FOOTBALLER DEATH: বন্ধু ক্রিস্টোফারের দেশে চলে গেলেন চিবুজোরও

raktim ghosh

raktim ghosh |

Updated on: Apr 08, 2022 | 5:34 PM

"খুব ভাল মানুষ ছিল। তেমন শিক্ষিত। ওর মতো ঠান্ডা মাথার ফুটবলার খুব কম দেখেছি। অনেকেই জানে না, গড়গড় করে বাংলা বলত চিবু। ক্রিস্টোফারও চলে গিয়েছে আগেই। এ বার চলে গেল চিবুও।"আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল শিশির ঘোষের গলা থেকে

FOOTBALLER DEATH: বন্ধু ক্রিস্টোফারের দেশে চলে গেলেন চিবুজোরও
বাঁদিকে চিবুজোরের বর্তমান ছবি, ডানদিকে কলকাতা ময়দানের বল দখলের লড়াইয়ে চিবুজোর

কলকাতা: তখন ময়দানে চিমা ওকোরির দাপট চলছে। আটের দশকের শেষ থেকে নয়ের দশকের মাঝামাঝি যে সব আফ্রিকান ফুটবলাররা ময়দানে এসেছিলেন ভাগ্য পরীক্ষা করতে, অনেকেই হারিয়ে গিয়েছিলেন চিমা ওকোরি নামক এক মহীরূহের ঝলসানিতে। তবু কয়েক জন চিনিয়েছিলেন নিজের জাত। তাঁদের মধ্যে থাকবেন চিবু এজে নাওয়াকানমা নামের এক তরুণ। ফুটবল পায়ে যেমন মন জয় করে নিয়েছিলেন, ফুটবল ছাড়ার পরও তাঁকে ভোলেনি ময়দান। পাদ্রী হয়ে গিয়েছিলেন বলে। ময়দানের সেই চিবু শুক্রবার আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন। নিজের দেশ নাইজিরিয়াতেই মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি।

ফুটবল খেলতে নয়, এই দেশে এসেছিলেন পড়াশুনো করতে। পঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসেছিলেন আফ্রিকান ফুটবলার। সেখান থেকেই ফুটবলার হয়ে যাওয়া। শুরুতে খেলেছিলেন গোয়ান টিম চার্চিল ব্রাদার্সে। সেখান থেকে ইস্টবেঙ্গলে খেলতে আসা। তার পর এই শহরকেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন। কলকাতাতেও পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষিত ফুটবলার, এমন কম্বিনেশন তখন ময়দানে একজনই ছিলেন— চিবুজোর। ইস্টবেঙ্গলে খেলতে নেমেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন টিমের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি খেলেছেন মহমেডানেও। ১৯৮৬ সালে কলকাতা ময়দানে পা দেওয়ার সময় চিবুজোরকে নিয়ে বেশ কাড়াকাড়ি পড়েছিল।

আটের দশকের পুরোটাই কাটিয়েছেন লালহলুদে। তারপর চলে যান মহমেডান স্পোর্টিংয়ে। ময়দানে তখন শুরু হয় নতুন জুটি— চিবুজোর-ক্রিস্টোফার। ব্যারেটো-বাইচুং ভুলে যান। মুসা-জ্যাকসন-ওপোকু জুটিও তখন দিনের আলো দেখেনি ময়দানে। একসময় মহমেডান স্পোর্টিংয়ের অধিনায়ক ছিলেন চিবুজোর। বিপক্ষে বহুবার লড়াইয়ে নেমেছিলেন শিশির ঘোষ। শিশির তখন মোহনবাগানের অধিনায়ক। ফোনে কথা বলতেই গলা ধরে আসে শিশিরের। “খুব ভাল মানুষ ছিল। তেমন শিক্ষিত। ওর মতো ঠান্ডা মাথার ফুটবলার খুব কম দেখেছি। অনেকেই জানে না, গড়গড় করে বাংলা বলত চিবু। ক্রিস্টোফারও চলে গিয়েছে আগেই। এ বার চলে গেল চিবুও।”আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল শিশির ঘোষের গলা থেকে।

CHIBU

শিশির ঘোষের অ্যালবাম থেকে-ডানদিকে দাঁড়িয়ে চিবুজোর, পাশে প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

বরাবরই ঈশ্বরপ্রাণ ছিলেন চিবুজোর। খেলা ছাড়ার পর হয়ে গিয়েছিলেন পাদ্রী। কিছুদিন বেঙ্গালুরুতে একটি চার্চেও ছিলেন। তারপর চলে যান নিজের দেশ নাইজেরিয়ায়। সেখানেই একটি চার্চে পাদ্রী ছিলেন চিবুজোর। ২০১০-১১ নাগাদ এসেছিলেন একবার কলকাতায়। ফুটবলের টানেই হয়তো। ঢুঁ মেরেছিলেন মোহনবাগান তাঁবুতে। প্রিয় মহমেডানেও যান। চিবুজোর একটা অধ্যায় বাংলার ফুটবলে। বলা যেতে পারে, নাইজেরিয়ান ফুটবলারদের জন্য যদি ময়দানের দরজা খুলে দেন চিমা, তা হলে চিবুজোররাও ঢুকে পড়েছিলেন। চিমার মতো সাফল না হলেও মাতিয়ে দিয়েছিলেন লাল-হলুদ ও সাদা-কালো জার্সিকে। চিবুজোরের প্রচুর ভক্ত ছিল ময়দানে।

মহমেডানেই নাইজেরিয়ার বিশ্বকাপার এমেকা এজুগোর সঙ্গে আলাপ। খেলেওছেন একসাথে। কিভাবে মারা গেলেন চিবুজোর? এমেকা এজুগোর কথায়, “সকালে নিয়মিত হাঁটতে যেত চিবু। বাড়ি ফিরে এসে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। আর তারপরেই মৃত্যু।”

শেষ। সব শেষ। মহমেডান স্পোর্টিংয়ে তাঁর প্রথম কোচ ছিলেন সাব্বির আলি। গোটা ঘটনায় মূহ্যমান।ফিরে এসেছিল সেই তারকাখচিত মহমেডান স্পোর্টিংয়ের দুরন্ত পারফরম্যান্সের টুকরো স্মৃতি। যা আজ অতীত। সবটা অতীত।

Latest News Updates

Follow us on

Related Stories

Most Read Stories

Click on your DTH Provider to Add TV9 Bangla