Raniganj: রানিগঞ্জে কেন জোশীমঠের ছায়া? বাঁচার উপায় বাতলালেন বিশেষজ্ঞরা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রানিগঞ্জ নিয়ে আশঙ্কা অমূলক নয় বলে জানালেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু, এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী কে?

Raniganj: রানিগঞ্জে কেন জোশীমঠের ছায়া? বাঁচার উপায় বাতলালেন বিশেষজ্ঞরা
ধসের মুখে রানিগঞ্জ। প্রতীকি ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 17, 2023 | 11:12 PM

রানিগঞ্জ: জোশীমঠের মতো অবস্থা হতে পারে রানিগঞ্জেরও। মঙ্গলবার এমনই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর এই আশঙ্কা অমূলক নয় বলে জানালেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু, এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী কে? এটা নিয়ে নতুন করে শুরু হল রাজনৈতিক তরজা।

বাংলায় কয়লার প্রধান আকড় রানিগঞ্জের সম্পূর্ণটাই ধস-প্রবণ এলাকা বলে স্বীকার করে নিয়েছেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তবে এর জন্য রাজ্যকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোল ইন্ডিয়া রানিগঞ্জের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছে, সেটা দিয়ে কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব ADDA-কে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ADDA-র দায়িত্বে রয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, ২০০৯ সাল থেকে দফায়-দফায় টাকা দেওয়ার পরেও সেই কাজ কেন রাজ্য করতে পারল না, সেটা দেখা দরকার।”

যদিও রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি (ADDA)-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিস্থিতির জন্য আদতে কেন্দ্রের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। বিধায়ক বলেন, “ধস-প্রবণ রানিগঞ্জের উন্নয়ন সহ পুনর্বাসনের জন্য ২৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু, তার মধ্যে কয়েক দফায় ১৫০ কোটির মতো টাকা দিয়েছে। তাই এই টাকায় কিছু কাজ করা সম্ভব হয়নি।” একইসঙ্গে নাম না করে বিজেপি নেতাদের কটাক্ষের জবাবে বলেন, “কেন্দ্র কথা রাখে না। নিজেই প্রকল্প ঘোষণা করে টাকা পাঠায়নি। কথা রাখেনি, অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।”

তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কী ভাবে কয়লা উত্তোলন করা যায়, কী ভাবে এলাকার পরিস্থিতি ঠিক করা যায় সেটা রাজ্য সরকারকেই কেন্দ্রের কাছে বলতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা ও স্থানীয় বাসিন্দা বংশগোপাল চৌধুরী। এপ্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার এই বিষয়ে ভ্রুক্ষেপই দিচ্ছে না।” অবিলম্বে রানিগঞ্জের পরিত্যক্ত কয়লা খনিগুলি ভরাট করা না হলে এখানেও জোশীমঠের মতো বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম বিশ্বাসও।

কেন রানিগঞ্জে জোশীমঠের ছায়া? রানিগঞ্জ কেন ধস-প্রবণ হয়ে উঠেছে, তা বিশদে বিশ্লেষণ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম বিশ্বাসও। তিনি বলেন, “কোলিয়ারি অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ কয়লা তুলে নেওয়ার পর সেখানে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যতা বালি বা মাটি দিয়ে ভরাট করা জরুরি। কিন্তু, আদতে সেটা করা হয় না। ভূ-পৃষ্ঠের নীচে গভীর শূন্যতা থাকলেও সেটা উপর থেকে বোঝা যায় না। ওই খনি অঞ্চলের উপর বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, খেলার মাঠ, রেললাইন রয়েছে। নীচে শূন্যতা এবং উপর থেকে ক্রমাগত চাপ বাড়ার ফলেই ভূমিধস নামে, বাড়িতে ফাটল ধরে। রানিগঞ্জে এই পরিস্থিতিই হয়েছে।” তাই কয়লা উত্তোলনের পর শূন্যস্থান পূরণ করা জরুরি। তারপর ভূমিধস হলেও সেটা ছোট আকারে হবে, জোশীমঠের পরিস্থিতি হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রানিগঞ্জ যে ক্রমশ ধস-প্রবণ হয়ে উঠছে তা ৯-এর দশকেই অনুধাবন করেছিলেন তৎকালীন সিপিএম সাংসদ, সিটু নেতা, রানিগঞ্জের বিধায়ক হারাধন রান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কয়লা উত্তোলনের পর খনিগুলিতে ঠিকমতো বালি ভরাট না হলে একদিন এলাকা বসে পড়বে। এব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি। কে এটা দেখবে? জবাব পেতে ১৯৯৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কয়লা উত্তোলনকারীকেই খনি ভরাটের দায় নিতে হবে। পাশাপাশি ঝরিয়া ও রানিগঞ্জের জন্য মাস্টার প্ল্যান করে দেয়। ঝরিয়া মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা এবং রানিগঞ্জ মাস্টার প্ল্যানের জন্য ২৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়। রানিগঞ্জ মাস্টার প্ল্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ADDA-কে। সেই সময় ADDA-র চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর উদ্যোগে ধস কবলিত জমি শনাক্তকরণ, পুনর্বাসনের জন্য জমির খোঁজ নেওয়া সহ দফায়-দফায় কাজ শুরু হয়। রানিগঞ্জ সহ জামুরিয়া, আসানসোল সহ বিভিন্ন কোলিয়ারি অঞ্চলে এই কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে ২০০৯ সালে বংশগোপাল চৌধুরী ভোটে হেরে যান। ADDA তৃণমূলের দখলে যায়। তারপর আবার তৃণমূল প্রশাসন নতুন করে জমি শনাক্তকরণের কাজ শুরু করে।

তৃণমূলের দাবি ছিল, সিপিএমের নেতৃত্বে কেবল যে এলাকায় দলের প্রভাব আছে সেই এলাকার উপর নজর দেওয়া হয়েছে। তারপর তৃণমূল প্রশাসন জামুড়িয়া সহ ৩টি জায়গায় আবাসন তৈরির কাজ শুরু করে। ২০০৯ সাল থেকে দফায়-দফায় টাকা দেওয়াও শুরু হয়। যদিও এখনও সম্পূর্ণ টাকা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কিন্তু, পুনর্বাসনের কাজ শুরু হলেও জমিজটে কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ADDA-র দাবি, জমি মিলছে না। ফলে কাজ অর্ধেক হয়ে রয়েছে। তৃণমূল রানিগঞ্জকে ধস-প্রবণ এলাকা থেকে উন্নত করে তুলবে বললেও আদতে কিছু করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, রানিগঞ্জের শিয়রে বিপদ উঁকি দিলেও এলাকা ছাড়তে নারাজ পুরোনো বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, আমরা কেন ঘর-বাড়ি ছেড়ে যাব?সরকার ব্যবস্থা করুক। বিদেশেও তো উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধস আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েনে থমকে গোটা কাজ। সবমিলিয়ে, বিপজ্জনক অবস্থায় রানিগঞ্জ।