপস্থিতি সর্বদা দেখা যায়। নাগদেবতা হল পুরুষের অহংকারের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
বাঘছাল: মহাদেবের পরনে থাকে বাঘছাল। আবার বাঘছালের উপরও অধিষ্ঠান করেন তিনি। বাঘছাল হল অতিসাধারণ জীবনযাপনের প্রতীক।
রুদ্রাক্ষ: মহাদেবের হাতে, জটায় ও গলায় রুদ্রাক্ষের মালা দেখা যায়। রুদ্রাক্ষ ধারণের আসল অর্থ হল শুদ্ধতার প্রতীক। রুদ্রাক্ষমালা সাধারণত ধ্যানমুদ্রারও প্রতীক।
ত্র্যম্বক: মহাদেবকে ত্র্যম্বকও বলা হয়। তাঁর ডান চোখে সূর্যের তেজ ও বাম দিকে চাঁদের শীতলতা। কপালের তৃতীয় নয়নে আগুনের শিখা থাকে, তাতে দুষ্টদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, কপালের ত্রিনয়নও বিচক্ষণতার প্রতিবিম্ব।
অর্ধনারীশ্বর: শিবের অর্ধনারীশ্বর রূপ শক্তির প্রতীক। এই রূপের মূলে রয়েছে মহাবিশ্বের গঠন। অর্ধনারীশ্বর সৃষ্টির প্রতীক। শক্তি ছাড়া সৃষ্টি সম্ভব নয়। অর্ধনারীশ্বর হল শিব ও শক্তির সংমিশ্রণ।