প্রকৃতির রুদ্ররূপের সিক্যুয়েল! ‘জাওয়াদ’-এর মতো ডিসেম্বরেই পাকা ধানে মই ‘মিগজাউম’-এর

Cyclone Michaung Effect: ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক নয়। তবে ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের গন্তব্য হয় মূলত অন্ধ্রপ্রদেশই। ‘জাওয়াদ’ সেই ছক ভাঙলেও, ‘মিগজাউম’ ভাঙেনি। অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে। কিন্তু তার একটা ছোট্ট বাঁকেই বাংলার ভাগ্যে বিপদ লেখা হয়ে যায়। ল্যান্ডফলের পর অন্ধ্র উপকূল বরাবর উত্তরে সরতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়। ফলে বাংলার সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ কমে আসে।

প্রকৃতির রুদ্ররূপের সিক্যুয়েল! ‘জাওয়াদ’-এর মতো ডিসেম্বরেই পাকা ধানে মই ‘মিগজাউম’-এর
জলবায়ু পরিবর্তনের ঠেলায় এরকম সিক্যুয়েল আরও ঘনঘন হওয়ার আশঙ্কা!
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 08, 2023 | 3:29 PM

কমলেশ চৌধুরী

সিনেমার সিক্যুয়েল বহু বছর ধরেই দেখছে বাঙালি। এ বার বাংলায় সিক্যুয়েল নিয়ে হাজির ‘খ্যাপা’ প্রকৃতিও। হুবহু একুশের ডিসেম্বরের চিত্রনাট্য তেইশে! মিলগুলো দেখা যাক। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। সাগরে ঘূর্ণিঝড়। অঘ্রাণে অতিবৃষ্টি। চাষের দফারফা। শীতের বারোটা! স্ক্রিপ্টে একটুও এ দিক-ও দিক নেই। ক্যাচলাইনও একটাই, ‘খামখেয়ালি আবহাওয়া, নিস্তার পাওয়া মুশকিল।’

কী হয়েছিল ২০২১ সালে?

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’। কিছুটা ছক ভেঙে বাংলা অভিমুখে এগোনো শুরু করে ঘূর্ণিঝড়। তবে জাওয়াদ স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগেই, দুর্বল হয়ে ‘ঘূর্ণিঝড়’-এর তকমা হারায়। তাতে ক্ষতি পুরোপুরি আটকায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের অবশিষ্টাংশ নিম্নচাপ বাংলায় দোরে পৌঁছতেই, প্রবল বৃষ্টির মুখে পড়ে যায় দক্ষিণবঙ্গ। ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল তারকেশ্বরে। ভারী বৃষ্টি হয় কলকাতাতেও।

ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক নয়। তবে ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের গন্তব্য হয় মূলত অন্ধ্রপ্রদেশই। ‘জাওয়াদ’ সেই ছক ভাঙলেও, ‘মিগজাউম’ ভাঙেনি। অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে। কিন্তু তার একটা ছোট্ট বাঁকেই বাংলার ভাগ্যে বিপদ লেখা হয়ে যায়। ল্যান্ডফলের পর অন্ধ্র উপকূল বরাবর উত্তরে সরতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়। ফলে বাংলার সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ কমে আসে। এমন অভিমুখের জেরেই বৃষ্টি বাংলা জুড়ে, শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গেও। কোথাও হালকা, কোথাও মাঝারি। বর্ধমান, মেদিনীপুরের মতো কোনও-কোনও জায়গায় আবার প্রায় ভারী বর্ষণের সাক্ষী!

Jawad

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’।

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় TV9 বাংলাকে বলেছেন, “বৃহস্পতিবার সারা দিন যে বৃষ্টি হল, সেটা ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে। যদিও অনেক আগেই ঘূর্ণিঝড় তকমা হারিয়েছে মিগজাউম। নিম্নচাপও নয়, এদিন ঘূর্ণিঝড়ের অবশিষ্টাংশ ঘূর্ণাবর্ত হিসেবে ছত্তীসগড়ের উপর অবস্থান করছিল। তা-ও এত বেশি বৃষ্টির কারণ, শক্তিশালী নিম্নচাপ অক্ষরেখা। অক্ষরেখা শক্তিশালী হওয়ায় সমুদ্র থেকে হু-হু করে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে এবং সেই জলীয় বাষ্প নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে টানা বৃষ্টি হয়েছে।”

অঘ্রাণে অতিবৃষ্টি! উদাহরণ হিসেবে কলকাতার কথা বলা যায়। আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৩০ মিলিমিটারের বেশি। ডিসেম্বরে কলকাতায় গড়ে ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। একাধিক জেলায় এর চেয়েও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এবং জেলাতেই ক্ষতি বেশি। বহু চাষির পাকা ধান নষ্ট। প্রকৃতির মার, একবাক্যে বলছে গ্রামবাংলা। এ বছর ‘এল নিনো’র প্রভাব থাকায় আমন ধান রোপণের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। বহু জেলায় বীজতলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। খরচ করে সেচের জল দিয়ে চাষ করতে হয়েছে অনেক চাষিকে। বহু চাষি তারও সুযোগ পাননি। যারা পেয়েছিলেন, তাদের অনেকেরই পাকা ফসল মাঠে নষ্ট! বড় ক্ষতি আলুচাষেও। যারা বীজআলু বসিয়ে ফেলেছিলেন, অনেক চাষিরই মাথায় হাত। যারা অপেক্ষায় ছিলেন, মাটি ভিজে তাদের অপেক্ষা আরও বেড়ে গেল। আলুচাষ পিছনোর অর্থ কম ফলনের আশঙ্কা। সঙ্গে পরবর্তী নানাবিধ ধসারোগের ভয়। বৃষ্টিতে ক্ষতি সব্জি থেকে ফুলেরও।

Michaung

‘মিগজাউম’ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে।

এ সবের নিটফল, মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। ঠিক ২০২১ সালের মতোই। একুশের ডিসেম্বরে বৃষ্টির জেরে চালের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। পরে চড়চড় করে বেড়ে যায় আলুর দামও। যে দাম পরে আর নামেনি। আবার পকেটে চাপ বাড়ার আশঙ্কা। সৌজন্যে? খ্যাপা প্রকৃতির রুদ্ররূপের সিক্যুয়েল! জলবায়ু পরিবর্তনের ঠেলায় এরকম সিক্যুয়েল আরও ঘনঘন হওয়ার আশঙ্কা!