Abhishek Banerjee: ধূপগুড়ির সভায় বাম-কংগ্রেসে নীরব অভিষেক, জোট-ধর্ম মানছেন?
Abhishek Banerjee: অভিষেক এই মুহূর্তে শুধু রাজ্যের শাসকদলের সেকেন্ড ইন কমান্ড-ই নন, তিনি ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির নেতা।
ধূপগুড়ি: লোকসভা ভোটে বিজেপিকে টক্কর দিতে জোট গড়েছে বিরোধীরা। সেই ইন্ডিয়া জোটে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেরাও। কিন্তু, শুক্রবার মুম্বইয়ে যখন ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক চলছে, তখন ধূপগুড়ির সভা থেকে একজোটে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিম। জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধূপগুড়ি থেকে কী বলেন, সেদিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু, শনিবার তৃণমূলের সভা থেকে বাম-কংগ্রেসে নীরব থাকলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। নিজের বক্তব্যে আগাগোড়া বিজেপিকে আক্রমণ করে গেলেন। বাম-কংগ্রেস নিয়ে একটা শব্দও বললেন না। বাম-কংগ্রেসের নাম মুখে না এনে কি জোট-ধর্ম পালন করলেন অভিষেক? জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এদিন ধূপগুড়িতে প্রচারে অভিষেকের নিশানায় ছিল বিজেপি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা রাজনৈতিক স্বার্থ দেখি না। মানুষের উপকার করি। আর মানুষের উপর ভরসা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি, বিজেপির নেতারা গদ্দার হতে পারেন, বাংলার মানুষ কোনওদিন গদ্দার বা বেইমানদের সমর্থন করেন না। তৃণমূলের হাত যত শক্তিশালী করেছেন, আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আর বিজেপির হাত যত শক্তিশালী করেছেন, তত বঞ্চিত হয়েছেন।”
সেলিম, অধীররা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেও কেন বাম-কংগ্রেসে নীরব থাকলেন অভিষেক? রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, অভিষেক এই মুহূর্তে শুধু রাজ্যের শাসকদলের সেকেন্ড ইন কমান্ড-ই নন, তিনি ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির নেতা । জাতীয় রাজনীতিতে নয়া ইনিংস শুরু করেছেন জোটের উচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসেবে। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে অভিষেক ধূপগুড়ির মাটিতে বাম, কংগ্রেসকে আক্রমণ করলে তার অভিঘাত হত ভয়ঙ্কর। জাতীয় পর্যায়ে সমালোচনা শুরু হত ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গীদের মধ্যে বিবাদকে ঘিরে। বাংলায় কুস্তি আর জাতীয় স্তরে দোস্তি। এই মর্মে আলোচনা আরও বড় মাত্রা পেত। সেই অবকাশই দিলেন না অভিষেক। এটা অভিষেকের মাস্টার স্ট্রোক বলে মানছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আবার কেউ কেউ বলছেন, সাগরদিঘির মতো ধূপগুড়িতে বাম, কংগ্রেস জোট ততটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নয়। আর তাই নতুন করে বিতর্কও তৈরি করলেন না অভিষেক। তবে যেভাবে ইন্ডিয়া জোটের দুই সঙ্গী তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন, তা নিয়ে চর্চা অব্যাহত। এই আবহে রাজনৈতিক পরিণতির পরিচয় দিয়েছেন অভিষেক। এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল
অভিষেক বাম, কংগ্রেসে নীরব থাকলেও ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে রাজ্যে যে তাঁদের আন্দোলন চলবে, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন বাম, কংগ্রেস নেতারা। এদিন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “অভিষেক জোটবার্তা দিলেন অথবা অভিষেক বাংলার সিপিএম-কংগ্রেসকে উপেক্ষা করলেন যাই বলুন, ওরাই বলেছিল সিপিএমকে দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হয়।” ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটিতে অভিষেকের থাকা নিয়েও কটাক্ষ করলেন সুজন। বলেন, “পিসি ঠিক করেছেন বলেই কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে অভিষেক। তৃণমূলের সঙ্গে এ রাজ্যে বামেদের জোট নেই। বাইরের রাজ্যে তৃণমূল নেই। ফলে ওদের মূল্য নেই।”
দিল্লিতে কংগ্রেস নেতারা যতই বলুন, রাজ্যে যে তৃণমূল বিরোধিতা চলবে, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “মুম্বই থেকে কলকাতা বা বাংলার দূরত্ব রয়েছে। সেই দূরত্ব রাজনীতিতেও থাকবে।”
ধূপগুড়ির সভায় অভিষেকের শুধুমাত্র বিজেপিকে আক্রমণ করা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “তিনি জোট-ধর্ম যেমন মানছেন, পাশাপাশি ওখানে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েছেন। তিনি তো অধীর চৌধুরী এবং মহম্মদ সেলিমের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন লোক নন। তাঁকে রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধিতার দায়িত্বও পালন করতে হয়। সেই কারণে তিনি সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। আর সিপিএম ও কংগ্রেস এরাজ্যে বিজেপির দালাল। সেই কারণে তারা তৃণমূলকে আক্রমণ করে।”
ইন্ডিয়া জোটের তিন শরিকের এই চাপানউতোর নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বাংলায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুস্তি করবেন। আর দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশাপাশি বসে বৈঠক করবেন, এটা কী ধরনের ব্যাপার। এটা তো চলতে পারে না। এখানে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি আর মহারাষ্ট্রে মস্তি, এটা বেশিদিন চলবে না। বাংলার মানুষ ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করবেন।”