কলকাতা: আড়াই ঘণ্টা ধরে নির্বাচনী বৈঠক। সাম্প্রতিককালে কোনও টুর্নামেন্ট বা সিরিজের দল ঘোষণার জন্য এত সময় নিয়েছেন নির্বাচকরা, মনে পড়ছে না। এই বৈঠক চলাকালীন কেউ কেউ বলতে শুরু করেছিলেন, বড়সড় ঘটনা ঘটতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেটে। হয়তো মহীরূহ পতন দেখা যেতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটে। জল্পনা, গুঞ্জনই সার। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেনি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে চমকও যে থাকল, তাও বলা যাচ্ছে না। তা হলে কী কারণে এত সময় লাগল বৈঠকে? বোঝা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল বানানোর ক্ষেত্রে নির্বাচক কমিটি এবং ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা যতটা সম্ভব ভারসাম্যে নজর রেখেছেন। সেই মতোই ঘোষণা করা হল ১৫ জনের দল।
মূলত ৫টা পয়েন্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে। এক, ওডিআই বিশ্বকাপের পর ভারতের ওয়ানডে টিমে প্রত্যাবর্তন মহম্মদ সামির। দুই, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিম থেকে বাদ পড়লেন মহম্মদ সিরাজ। তিন, দুবাইয়ে স্পিনিং ট্র্যাক থাকতে পারে ধরে নিয়ে দলে চার স্পিনার। চার, শ্রেয়স আইয়ারে আরও একবার আস্থা রাখলেন কোচ গৌতম গম্ভীর। সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিমে সুযোগ পেলেন যশস্বী জয়সওয়াল। বিরাট কিছু রদবদল না হলে ওডিআই অভিষেক নিশ্চিত যশস্বীর, তা বলা যাচ্ছে না। পাঁচ, ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স আরও একবার জাতীয় দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচিত হল না। বিজয় হাজারে ট্রফিতে দুরন্ত ফর্মে করুণ নায়ার। তাও জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন হল না তাঁর।
দল নির্বাচনী সভায় যে বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হওয়ার কথা ছিল জসপ্রীত বুমরার ফিটনেস নিয়ে। তিনি কি আদৌ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারবেন? নির্বাচকরা তাঁকে ১৫ জনের দলে রেখেছেন। বুমরার চোট নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। তাঁর পিঠের পেশি নাকি ফুলে গিয়েছে। যা আবার উড়িয়ে দিয়েছেন বুমরা নিজেই। এই পরিস্থিতিতে বুমরাকে কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে দোলাচল চলছিল। বুমরার চোট নিয়ে যে কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে তা নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান অজিত আগরকর স্বীকার করে নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে পাওয়া যাবে না। নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর প্রেস কনফারেন্সে বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হওয়ার আগে আশা করছি বুমরা ফিট হয়ে উঠবেন।’ জসপ্রীত বুমরাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বোর্ড। সেই কারণে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ব্যাক আপ বোলার হিসেবে হর্ষিত রানাকে নেওয়া হয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজের জন্য ভারতীয় স্কোয়াড — রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমন গিল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আইয়ার, কেএল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সামি, অর্শদীপ সিং, যশস্বী জয়সওয়াল, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব।
এই ১৫জনের দলে ৪ স্পিনারের দরকার ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। দুবাইয়ে যতই স্পিনিং ট্র্যাক থাকুক, দুই স্পিনারের বেশি খেলানো যাবে না। অর্থাৎ ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে কেউ একজন খেলবেন। দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে হয়তো সুযোগ পাবেন কুলদীপ যাদব। তা হলে চার স্পিনার কেন? এর বদলে কি পেস বোলার অলরাউন্ডার হিসেবে নীতীশ রেড্ডিকে নেওয়া উচিত ছিল? হার্দিক পান্ডিয়ার চোট নিয়ে সব সময়ই আশঙ্কা থাকে। নীতীশ টিমে থাকলে হার্দিকের বিকল্পও হাতে থাকত ভারতের।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সঞ্জু স্যামসনকে নিয়েও। তাঁর ক্ষেত্রেও যেন ঘুরে ফিরে সেই একই যুক্তি কাজ করে, যতই ভালো খেলো না কেন, টিমে সুযোগ পাবে না। লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ দুই কিপার টিমে রয়েছেন দেখে সঞ্জুকে ভাবা হয়নি বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে শেষ ওডিআই সিরিজ খেলেছিলেন, তাতে সেঞ্চুরিও ছিল তাঁর। মজার কথা হল, দেড় বছর আগের বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্স যদি বিবেচিত হয়, তা হলে তিন মাস আগের ওডিআই সিরিজ গুরুত্ব পাবে না।
এবং রোহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়া সফরে যতই খারাপ পারফরম্যান্স থাকুক না কেন, রোহিতেই আস্থা রাখল বোর্ড। এর পিছনে ২টো যুক্তি থাকতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ভারতের সামনে আপাতত কোনও ওডিআই সিরিজ নেই। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি রোহিতের কেরিয়ারের শেষ ওডিআই টুর্নামেন্ট হতে পারে। দ্বিতীয় সম্ভবনাও যথেষ্ট জোরাল। হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই ভারতীয় টিম থেকে অবসর নেবেন রোহিত। সহকারী অধিনায়ক তাঁকেই বাছা হয়, যাঁকে পরবর্তী ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রোজেক্ট করার কথা ভাবে বোর্ড। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলেন শুভমন গিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও একই ভূমিকায় থাকবেন গিল। রোহিত যদি অবসর নেন, তা হলে কি শুভমন ভারতের পরবর্তী ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন?