Janmashtami 2022: জন্মাষ্টমীর উপবাসে ২০ কোটি একাদশীর ফল মেলে! কৃষ্ণকে কেন ৫৬ ভোগ দেওয়া হয়, জানা আছে?
Significance Of Chappan Bhog: জন্মাষ্টমীর পুণ্য তিথিতে কৃষ্ণের অপর রূপ গোপাল ঠাকুরকে জন্মদিনে দেওয়া হয় বিশেষ রীতিতে প্রস্তুত ৫৬ ভোগ। কেন এই বিশেষ দিনে ভক্তেরা ৫৬ ভোগ দেন গোপালকে! জানুন...
২০২২ সালের ১৯ আগস্ট জন্মাষ্টমীর (Janmashtami 2022) পুণ্য তিথি। এই তিথিতেই জন্মেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna)। শ্রীবিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু পুরাণ অনুসারে পৃথিবীতে যখন পাপের কালো আঁধার নেমে আসে, যখন মানুষে মানুষে হিংসা পেরিয়ে যায় সীমা তখনই ধরাধামে মানব রূপে অবতার নেন শ্রীবিষ্ণু (Lord Vishnu)। ঠিক যেমন মথুরায় দেবকী এবং বাসুদেবের সন্তানরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এরপর অত্যাচারী কংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন ধরিত্রীকে। এই কংসই আপন বোন দেবকী এবং বাসুদেবকে কারাগারে বন্দি করে রাখেন ও যতবার তাঁদের সন্তান হয়, ততবার সেই সন্তানকে হত্যা করেন। কারণ তাদের বিয়ের সময় দৈববাণী হয়েছিল, বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান কংসের মৃত্যুর কারণ হবে। সাত সন্তানের মৃত্যুর পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। অষ্টম সন্তান অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হতেই অলৌকিকভাবে কারাগারের প্রহরীরা হঠাৎ করেই যেন অসতর্ক হয়ে পড়ে। তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অসতর্কতার সুযোগে বাসুদেব ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণকে ঝুড়িতে শুইয়ে সেই ঝুড়ি মাথায় করে বৃন্দাবনের যশোদা এবং নন্দ’র বাড়িতে রেখে আসেন। এরপর কৃষ্ণ বড় হন ও কংসকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ধরাধামের মানুষকে রক্ষা করেন।
যে সময়টুকু তিনি বৃন্দাবনে কাটিয়েছিলেন, সেইসময়ে কৃষ্ণ এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা নানাবিধ দুষ্টুমি করে প্রতিবেশীদের অতিষ্ঠ করে রাখতেন। ছোট্ট কৃষ্ণের নাম ছিল মাখন চোর! তিনি শুভ্র মাখন এত বেশি পছন্দ করতেন মাঝেমধ্যেই যশোদার তৈরি করা মাখন চুরি করে খেয়ে ফেলতেন। এত দুষ্টুমি সত্ত্বেও সকলেই কৃষ্ণকে ভীষণ ভালোবাসতেন। একসময়ে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। সমগ্র শহর বন্যায় ধুয়ে যাওয়ার জোগাড় হল। অবতার শ্রীকৃষ্ণ তখন তার কড়ে আঙুলে গোবর্ধন পর্বতকে ধারণ করলেন। সেই পর্বতেল তলায় সকলে আশ্রয় নিল। প্রাণ বাঁচল নগরবাসীর। হিন্দু পুরাণে এই কাহিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর এই কাহিনির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ৫৬ ভোগের সূত্র! ভক্তেরা জন্মাষ্টমীতে ৫৬ ধরনের ভিন্ন প্রসাদ তৈরি করে নিবেদন করেন শ্রীকৃষ্ণের বাল্যরূপ গোপাল ঠাকুরকে। কিন্তু কেন ৫৬ ভোগ?
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, বৃন্দাবনে বসবাসরত ব্যক্তিরা ইন্দ্রকে নানারূপ মহার্ঘ ভোগ নিবেদন করে সন্তুষ্ট রাখতেন। কারণ ইন্দ্রই ছিলেন বৃষ্টি এবং বজ্রের দেবতা। ফসল ফলাতে হলে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
শ্রীকৃষ্ণ উপলব্ধি করলেন গরিব চাষীদের পক্ষে দামি ভোগ নিবেদন করা দুঃসাধ্য কাজ। তিনি সমগ্র চাষীদের বোঝালেন ইন্দ্রকে এভাবে ভোগ নিবেদন না করে বরং নিজের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে। ওদিকে ভোগ সামগ্রীর ঘাটতি দেখে ইন্দ্র অত্যন্ত কুপিত হলেন। তিনি শুরু করলেন প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং বজ্রপাত। শুরু হল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং ভয়াবহ বন্যা। বিপন্ন হল মানুষের জীবন। সকলেই শ্রীকৃষ্ণের দ্বারস্থ হলেন। তিনি তখন সকলকেই গোবর্ধন পর্বতের দিকে যেতে বললেন।
সকলেই সেখানে পৌঁছে দেখল, শ্রীকৃষ্ণ সমগ্র পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুলে তুলে রেখেছেন। সকলেই সেই পবর্তের তলায় আশ্রয় নিল। পরবর্তী সাতদিন ধরে বৃষ্টিপাত হল। সাতদিন ধরেই ছোট্ট কৃষ্ণ কড়ে আঙুলে পর্বতকে ধরে থাকলেন। সাতদিন ধরে তিনি একচুল নড়লেন না। এক কণা খাবারও মুখে তুললেন না। শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রদেব বৃষ্টি থামাতে বাধ্য হলেন। প্রচলিত লোকগাথা অনুসারে, সাধারণত সারাদিনে দিনে শ্রীকৃষ্ণ ৮ বার খাদ্যগ্রহণ করতেন। তাই যখন বৃষ্টি থামল তখন সকল বৃন্দাবনবাসী মিলে কৃতজ্ঞতাবশে তার জন্য ৫৬ পদ (৭দিন X ৮ পদ) তৈরি করলেন।
ভারতবাসদের কাছে জন্মাষ্টমী অন্যতম পুণ্য দিবস। হিন্দুদের কাছে এই দিন বড় পবিত্র। তাই বহু ভক্তই ভোরবেলা উঠে সকাল থেকেই ভোগ তৈরি করা শুরু করেন। ছাপান্ন ভোগে থাকে শস্য, ফল, শুকনো ফল, মিষ্টি, পানীয়, নোনতা, আচার প্রভৃতি। থাকে অতিপরিচিত মাখন মিছরি, ক্ষীর, রসগোল্লা, জিরা লাড্ডু, জিলাপি, রাবড়ি, মালপোয়া, মোহনভোগ, চাটনি, মোরব্বা, শাক, দই, পায়েস, পাপড়, মুগ ডালের হালুয়া, খিচুড়ি, বেগুনের সব্জি, লাউ-এর সব্জি, পুরি, বাদাম দুধ, কিশমিশ, আমন্ড, পেস্তা, এলাচ কত কী! তবে দুধের তৈরি ভোগ দিতে হয় প্রথমে। এরপর নোনতা। সব শেষে নিবেদন করা হয় মিষ্টি। ছোট্ট গোপাল ঠাকুর যে সকলের প্রিয়, তাই ভক্তেরা প্রিয় গোপালের জন্য আনন্দসহকারেই তৈরি করেন সকল খাদ্যদ্রব্য।