হাসিনা এক হাতে জেহাদি তৈরি করেন এক হাতে মারেন: তসলিমা
‘সমস্যা হল উনি ১০০ জেহাদি তৈরি করেন, মারেন ১০টা। তাই ৯০ জন জেহাদি বাংলাদেশ জুড়ে ঘুরে বেড়ায়।’
বাংলাদেশ: দীর্ঘ ছ’বছর পর ব্লগার অভিজিৎ রায় (Abhjit Roy) হত্যাকাণ্ডে ৫ অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। এক অভিযুক্তকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন হাজতবাসের রায়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ‘কে তুলোধোনা করে টুইট করলেন ‘নির্বাসিত’ লেখক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)।
মঙ্গলবার এক টুইটে তসলিমা লেখেন, মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাজা শোনাতে ছয় ছয়টা বছর লেগে গেল বাংলাদেশের। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আনসার উল্লাহর ৫ ইসলামী সন্ত্রাসবাদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। এরপরে তসলিমা যোগ করেন মুক্তমনাদের কণ্ঠরোধ করতে এই খুন হয়েছিল। অবশেষে ইসলামী দেশে কিছুটা তো বিচার মিলল।
It took 6 yrs for Bangladesh to reach a verdict for brutally killing Avijit Roy,the free thinking blogger.5 Islamic terrorists from Ansar al Islam,a banned terrorist org,got death penalty.They killed bloggers to stop free thinking.Finally a bit of justice in an Islamized country.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) February 16, 2021
তবে পরের টুইটে আরও আক্রমণাত্মক তসলিমা। এবার সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দুটো হাতই সক্রিয়, একটা জেহাদি তৈরি করে, আর এক হাত মারে।’ এখানেই থামেননি তসলিমা। লেখেন, ‘সমস্যা হল উনি ১০০ জেহাদি তৈরি করেন, মারেন ১০টা। তাই ৯০ জেহাদি বাংলাদেশ জুড়ে ঘুরে বেড়ায়।’ হাসিনার পরিকল্পনাই হল বাংলাদেশকে ইসলাম ভূমি হিসেবে গড়ে তোলা, খোঁচা তসলিমার।
Prime Minister Hasina has two active hands, one is used to create Jihadists, another is to kill jihadists. The problem is she creates 100, and kills 10. So, 90 jihadists are roaming free in Bangladesh, planning to turn the country into darul islam, the land of Islam.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) February 16, 2021
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্ত্রী রফিদা আহমেদের সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে কুপিয়ে খুন করা হয় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। হামলাকারীদের আঘাতে গুরুতর আহত হন রফিদা। নষ্ট হয়ে যায় তাঁর একটি আঙুল। বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই আনসার উল্লাহ বাংলার জঙ্গিদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল অভিজিৎ রায়কে। এরপর ব্লগারের নারকীয় হত্যার প্রতিবাদে সরব হয় দুই বাংলা। দীর্ঘ ছ’বছর পর অবশেষে শাস্তি পেল হামলাকারীরা। এ নিয়েই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত লেখক তসলিমা কটাক্ষ করলেন সে দেশের সরকারকে।
সংশ্লিষ্ট টুইটের কমেন্ট বক্সে তসলিমা লেখেন, ‘শুধুমাত্র ইসলামের সমালোচনা করলেই খুন হতে হয় সে ধর্মেরই মানুষকে। আমি তো অ-মুসলিম নই। আমার মাথার দামও ধার্য করেছিল এরা… ২৬ বছর আমার দেশে ঢোকার অনুমতি মিলল না।’
আরও পড়ুন: মৌলবাদ বিরোধী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে ৫ জনকে ফাঁসির সাজা
প্রসঙ্গত, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জানাশোনা ছিল তসলিমার। তাঁর নিজের কথায়, ‘অভিজিৎ আর আমি এক আদর্শের মানুষ।’ অভিজিতের মুক্তমনা ব্লগকে সবসময় সমর্থন করে গিয়েছেন তসলিমা। তিনি একটি প্রতিবেদনে লিখেছিলেন অভিজিতের খুনিদের হয়ত শাস্তিই হবে না… যদিও ছ’ বছর পর শাস্তি হল দোষীদের। একেই ‘কিঞ্চিৎ বিচার’ বলে কটাক্ষ করলেন ‘লজ্জা’র লেখক।
কীভাবে খুন হতে হয়েছিল অভিজিৎ রায়কে?
জঙ্গি নেতা আরাফাত রহমানের বয়ান অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বেরিয়ে আসছিলেন অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী। বইমেলা থেকে অভিজিৎকে বেরিয়ে আসতে দেখে মেজর জিয়া তাকে টিএসএসির মোড়ের দিকে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আরাফত রহমান দেখে, তাদের সহযোগী আলি ও আনিক অভিজিৎকে কোপাচ্ছে। তখন অভিজিতের স্ত্রী চিৎকার করলে আনিক তাঁকেও আঘাত করে। যার ফলে একটি আঙুল নষ্ট হয়ে যায় রফিদার। তারপর ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা।
তবে অভিজিৎ রায় হত্যাই প্রথম কিংবা শেষ ঘটনা নয়। ইসলাম মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালিখির ফলে রোষের মুখে পড়তে হয়েছে আরও অনেককেই। অভিজিৎ হত্যার আগে ২০০৪ সালে একই ভাবে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ইসলামিক জঙ্গিদের টার্গেট হতে হয়েছিল আরেক লেখক হুমায়ুন আজাদকে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্পবিজ্ঞানের লেখক জাফর ইকবালকেও হত্যার চেষ্টা হয়েছিল একই কারণে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য আক্রমণের শিকার হওয়ায়, সরব হয়েছিলেন সচেতন মহলের একাংশ। এই প্রেক্ষিতে এ পার বাংলার কবি শ্রীজাত লিখেছিলেন ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ।’