Christmas carols: ক্রিসমাসের দিন ক্যারোল কেন গাওয়া হয় জানেন? এর পিছনে রয়েছে প্রাচীন রহস্য
নবম ও দশম শতাব্দীতে উত্তর ইউরোপের খ্রিষ্টীয় মঠগুলিতে বার্নার্ড অফ ক্লেয়ারভক্স কর্তৃক ছন্দায়িত স্তবকে সজ্জিত হয়ে খ্রিষ্টমাস "সিকোয়েন্স" বা "প্রোজ" প্রচলিত হয়।
ক্রিসমাসে কেক, আলো, ক্রিসমাস ট্রি না হলে যেমন এই খ্রিষ্টীয় উত্সব সম্পন্ন হয় না, তেমন এই উত্সবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ক্যারোল। কথিত আছে যে, যিশুর জন্ম সঙ্গীতের সঙ্গে পালিত হয়েছিল। প্রথম শতাব্দী থেকেই ক্রিস্টানদের মধ্যে দেবদূতের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে এই ক্যারোল বা আনন্দের স্তবগান গাওয়া হত। জানা যায়, এই ক্রিসমাসের শুরুর দিকে প্রাথমিকভাবে ল্যাটিনে স্তবগান গাওয়া হত।তখন ক্যারোল বলে কিছু ছিল না। তেমনটাই ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায়। প্রাচীনতম যে বিশেষ খ্রিষ্টমাস স্তোত্রবন্দনাগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমে।
মিলানের আর্কবিশপ অ্যামব্রোস রচিত Veni redemptor gentium ইত্যাদি লাতিন স্তোত্রগুলি এরিয়ানিজম বিরোধী যিশুর অবতারবাদের ধর্মীয় তত্ত্বকথার পবিত্র ভাষ্য। স্তোত্রটি আজও কোনো কোনো গির্জায় গীত হয়। নবম ও দশম শতাব্দীতে উত্তর ইউরোপের খ্রিষ্টীয় মঠগুলিতে বার্নার্ড অফ ক্লেয়ারভক্স কর্তৃক ছন্দায়িত স্তবকে সজ্জিত হয়ে খ্রিষ্টমাস “সিকোয়েন্স” বা “প্রোজ” প্রচলিত হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে পেরিসিয়ান সন্ন্যাসী অ্যাডাম অফ সেন্ট ভিক্টর জনপ্রিয় গানগুলি থেকে সুর আহরণ করে প্রথাগত খ্রিষ্টমাস ক্যারোলের মতো এক প্রকার সঙ্গীত সৃষ্টি করেন।
ইংরেজি ভাষায় প্রথম খ্রিষ্টমাস ক্যারোল পাওয়া যায় শ্রপশায়ারের চ্যাপলেইন জন অডেলের রচনায়। তাঁর তালিকাভুক্ত পঁচিশটি “ক্যারোলস অফ ক্রিসমাস” ওয়েসেলারদের দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে গেয়ে শোনাত। যে গানগুলিকে আমরা খ্রিষ্টমাস ক্যারোল বলে জানি, আসলে সেগুলি ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকসংগীত। বড়দিন ছাড়াও “হারভেস্ট টাইড” উৎসবেও সেগুলি গাওয়া হত। পরবর্তীকালে গির্জায় ক্যারোল গাওয়ার সূচনা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে ক্যারোল মধ্যযুগীয় কর্ড প্যাটার্নে সুরারোপিত হয়ে থাকে। এই কারণে এই গানগুলির সুর বেশ স্বতন্ত্র ধরনের হয়ে থাকে। “Personent hodie”, “Good King Wenceslas”, এবং “The Holly and the Ivy” ক্যারোলগুলি মধ্যযুগের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত। এখনও গীত হয় এমন প্রাচীনতম গানগুলির অন্যতম এগুলি। Adeste Fidelis (O Come all ye faithful) ক্যারোলটি তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে; যদিও গানটির কথা সম্ভবত ত্রয়োদশ শতাব্দীর রচনা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ খ্রিষ্টমাস ঋতুসঙ্গীতের উদ্ভব ঘটে। ১৭৮৪ সালে রচিত হয় “ডেক দ্য হলস”। আমেরিকান “জিঙ্গল বেলস” গানটির মেধাসত্ত্ব ১৮৫৭ সালের। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে আফ্রিকান আমেরিকানদের সংস্কৃতি ও ধর্মচেতনায় সমৃদ্ধ তাদের নিজস্ব ধর্মীয় সঙ্গীত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিংশ শতাব্দীতে মরসুমি ছুটির দিনের গান বাণিজ্যিকভাবে গাওয়া হতে থাকে। এই জাতীয় গানগুলির মধ্যে জ্যাজ ও ব্লুজ জাতীয় গানের নানা রূপ পরিলক্ষিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন সঙ্গীতের পুনরুজ্জীবনেও আগ্রহ দেখা যেতে থাকে। গাওয়া হতে থাকে দ্য রিভেলস-এর মতো লোকসঙ্গীত এবং আদি মধ্যযুগীয় ও ধ্রুপদী সংগীতও।
কারা এই ক্রিসমাস ক্যারোলস গেয়েছিলেন? এই ক্যারোলস জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আগে, ‘ওয়েটস’ নামক সরকারি সংকীর্তন গায়করা এই গান গাইতেন, কারণ তারা শুধুমাত্র ক্রিসমাস ইভেই এই গান গাইতেন। এই ওয়েটসদের, ওয়েটনাইট বা ওয়াচনাইটও বলা হত কারণ, মনে করা হয়ে থাকে যে এরা, সেই সকল মেষপালক যারা মেষ দেখভাল করছিলেন যখন দেবদূতের আগমন হয়েছিল।