Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প

১৯৫২ থেকে ২০২৪। গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই। নির্বাচনের নানা অজানা গল্প। দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই,পর্ব -৩।

Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প
| Edited By: | Updated on: Mar 25, 2024 | 12:13 AM

১৯৫২ সালে পথ চলা শুরু নির্বাচনী গণতন্ত্রের। কীভাবে বাঁক নিল তারপর? কোন কোন চ্যালেঞ্জ এসেছে তার পথে? এগিয়ে চলেছে কোন দিকে? এখন সেই কাহিনীর পালা। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ দেশের লড়াইয়ের পর্ব -৩।

এ সেই গণতন্ত্র, সাতের দশকে যা দাঁড়িয়েছিল প্রশ্নচিহ্নের মুখে। লোহার শিকলে বাঁধা পড়েছিল দেশ। এ সেই সময়, ১৯৭৫-এর ২৫ জুন। মাঝরাতের অন্ধকারে যখন জারি হয়েছিল জরুরী অবস্থা।

সাতের দশকে স্তাবকদের মুখে মুখে ফিরছিল সেই শ্লোগান ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া।’ উঠে আসছিলেন সঞ্জয় গান্ধী, আর বাংলায় দাপট দেখাচ্ছিল যুব কংগ্রেস ও ছাত্রপরিষদ কর্মীরা। বহু বামপন্থী ঘরছাড়া। এই সময় ইন্দিরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, বিহারের গান্ধীবাদী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ |

নির্বীজকরণের সার্টিফিকেট না দেখাতে পারলে ট্রাক চালকদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা শুরু হল। আটকে দেয়া হল ঠিকাদারদের পাওনা। নির্বীজকরণের ঘটনাটা জনমত সরকারের বিরুদ্ধে যেতে শুরু করল এবার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সংগঠিত হতে লাগলো। উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে বিরাট গোলমাল বাঁধল। পুলিশের গুলিতে প্রায় পঞ্চাশ জন্ম মারা গেলেন।

সংসদে ইন্দিরা স্বীকার করতে হল, হ্যাঁ, ঘটনা একটা ঘটছে বটে। একুশ মাসের জরুরি অবস্থাকালে মেনটেনান্স অফ ইন্টারনাল সিকিউরিটি বা মিসায় দেশজুড়ে প্রায় ৩৬০০০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে জেলে পোরা হয়েছিল। কোথাও যেন বিরোধিতার লেশমাত্র না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল ইন্দিরা প্রশাসন।

ইন্দিরা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন স্বৈরাচারী নেত্রী হিসেবে তাঁর যে ভাবমূর্তি গোটা বিশ্বে তৈরি হচ্ছিল তাতে বিব্রত হচ্ছিলেন তিনি। আবার কারও কারও মতে গোয়েন্দা প্রধান তাঁকে নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হবে। ভোট ঘোষণার পরের দিনই বিরোধী নেতারা একজোট হয়ে কংগ্রেস বিরোধী ফ্রন্ট গোড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। গঠিত হল জনতা দল। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে নতুন দল গড়লেন জগজীবন রাম। সমঝোতা করলেন জনতা দলের সঙ্গে। অটল বিহারীর নেতৃত্বে জনসঙ্ঘও মিশে গেল জনতা দলে।

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভোট হওয়ার কথা। ৬ মার্চ রবিবার রামলীলা ময়দানে সভা ডাকলো বিরোধীরা। সভায় যাতে লোক না হয় সে জন্য দূরদর্শনে সে সেসময়ের জনপ্রিয় সিনেমা ববি দেখানোর ব্যবস্থা করল সরকার।

হেরে গেল ববি। প্রায় দশ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে উপচে পড়ল রামলীলা ময়দান। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল ভোটের ফল কী হতে চলেছে। বিশে মার্চ ফল বেরোনোর সময় দেখা গেল সেই বোঝার কোনও নড়চড় হয়নি। একনায়কতন্ত্রের বদলে জনতা বেছে নিয়েছে গণতন্ত্রকেই। ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল ইন্দিরার কংগ্রেস। রায়বরেলীর নিশ্চিত আসন থেকে হেরেছেন ইন্দিরা নিজে। পাশের আসন অমেঠি থেকে এক অখ্যাত ছাত্র নেতার কাছে পরাজিত হয়েছেন সঞ্জয়। লোকসভার ৫৪৪ টি আসনের মধ্যে ১৫৪ টি পেল কংগ্রেস। জনতা দল একই ২৯৫। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার তিন জন। জগজীবন রাম, মোরারজি দেশাই ও চরণ সিং। শেষ পর্যন্ত জয়প্রকাশ নারায়ণ ও জে পি কৃপালিনী বেছে নিলেন মোরারজীকেই। দেশে প্রথম অকংগ্রেসি সরকার। পালাবদল রাজ্যেও। ১৯৭৭ সালে তৈরি হল প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। আর বাম আমলের গোড়াতেই শুরু বন্দিমুক্তি আন্দোলন। কোনদিকে ঘুরল তাঁর পথ? কংগ্রেসই বা ঘুরে দাঁড়ালো কীভাবে?

