IPL 2021:মুম্বইয়ের ‘আয়রনম্যানে’ লন্ডভন্ড ধোনির চেন্নাই

‘লর্ড অফ টি-টোয়েন্টি’ কী করলেন? ৩৪ বলে নট আউট ৮৭ রানের অকল্পনীয় ইনিংস। ৮টা বল হারানো ছয় আর ৪টে তীব্র গতির চার দিয়ে। ওভার প্রতি রান যখন লাগামছাড়া, চার-ছক্কার সুনামি বইয়ে দিলেন দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায়। ধোনির মতো ঠান্ডা মাথার ক্যাপ্টেনও পোলার্ড-প্রতিষেধক খুঁজে বের করতে পারলেন না।

IPL 2021:মুম্বইয়ের ‘আয়রনম্যানে’ লন্ডভন্ড ধোনির চেন্নাই
ছবি-টুইটার
Follow Us:
| Updated on: May 02, 2021 | 6:35 AM

অভিষেক সেনগুপ্ত

চেন্নাই সুপার কিংস ২১৮/৪ (২০ ওভারে) মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ২১৯/৬ (২০ ওভারে)

মহেন্দ্র সিং ধোনির কি কোচিং সেন্টার খোলা উচিত? যেখানে ক্যাপ্টেন্সির অ-আ-ক-খ শেখা যাবে! ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে রোহিত শর্মাকে আউট করতে হলে কী করতে হবে? শার্দূল ঠাকুরকে কী টিপস দিলেন ধোনি? সূর্যকুমার যাদব, কুইন্টন ডি’কককে ফেরাতে পরের দুটো ওভারে কেন দরকার রবীন্দ্র জাডেজা আর মইন আলিকে?

চল্লিশের ধোনি এখন শুধু আইপিএলের। প্রতিটা ম্যাচে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন যেন। উত্তপ্ত আইপিএলও তা হলে কুল ধোনির কাছে ঠান্ডা? উত্তর হ্যাঁ এবং না। হ্যাঁ, কারণ, ধোনি এখনও ম্যাচের রং পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। না, কারণ, কায়রন পোলার্ডের মতো কেউ কেউ ধোনির অঙ্কও ঘেঁটে দিতে পারেন।

এই ক’দিন আগে উইজডেনের বিচারে টি-টোয়েন্টি দুনিয়ার সেরা ক্রিকেটার বিবেচিত হয়েছেন। কেন, চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে খুনখারাপি ব্যাটিং করে বোঝালেন। এইরকম ইনিংস খেলার পর মুম্বই নতুন নাম রাখতে পারে কায়রন পোলার্ডের— ‘আয়রনম্যান’!

‘লর্ড অফ টি-টোয়েন্টি’ কী করলেন? ৩৪ বলে নট আউট ৮৭ রানের অকল্পনীয় ইনিংস। ৮টা বল হারানো ছয় আর ৪টে তীব্র গতির চার দিয়ে। ওভার প্রতি রান যখন লাগামছাড়া, চার-ছক্কার সুনামি বইয়ে দিলেন দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায়। ধোনির মতো ঠান্ডা মাথার ক্যাপ্টেনও পোলার্ড-প্রতিষেধক খুঁজে বের করতে পারলেন না। একাই (ঠিকই পড়ছেন) আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় এনে দিলেন মুম্বইকে।

শুধু ক্রিকেট কেন, যে কোনও খেলার ইতিহাস শুধু জয়ীদেরই মনে রাখে। মন এবং ম্যাচ জেতা এক জিনিস নয়। শনিবারের রাজধানীতে দুটো কাজ একসঙ্গে করে দেখালেন পোলার্ড। ২১৮/৪ তাড়া করতে নেমে শেষ বলে দু’রান নিয়ে জেতালেন ক্যারিবিয়ান সুপারস্টার। বিরাট চেহারার পোলার্ডকে ঘিরে রোহিতদের ভাংড়া নাচ দেখলে যে কেউ বলবে, আইপিএল-১৪র খেতাবের মঞ্চে ওঠার মহড়াটা সেরে নিল মুম্বই!

বিরাট বড় স্কোরের খেলা যখন হয়, সবচেয়ে বেশি নির্যাতন সইতে হয় বোলার ও বলকে। দু’ইনিংস মিলিয়ে ধরলে ৩০টা ছয় হয়েছে এ দিন। ১৬টা চেন্নাইয়ের। ১৪টা মুম্বইয়ের। তার মধ্যে আবার একাই আটটা মেরেছেন পোলার্ড। কেন যে বছরের পর বছর বিপুল অর্থ খরচ করে তাঁকে ধরে রাখে মুম্বই, এইরকম ম্যাচগুলো তার প্রমাণ।

ম্যাচের শুরুটা করেছিল চেন্নাই। টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতে লিগ টেবলের মগডালে ধোনির টিম। আইপিএল-১৪ যেন জেতার জন্যই নেমেছেন সিএসকে। ফাফ দু প্লেসি আর মইন আলি শুরুতেই রীতিমতো ঝলসে দিচ্ছিলেন। ২৮ বলে ৫০ দু প্লেসির। ৩৬ বলে ৫৮ মইনের। চেন্নাই তখন থেকেই টপ গিয়ারে। সেখান থেকে যেন রানের রংমশাল জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন অম্বাতি রায়াডু। ১৭ বলে হাফসেঞ্চুরি। এই আইপিএলে তখনও পর্যন্ত দ্রুততম। ক’দিন আগে পৃথ্বী শ-র ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডটা ভেঙেছিলেন। রায়াডুর ২৭ বলে নট আউট ৭২ করার সময় মনে হচ্ছিল মুম্বইয়ের বোলারদের আইপিএল কেরিয়ারই হয়তো শেষ করে দেবেন। বুমরা পর্যন্ত ৪ ওভারে ৫৬ দিলেন। আইপিএল কেরিয়ারে এত রান আর কখনও বিলোতে হয়নি তাঁকে। যা এগোচ্ছিল চেন্নাই, মনে হচ্ছিল ২৫০ করে ফেলবে হয়তো। সেখানেও আয়রনম্যানের ছাপ। ১২তম ওভারে বল হাতে পর পর আউট করেন ফাফ দু প্লেসি ও সুরেশ রায়না। তবু মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কোনও টিম এই প্রথম এত রান করে ফেলেছিল।

তখন কি আর ধোনি জানতেন, শুধু ট্রেলারটাই দেখাতে পেরেছে তাঁর টিম। পিকচার আভি বাকি হ্যয়! ২১৯ তাড়া করতে নেমে কুইন্টন ডি কক (৩৮) আর রোহিত শর্মা (৩৫) কিছুটা টানলেন। ক্রুণাল পান্ডিয়াও (৩২) খানিকটা। বাকি গল্প শুনতে হলে ডেফার টেলিকাস্ট দেখতে হবে। হোক না আজ বঙ্গে ভোটযুদ্ধের ফাইনাল, সব খেলার চ্যানেলেই শুধু পোলার্ডের ধংস্বলীলার চর্চা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: চেন্নাই সুপার কিংস ২১৮/৪ (রায়াডু নট আউট ৭২, মইন ৫৮, দু প্লেসি ৫০, পোলার্ড ২/১২, বোল্ট ১/৪২)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ২১৯/৬ (পোলার্ড নট আউট ৮৭, ডি কক ৩৮, রোহিত ৩৫, স্যাম ৩/৩৪, জাডেজা ১/২৯, মইন ১/১)।