North Bengal Medical College: ‘মেডিকেল কলেজ হলেও আমরা বলি হাজারদুয়ারি’, নজরদারির অভাবের কথা মানছেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের কর্তারা

North Bengal Medical College: প্রায় ১০৪ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নানা বিভাগ। মূল সড়কের পাশে থাকা মেডিকেল কলেজে প্রতি রাতেই এমার্জেন্সিতে চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগী নিয়ে আসেন বহু মানুষ। কেমন আছে সেই হাসপাতাল। ঘুরে দেখল টিভি ৯ বাংলা।

North Bengal Medical College: ‘মেডিকেল কলেজ হলেও আমরা বলি হাজারদুয়ারি’, নজরদারির অভাবের কথা মানছেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের কর্তারা
প্রশ্নের মুখে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা? Image Credit source: TV-9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2024 | 11:07 AM

শিলিগুড়ি: আরজি করে মহিলা চিকিৎসক খুনে উত্তাল রাজ্য। প্রশ্নের মুখে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আরজি করে রাতের অবস্থা নিয়ে উঠছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। আলো থেকে পুলিশ, হাসপাতালের একটা বড় অংশে কোনও কিছুরই দেখা মেলে না বলে অভিযোগ। শুধু কী আরজি কর! একই ছবি ত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজেও। নেই পর্যাপ্ত সিসিটিভি থেকে নিরাপত্তা রক্ষী। রাতের ডিউটিতে পুলিশ কর্মীদেরও সব সময় দেখা যায় না বলে অভিযোগ। বাড়ছে উদ্বেগ। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ঘুরে দেখল টিভি ৯ বাংলা। 

প্রায় ১০৪ একর জায়গা জুড়ে ক্যাম্পাস 

প্রায় ১০৪ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নানা বিভাগ। মূল সড়কের পাশে থাকা মেডিকেল কলেজে প্রতি রাতেই এমার্জেন্সিতে চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগী নিয়ে আসেন বহু মানুষ। অভিযোগ, রাতের ডিউটিতে এখানে থাকেন না পুলিশ কর্মীরা৷ কাছেই অবশ্য মেডিকেল আউট পোস্ট রয়েছে। গন্ডগোল হলে তবেই আসে পুলিশ। মাঝে মাঝে টহলদারি ভ্যান আসে, ক্ষণিক দাঁড়িয়ে চলেও যায়। 

এমার্জেন্সিকে ডান হাতে রেখে এগোতে থাকলে পরপর রয়েছে একাধিক ওয়ার্ড। তারপর রয়েছে সুপার ও প্রিন্সিপালের ঘর। তাকে ছেড়ে কিছুটা এগোলেই রয়েছে চারটি লেডিস হস্টেল। গভীর রাতেও হাট করে খোলা অন্তত তিনটি হস্টেলের গেট। একটা করে সিসিটিভি ক্যামেরা অবশ্য আছে হস্টেলের প্রবেশ পথে। আরজি করের ঘটনার জেরে তিন শিফটে ৫ জন করে মহিলা কনস্টেবল দেওয়া হয়েছে এই চার হস্টেলের নিরাপত্তায়। রাতের ডিউটিতে থাকা পাঁচ মহিলা কনস্টেবল হস্টেলের বাইরে রাত পাহারা দিচ্ছিলেন। তারাও জানালেন দরজাগুলি হাট করে খোলাই থাকছে। 

রাতের বেলায় রোগী নিয়ে এমারজেন্সিতে আসেন রোগীর আত্মীয়রা। পালা করে সেখানে মেডিকেল অফিসার-সহ চার চিকিৎসক ডিউটি দেন। রেস্ট রুমে বেড আছে মাত্র দু’টি। ফলে মাঝেমধ্যে কাছেই হস্টেলে রেস্ট নিতে চলে যেতে বাধ্য হন ডাক্তারেরা। 

কী বলছেন হাসপাতালের কর্তারা? 

দেখা গেল বিভিন্ন করিডরে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাচ্ছেন একদল মানুষ। তারা কি সবাই রোগীর আত্মীয়? উত্তর নেই কর্তাদের কাছেও। রাতেই ক্যাম্পাসে টহল দিলেন মেডিকেলের ডিন অব স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্ত। প্রথমে তিনি যান এমারজেন্সিতে। কর্তব্যরত এমারজেন্সির চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেন। রাতের ডিউটিতে পুলিশ কর্মী নেই দেখে সোজা যান মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানে গিয়ে অন ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলে তিনি যান লেডিস হস্টেলের নিরাপত্তা দেখতে। হস্টেলের রাত পাহারায় থাকা মহিলা পুলিশ  কনস্টেবলদের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে মেডিকেল ক্যাম্পাসের নানা এলাকা ঘুরতে থাকেন তিনিও। 

সন্দীপবাবু বলেন, “এদিন অনেকটাই ফাঁকা মেডিকেল এলাকা। রাতে মদ, গাঁজার আসর যে বসে না তা নয়। আগেও অনেককে ধরা হয়েছে তবে এদিন তা চোখে পড়েনি। কম সংখ্যায় হলেও যে কয়জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী আছেন তাঁরা রাতের বেলা এলাকায় টহল দিচ্ছেন। বেশ কিছু ফাঁকফোকর নজরে এসেছে সেগুলি খতিয়ে দেখে নোট করেছি।” 

রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ 

চিকিৎসক, মেডিকেল ছাত্রীদের অভিযোগ, রাতের বেলায় পুলিশ না থাকায় মাঝে মধ্যে ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে ক্যাম্পাসে। গোটা ক্যাম্পাস থাকে অরক্ষিত। ঝুঁকি নিয়েই গভীর রাতে চলাচল করতে হয় তাঁদের। হাসপাতাল ও মেডিকেলের কলেজের এলাকায় কোথাও কোনও ব্যারিকেড নেই। হাসপাতালে যাঁরা আসছেন তাঁরা চাইলে অনায়াসে মেডিকেল কলেজ এলাকায় যেতেই পারেন। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বড় এলাকাজুড়ে নেই সিসিটিভি।

সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, “আমরা সম্পূর্ণ এলাকা ক্যামেরার আওতায় আনতে সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারের ঘরে ফাইল আছে। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলিতে সিসিটিভি আছে।” কিন্তু গোটা রাস্তা যে অরক্ষিত তা স্বীকার করে নেন তিনিও। 

সুপার সঞ্জয় মল্লিক অবশ্য বলছেন, “এটা মেডিকেল কলেজ হলেও আমরা বলি হাজারদুয়ারি। অনেক বড় এলাকা। অনেক রাস্তা। সবই উন্মুক্ত। এত নিরাপত্তা কর্মীও নেই, নেই সিসিটিভিও। তাই সব এলাকায় ঠিক মতো নজরদারি করা যায় না। এর মধ্যে দিয়েই সব চলছে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত করা যায় দেখছি। যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।”