Kolkata Rain: ২৮০ দিন পর আলিপুরে ভারী বৃষ্টি, ‘বিরল ঘটনা’ বলছে আবহাওয়া দফতর

Kolkata Rain Latest Update: শেষ বার আলিপুরে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল গত বছরের শীতে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের জেরে ৬ ডিসেম্বর ৭৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। সেই শেষ। তার পর ১৩ সেপ্টেম্বর। ঠিক ২৮০ দিন পর ভারী বৃষ্টির মুখ দেখল আলিপুর।

Kolkata Rain: ২৮০ দিন পর আলিপুরে ভারী বৃষ্টি, ‘বিরল ঘটনা’ বলছে আবহাওয়া দফতর
ঠিক ২৮০ দিন পর ভারী বৃষ্টির মুখ দেখল আলিপুর। গ্রাফিক: অভীক দেবনাথ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 14, 2022 | 11:18 AM

কমলেশ চৌধুরী

পাকিস্তান ভেসেছে। বেঙ্গালুরু ভেসেছে। নাগপুর-পুণে ভেসেছে। বর্ষা শেষ হতে চলল, কলকাতাকে সে ভাবে ডুবতে হয়নি। পুরসভার কেরামতি? না। আসলে কখনওই প্রবল বৃষ্টি হয়নি। যেমনটা এ বার হল। নিম্নচাপের প্রভাবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭১.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরে। অর্থাত্‍ ভারী বৃষ্টি।

কত দিন পর ভারী বৃষ্টি হল আলিপুরে?

আবহাওয়া দফতরের নথি ঘাঁটলে বেরিয়ে আসছে একাধিক তথ্য: এ বারের বর্ষায় এ দিনই প্রথম বার ভারী বৃষ্টি আলিপুরে। শুধু বর্ষার মরসুম নয়, এ বছরের প্রথম ভারী বৃষ্টি। তথ্য আরও আছে। শেষ বার আলিপুরে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল গত বছরের শীতে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের জেরে ৬ ডিসেম্বর ৭৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল আলিপুরে। সেই শেষ। তার পর ১৩ সেপ্টেম্বর। ঠিক ২৮০ দিন পর ভারী বৃষ্টির মুখ দেখল আলিপুর।

এমন কি আগে কখনও হয়েছে?

দস্তাবেজ ঘাঁটছে হাওয়া অফিস। তবে ইদানীংকালে এমন ঘটেছে বলে মনেই করতে পারছেন না আবহবিদরা। ‘বিরল ঘটনা,’ সরাসরিই বলছেন মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘জুলাই, অগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। এক-দু’দিন ভারী বৃষ্টি ছাড়া ওই পরিমাণ বৃষ্টি হওয়া সম্ভব হয় না। শুধু বর্ষা নয়, মে মাসেও অনেক সময় বজ্রগর্ভ মেঘে ভারী বৃষ্টি হয়ে যায়।’’

গত বছরের কথাই ধরা যাক। টানা বৃষ্টিতে জেরবার হয়ে গিয়েছিল কলকাতা-সহ বাংলা। মে থেকে সেপ্টেম্বর—প্রতি মাসে অন্তত একদিন করে ভারী বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরে। কোনও মাসে তারও বেশি। রেহাই পায়নি পুজোও। বর্ষা গেলেও বারবার হানা দিয়েছে বৃষ্টি। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর—প্রতি মাসেই। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসেও বৃষ্টির মুখোমুখি হয়েছে কলকাতা।

weather

ছবিটা পুরোপুরি বদলে যায় মার্চ থেকে। মার্চে একফোঁটা বৃষ্টি হয়নি কলকাতায়। এপ্রিলের শেষ দিনে ০.২ মিলিমিটার বৃষ্টি না হলে মার্চ-এপ্রিল টানা দু’মাস বৃষ্টিহীন থেকে ১২১ বছরের রেকর্ড গড়ত আলিপুর। মে, জুন, জুলাই পর্যন্ত তীর্থের কাক হয়েই থাকতে হয়েছে মহানগর-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গকে। কিছুটা কপাল ফেরে অগস্টে, তিন-তিনটে নিম্নচাপের হাত ধরে। বৃষ্টি নেই, বৃষ্টি নেই, অথচ ২৮ অগস্ট মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে যায় ঠনঠনিয়ায়। ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় মানিকতলায়। নেপথ্যে, স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘ। কিন্তু সে দিনও আলিপুরের শিকে ছেঁড়েনি। বৃষ্টি হয়েছিল ৫৩.৭ মিলিমিটার, অর্থাত্‍ মাঝারি বৃষ্টি, ভারী নয়। ঘটনা হল, ঠনঠনিয়া বা মানিকতলায় বৃষ্টি মাপে পুরসভা। কলকাতায় একমাত্র আলিপুরেই আবহাওয়া দফতরের রেন গেজ রয়েছে। তার পরিমাপই থেকে যাবে রেকর্ডের খাতায়। কলকাতার রেকর্ড হিসেবে।

যে রেকর্ডের খাতা বলবে, অগ্রহায়ণের পর কলকাতার ভারী বৃষ্টি প্রাপ্তি হয়েছিল ৮ মাস পর, ভাদ্রে। তা-ও এমন দিনে যে দিন গভীর নিম্নচাপ শক্তি খুইয়েছে। পৌঁছে গিয়েছে বাংলা থেকে অনেকটা দূরে, মধ্যপ্রদেশে। তা-ও দিনভর বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে। হলদিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে ১৭৮ মিমি, ডায়মন্ড হারবারে ১৫৮ মিমি, ক্যানিংয়ে ১৪৮ মিমি।

নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে দূরে সরলেও প্রবল বৃষ্টি কী ভাবে?

শুধু নিম্নচাপ নয়, পিছনে নিম্নচাপ অক্ষরেখার হাতও দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদরা। সঞ্জীববাবু বলছেন, ‘‘নিম্নচাপের চেয়েও এত বৃষ্টির কারণ নিম্নচাপ অক্ষরেখা। নিম্নচাপের কেন্দ্র থেকে দক্ষিণবঙ্গের মাঝ বরাবর হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা রয়েছে। তার প্রভাবেই ভারী, অতি ভারী বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বুধবারও বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে।’’

সামনেই পুজো। আবার কি নিম্নচাপ হাজির হতে পারে? বারবার ২৮০ দিন পর ভারী বৃষ্টি হবে, এমন তো নয়!