আরও বাড়তে পারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম, তিন বছরে রেকর্ড অপরিশোধিত তেলের
তেলের দাম বাড়ার পেছনে এটাও কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে যে পুরো বিশ্বে যেভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাতে বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে যে মানুষ এখন বিকল্প ইন্ধনের ভরসা করতে পারে। এই গুজব তেলের চাহিদাতেও সমস্যা তৈরি করেছে। ভারতেরও গত তিন মাসের রেকর্ড দেখা গেলে অগস্টে আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
এই মুহূর্তে দেশে পেট্রোল ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ববাজারেও তেলের দাম বেড়েছে। যারা পেট্রোল ডিজেলের দাম কমার আশা করছিলেন, তাদের জন্য খারাপ খবর। বিশ্ববাজারে গত ৫ দিন ধরে যে গতিতে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে, তা দেখে ঘরোয়া বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুযোগ কম। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম ২০১৮-র পর সর্বোচ্চ ছিল। দামের গতি ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারের কাছাকাছি যাচ্ছে।
বলা হচ্ছে, কোভিড লকডাউন আর জায়গায় জায়গায় থাকা বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ আগের মতই প্রচুর তেলের ব্যবহার করছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু তেলের খনিগুলি থেকে সেই হিসেবে তেল বেরচ্ছে না। এর ফলে চাহিদা এবং যোগানের ঘাটতির মধ্যে বড় প্রভাব পড়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের দাম আগুন হয়ে রয়েছে।
লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি বজায়
রয়টার্সের একটি রিপোর্টের মোতাবেক, লন্ডনে সকাল ৯টায় (GMT) প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৭৯.২ মার্কিন ডলার। এটি আগের দিনের তুলনায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়মিত বেড়ে চলেছে। মার্কিন দেশেও কমবেশি একই অবস্থা। সেখানে আগের দিনের তুলনায় ১.৫ শতাংশ দাম বেড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলার হতে দেখা গিয়েছে। এই বছরের জুলাই মাসের পর যা সর্বোচ্চ।
গোল্ডম্যান স্যাসের অনুমান কী?
গোল্ডম্যান স্যাসের অনুমান, এই বছরের শেষে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের মূল্য ৯০ ডলার ছুঁতে পারে। সারা বিশ্বে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দুর্বল হওয়ায় মানুষের গতিবিধি বেড়ে গিয়েছে আর তেলের দাম আগের মতই বাড়ছে। একইভাবে সম্প্রতি আমেরিকায় আইডা ঝড়ের তান্ডবের কারণেও তেল সরবরাহের উপর প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে। গোল্ডম্যান জানিয়েছে, যতটা আশা করা হচ্ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে চাহিদা আর সরবরাহের মধ্যে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্ব এভাবে সামলে নেবে তা কেউ ভাবেনি। আগামী দিনে সরবরাহের আরও অভাব দেখা যাবে।
অন্যদিকে তেল উৎপাদককারী দেশগুলির সংগঠন ‘ওপেক’ আগেই হাত তুলে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য এই সংবেদনশীল সময়ে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ বাড়ানো তাদের ক্ষমতার বাইরে। ওপেকের বক্তব্য তেলের কুয়ো বা সরবরাহের পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ কম হয়ে গিয়েছে আর ইনফ্রার মেন্টেনেন্স ভীষণই ধীর গতিতে চলছে। এই অবস্থায় সরবরাহ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। মেক্সিকোর খাড়ি অঞ্চলেও সমস্যা রয়েছে, যে কারণে সরবরাহের ক্ষেত্রেও মুশকিল হচ্ছে। আমেরিকার বাজারের পাশাপাশি ইউরোপেরও একই অবস্থা।
ভারতে পরিস্থিতি কী
তেলের দাম বাড়ার পেছনে এটাও কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে যে পুরো বিশ্বে যেভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাতে বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে যে মানুষ এখন বিকল্প ইন্ধনের ভরসা করতে পারে। এই গুজব তেলের চাহিদাতেও সমস্যা তৈরি করেছে। ভারতেরও গত তিন মাসের রেকর্ড দেখা গেলে অগস্টে আমদানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। জুলাইয়ের পর থেকে এই ক্রমবৃদ্ধিমান আমদানিতে গতি দেখা গিয়েছে কারণ তেলের বেড়ে চলা চাহিদা দেখে রিফাইনারিগুলো বেশি পরিমাণে তেল মজুত করে রেখেছে।