ভাগ্নের নামকরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মামারা, সেখানেই কুপিয়ে খুন! ৫০ বছর পরেও টাটকা সাঁইবাড়ির স্মৃতি

Sainbari Murder: ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ। বর্ধমানের সাঁইবাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের সামনেই কুপিয়ে খুন করা হয় দুই ছেলে মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁইকে।

ভাগ্নের নামকরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মামারা, সেখানেই কুপিয়ে খুন! ৫০ বছর পরেও টাটকা সাঁইবাড়ির স্মৃতি
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jun 18, 2021 | 1:10 AM

বর্ধমান: সোশ্যাল মিডিয়ায় পর পর বিতর্কিত পোস্ট। মুখ খুলতে হয়েছে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানকে। অর্ধ শতাব্দী পার করেও আজকের বাংলায় ফের আলোচনার কেন্দ্রে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড। রাজনীতির আঙিনায় নতুন করে কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। সত্তরের হত্যাকাণ্ডের সেই পটভূমি, সাঁইবাড়ি এখন কেমন আছে? একুশের বিতর্কের ঢেউ কি ছুঁয়ে গিয়েছে সেই সত্তরের হিংসার সাক্ষীদের?

বালি সিমেন্টের পরত কবেই খসে পড়েছে। বট-অশ্বথ ডালপালা বিস্তার করেছে। জরাজীর্ণ দশায় বঙ্গ রাজনীতির এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে সাঁইবাড়ি। ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ। বর্ধমানের সাঁইবাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের সামনেই কুপিয়ে খুন করা হয় দুই ছেলে মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁইকে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধা মায়ের। এই ঘটনায় নাম জড়ায় একাধিক সিপিএম নেতার। ঠিক তার এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার আহ্লাদিপুরে এই পরিবারের আরেক সদস্য নবকুমার সাঁইকেও হত্যা করা হয়।

snaibari murder

অমৃত যশ।

কী ঘটেছিল সেদিন? নিহত প্রণয় ও মলয় সাঁইয়ের ভাগ্নে অমৃত যশের তখন এক মাস বয়স। তাঁর নামকরণ অনুষ্ঠানের সময়ই আচমকা হামলা হয়েছিল। সেদিনের কথা বলতে গিয়ে অমৃত যশ জানান, “আমার সেদিন নামকরণ ছিল। বাবা ছিল, মামারাও ছিল সবাই। সেদিন সিপিএমের হার্মাদরা ঘিরে ধরে প্রথমে বোমা মারে। পরে কাঁচগুলো খুচিয়ে ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন মলয় মামা ও প্রণয়মামাকে খুন করে। দিদা আর মাকেও মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল।” সেদিন বেঁচে গেলেও বছরখানেক পর আহ্লাদিপুরে ঘিরে ধরে খুন করা হয় বাড়ির বড় ছেলে নব সাঁইকে। অমৃতবাবুর কথায়, “আমার বড় মামাকে পরে খুন করে সিপিএমের লোকেরা। ডেডবডিও আনতে দিচ্ছিল না। দেহ আনতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।”

snaibari murder

বাংলার হিংসার অতীতের কথা বললে, বার বার ঘুরে ফিরে সাঁইবাড়ির কথা উঠে আসে। কিন্তু তদন্ত, মামলা, দু-দুটো কমিশন, বিচার মেলেনি। সময়ের সঙ্গে অতীতের ধুলোয় চাপা পড়ে গেছে সাঁইবাড়ির রক্তাক্ত ইতিহাস। তবে বিতর্ক থামেনি। একুশের ভোটের পর প্রথম আলোড়ন তুলেছিল বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের পোস্ট। বিতর্ক উসকে দিয়েছেন তরুণ ছাত্রনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও। পাঁচ দশক বিচারের অপেক্ষায় থাকার পর বাম নেতাদের পোস্ট যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে পড়েছে।

snaibari murder

অমৃত যশের কথায়, “সিপিএমের লোকেরা মার্ডার করার পর সেটাকে জাস্টিফাই করার জন্য এরকমই মিথ্যা কথা বলে।” সাঁই পরিবারের সদস্য বিজয় সাঁইয়ের কথায়, “পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। কিছুই করেননি। জ্যোতিবাবুর ওনারা বন্ধু লোক।” অন্যদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “সিপিএমের লোকেরা যা বলছে তা শুনে আমাদের হাসি পাচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছেন এদের কী দশা হয়েছে। আর সেই সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট করেছে কংগ্রেস।” আজও বিচারের অপেক্ষায় সাঁইবাড়ি।