Climate Change: বাড়ছে প্লাস্টিকের উৎপাদন, আগামী 20 বছরে তিন গুণ বাড়তে পারে সামুদ্রিক জীবনহানি
Plastic Production: বর্তমানে মনুষ্যসৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণের জেরে এই তিন ভাগে বসবাসকারী সামুদ্রিক জীবেদের বেঁচে থাকাটাই ক্রমশ প্রশ্নের মুখে। প্রতিবছর 50 লক্ষ টন থেকে 1 কোটি 30 লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করছে। এসব প্লাস্টিকের একটি বড় অংশ প্রবেশ করে মাছ এবং পাখির দেহে, এমনকী সমুদ্রের তলদেশে থাকা প্রাণীর শরীরে প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া গিয়েছে।
অন্বেষা বিশ্বাস
Plastic Pollution: পৃথিবীর 3 ভাগ জল এবং 1 ভাগ স্থল। বর্তমানে মনুষ্যসৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণের (Plastic Pollution) জেরে এই তিন ভাগে বসবাসকারী সামুদ্রিক জীবেদের বেঁচে থাকাটাই ক্রমশ প্রশ্নের মুখে। প্রতিবছর 50 লক্ষ টন থেকে 1 কোটি 30 লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করছে। এসব প্লাস্টিকের একটি বড় অংশ প্রবেশ করে মাছ এবং পাখির দেহে, এমনকী সমুদ্রের তলদেশে থাকা প্রাণীর শরীরে প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া গিয়েছে। গবেষণার রিপোর্ট বলছে, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে হয়তো আগামী 20 বছরে সমুদ্রে আবর্জনার স্তূপের পরিমাণ ও সামুদ্রিক জীবনহানির সংখ্যা তিনগুণ হবে। জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) ও পরিবেশ দূষণ (Pollution) পৃথিবীতে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ধারায় মানবসভ্যতার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মানব ইতিহাসে শিল্প বিপ্লব ও সবুজ বিপ্লব প্রকৃতির ওপর মানুষের প্রভাবকে সবচেয়ে বাড়িয়েছে। কিন্তু এ দুটি বিপ্লবই মানুষের বসবাসের একমাত্র গ্রহ পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে দূষণের বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রাত্যহিক জীবনে যা যা ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাস্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিক দূষণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন,পরিবেশে অপচনশীল নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি এবং পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মিথস্ক্রিয়ার ফলে মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের কণা এবং নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যেমন বিসফেনল-এ পরিবেশে নির্গত হয়। এসব মাইক্রো ও ন্যানো কণা এবং নিঃসৃত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করতে পারে। ফলে প্লাস্টিকদূষণ মানুষ ও অন্যান্য জীবের প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার যে কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে তা কার্যকরী নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্লাস্টিক ব্য়বহার বহুগুণ বেড়েছে। অনুমান করা হয়েছে যে 1950 থেকে 2017 সালের মধ্যে প্লাস্টিকের উৎপাদন 174 গুণ বেড়েছে এবং এটিও আশা করা হচ্ছে যে 2040 সাল নাগাদ তা দ্বিগুণ হবে। প্লাস্টিকদূষণের ফলে প্রতি বছর 10 লাখ সামুদ্রিক পাখি এবং 1 লাখ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হয়। প্লাস্টিকদূষণের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণীরা। বর্তমানে সমুদ্রে 25 ট্রিলিয়ন মাইক্রো ও ম্যাক্রো প্লাস্টিকের কণা জমা হয়েছে। প্রতি বর্গমাইল সমুদ্রে 48 হাজার প্লাস্টিক জমা হয়েছে। সমুদ্রে জমাকৃত প্লাস্টিকের মোট ওজন 2 লাখ 69 হাজার টন। প্রতিদিন 80 লাখ প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। এভাবে জমতে জমতে বড় বড় মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য জমাকৃত এলাকা (প্যাচ) তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশান্ত মহাসাগরে বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্যাচের আয়তন প্রায় 16 লাখ বর্গকিলোমিটার।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় 800টি কোম্পানি প্লাস্টিক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওয়ান আর্থ-এ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় এই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা 2015 এবং 2020 সালের মধ্যে প্রকাশিত কর্পোরেট রিপোর্টগুলি বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থাগুলি প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য স্বেচ্ছায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা মোকাবিলায় সরকার, শিল্প, নাগরিক এবং সমাজকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।