একটা বড় গাছের মতোই ডালপালা ছড়াচ্ছিল ভারতীয় গণতন্ত্র। নানা ভাষা, নানা মতের ভিতর থেকে উঠে আসছিল সিদ্ধান্ত, দেশ চলবে কীভাবে? বেছে নেওয়ার গণতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রয়োগ করছিল মানুষ। কি হল তার ফলে? ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল ইন্দিরার সরকারকে।

রাজ্যে আসার আলো দেখাচ্ছিল বামপন্থী সরকার কিন্তু কেন্দ্রে কী হচ্ছিল তখন? ক্ষমতায় আসার পর জরুরি অবস্থার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন জনতা পার্টির নেতারা। এদিকে ভোটে হারার পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ইন্দিরা। এমনকি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথাও ভাবছিলেন।

বেলচি গ্রামের ঘটনাকেই কি রাজনীতিতে ফিরে আসার হাতিয়ার করলেন ইন্দিরা? কীভাবে কামব্যাক করলেন করলেন আবার রাজনীতিতে?

কথায় বলে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। হ্যাঁ, এই ঘটনা আমাদের খুব অচেনা নয়। আমরা তো দেখেছি অসহায়ের হাহাকারকে কীভাবে ব্যবহার করা হয় রাজনৈতিক ক্ষমতা হাসিলের জন্য। ইতিহাস সেই সব হরিপদ কেরানির নাম ভুলে যায়, লেখা থাকে আকবর বাদশার কথা। ১৯৭৭ -এ বেলচির ঘটনা নিয়েও তাই ঘটেছিল।

এই অবস্থায় ইন্দিরাকে গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লাগলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চরণ সিং।

জনতা পার্টির নেতারা কিন্তু এত সহজে ইন্দিরাকে জমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সঞ্জয়ের মারুতি কারখানা নিয়ে তদন্ত ঠেকাতে ইন্দিরা সংসদকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন এই অভিযোগ তুলে জেল খাটতে বাধ্য করলেন তাঁকে।

ভারতের অর্থনীতি তখন তলানিতে, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। চলছে একের পর এক শ্রমিক ধর্মঘট। এই টালমাটাল অবস্থাতেই অকাল নির্বাচনের সামনে দাঁড়ালো দেশ।

এবার ইন্দিরা কংগ্রেস জিতলো ৩৫৩ টি আসনে। ১৯৭১-এর থেকেও একটা বেশি। কিন্তু ইন্দিরার জীবনে আবার ঘনিয়ে এল অন্ধকার। এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলেন সঞ্জয় গান্ধী।

ঝোড়ো হাওয়া কোনও দিনও ইন্দিরা গান্ধীর পিছু ছাড়েনি। ১৯৮০ -তে ক্ষমতায় ফেরার পরপরই অনুপ্রবেশকারী বাঙালিদের চিহ্নিত করার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল আসাম। তবে আসামের থেকেও বেশি গোলমাল বাঁধলো পাঞ্জাবে।

চুরাশির ৫ জুন রাত দশটায় , শুরু হল অপারেশন ব্লু স্টার। ছ তারিখ ট্যাঙ্ক হানা দিল স্বর্ণমন্দিরে। পরের দিন সন্ধ্যে নাগাদ উদ্ধার হল ভিন্দ্রানওয়ালের মৃত দেহ। সরকারি মতে মৃত ৮৩ সেনা জওয়ান এবং ৪৯২ জন জঙ্গি। কিন্তু এই অপারেশন ব্লু স্টার শত্রু বাড়ালো ইন্দিরার।

৩১ অক্টোবর। ১৯৮৪। সকাল ৯ টা। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বেয়ান্ত সিংয়ের রিভলবার আর সৎবন্ত সিংয়ের অটোমেটিক কার্বাইন পয়েন্ট ব্ল্যান্ক রেঞ্জ থেকে ঝাঁঝরা করে দিল ইন্দিরা গান্ধীকে।

আবার খালি হল ভারতে প্রধানমন্ত্রীর আসন। গোটা দেশে আগুন জবলে উঠলো শিখ দাঙ্গার। সামনেই ভোট কে হবেন কংগ্রেসের মুখ? কোনদিকে ঘুরবে দেশের রাজনীতি?

১৯৮৪। শিখ বিরোধী দাঙ্গা। স্বর্ণমন্দিরে সেনা ঢোকানোর প্রতিশোধ নিয়েছিল বিয়ন্ত ও সৎবন্ত সিং গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শরীর। কিন্তু সেই প্রতিশোধের দাম চোকাতে হয়েছিল ভারতের শিখ সম্প্রদায়কে। ইন্দিরার মৃত্যুর পর যে হিংসার ঝড় গোটা দেশের ওপর দিয়ে গিয়েছিল তার সামনে বোবা হয়ে যায় মানুষ। নরকের আগুনে সেদিন মানুষ পুড়িয়েছিল মানুষকে। দেশ এবং গণতন্ত্রের সামনে সে যে এক অন্ধকার সময় তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

এখনও সেই দিনের কথা মনে করে নিঃশব্দে চোখের জল ঝরে কত না ঘরে। আজও দিল্লির নানা এলাকায় সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠে মানুষ।

ইন্দিরা যেদিন নিহত হন সেদিন বড় ছেলে রাজীব পশ্চিমবঙ্গে। সঞ্জয় মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি কংগ্রেসের মুখ হয়ে উঠছিলেন। মায়ের মৃত্যুর চ্চবিশ ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিল কংগ্রেস। শিখ দাঙ্গার আগুনেই ঘোষণা হল চুরাশির নির্বাচন।

ইন্দিরার মৃত্যু ঠিক কত খানি হাওয়া দিল কংগ্রেসের পালে? কি ফল হল চুরাশির নির্বাচনে? রাজীবের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় কতটা কাঁটায় ভরা? এদিকে দেশে শুরু হয়েছে জয় শ্রী রাম ধ্বনি। কোন দিকে মোর ঘুরলো ভারতের রাজীনীতি?

Follow Us: