বাংলা ভুলছে ‘মডার্ন’ বাঙালি? হারাচ্ছে ‘আইডেন্টিটি’! ‘এ কোন ভাষা’…
Bengal and Bengali Language: বাঙালির অভাব নেই, কিন্তু বাংলাকে ভালবেসে বাংলা ব্যাকরণ শিখছে, পড়ছে, কতজন! বাংলায় থেকে যাচ্ছেন কতজন! শহর কলকাতার চারপাশের ছবিটা দেখলে এক ঝটকায় কী বলে দেওয়া যায়, এটা বাংলা, নাকি সেই ছাপ মুছে গিয়েছে কালে-কালে... চিন্তার ভাঁজ সমাজের বিদ্বজ্জনদের কপালে।
জয়িতা চন্দ্র
”এই রিস্কা, রোককে, দাঁড়াও-দাঁড়াও”, ”খুচরো নেহি হে! এবাবা, কী করে ভাড়া দেগা!” ”দাদা ২ কিলো আলু দেদো…।” এইটুকু হিন্দির সঙ্গে পরিচিত বহু মানুষ। বেশ কয়েক প্রজন্ম আগে থেকেই কলকাতার বুকে মা-ঠাকুমারা ভাষা বিনিময় করার সময় এটুকু হিন্দির আশ্রয় নিয়েছিলেন। আজ দিন দিন সেই ভাষা অনেক পরিণত-মার্জিত। আর মাতৃভাষা? বাঙালিদের বাংলা ভাষা! বাংলা সংস্কৃতি! সেটা যত্নে রয়েছে তো! ‘নতুন কিছু গ্রহণ কিংবা শেখা মানে, যা নিজের তার বিসর্জন নয় কিন্তু’– স্পষ্ট মত নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়ের। বাঙালির অভাব নেই, কিন্তু বাংলাকে ভালবেসে বাংলা ব্যাকরণ শিখছে, পড়ছে, কতজন! বাংলায় থেকে যাচ্ছেন কতজন! শহর কলকাতার চারপাশের ছবিটা দেখলে এক ঝটকায় কী বলে দেওয়া যায়, এটা বাংলা, নাকি সেই ছাপ মুছে গিয়েছে কালে-কালে… চিন্তার ভাঁজ সমাজের বিদ্বজ্জনদের কপালে।
বাংলাভাষার এই ক্ষয় আজ নতুন নয়। যুগে যুগে কালে কালে একইভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে কখনও লেখনিতে, কখনও আবার কথায়। খোদ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এক সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন– ”প্রতিদিন একটা দুটো করে ইংরেজি শব্দও আমাদের ব্যবহারের মধ্যে প্রবেশ করছে। ভাষার মূল প্রকৃতির মধ্যে একটা বিধান আছে, যার দ্বারা নূতন শব্দের যাচাই হতে থাকে, গায়ের জোরে এই বিধান না মানলে জারজ শব্দ কিছুতেই জাতে ওঠে না। ইংরেজি ভাষার দিকে তাকিয়ে দেখলে আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবেন।”
ভাষা-সংস্কৃতি, সর্বোপরি রাজ্যের এই ভোল বদল নিয়ে দিনে দিনে সংশয় যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি এই নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপালেও। তাঁর কথায়, ”এরপরে তো রাজ্যটার পরিচিতি নষ্ট হয়ে যাবে, বাংলায় কথা বলার লোকও খুঁজে পাবেন না। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা স্টেটের একটা নিজস্ব পরিচিতি আছে। একটা সংস্কৃতি আছে। …এটাই আমার প্রথম এবং শেষ সতর্কবার্তা।” এরপরই TV9 বাংলা ঢুঁ মারল বিশিষ্টজনেদের দরজায়-দরজায়, সকলেই কি রাজ্যের ছবিটা নিয়ে একমত! চলুন জেনে নেওয়া যাক….।
‘‘বাঙালিরা বরাবরই উদাসীন”
দেশের মধ্যে যখন রাজ্য ভাগ হয়েছিল, তখন তো মূলত ভাষাকে কেন্দ্র করেই…, এই যেমন ধরুন পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অসম, বিহার প্রভৃতি। দক্ষিণে গেলে যতটা তাদের সংস্কৃতি ছবির মতো স্পষ্ট, ততটাই কি বাংলার বুকে বাংলা সংস্কৃতি স্পষ্ট? ”আমরা নিজেরা আসলে কোথাও বড্ড বেশি এগোতে গিয়ে, ঠিক কী কী পিছনে ফেলে চলেছি, তার হিসেব রাখছি না। বাঙালি সব জানে, সবার থেকে এগিয়ে। এই বিশ্বাস পোষণ করতে করতে কিছুই যে সঠিকভাবে আজ আর জানা হয়ে উঠছে না…। আমিই যদি জায়গা ছেড়ে দিই, নিজের ভিতকে ভুলে যাই, তবে সে জায়গা নিতে অপর একজন তো আসবেই, থাকবেই, তাতে ভুলটা কোথায়? বাঙালিরা বরাবরই এই বিষয়ে উদাসীন, আজ কটা মানুষ নিজের মাটির কথা ভাবছে বলুন! প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটাও যেন হারিয়ে ফেলছে। এই যেমন ধরুন, যাঁরা টেলিকলার, ফোনের ওপার থেকে হিন্দি কিংবা ইংরেজিতেই কথা বলেন। অথচ তাঁরা করে খাচ্ছেন তো সেই বাংলার বুকেই, কেন তাহলে বাংলাটা জানবেন না! এটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হচ্ছে, দোকান-বাজার, বাসে ট্রামে, আমি যদি হিন্দি না জানি, তবে যেন অপরাধ, কেন? হিন্দি তো দেশের গণযোগাযোগের ভাষা, জাতীয় ভাষা তো নয়। অন্য রাজ্যে গিয়ে বাংলায় গড়গড়িয়ে কথা বলে কাজটা চালান দেখি, কেমন পারেন? কিন্তু আমরা তো এগিয়ে, তাই নিজেরাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে, নিজেদের ভাষাকে শিকেয় তুলে দিয়ে, আজ ইংরেজি-হিন্দি বলছি, মডার্ন হচ্ছি। এই আর কী! আক্ষেপ প্রকাশ করলেন সাংবাদিক তথা সাহিত্যিক গৌতম বসু মল্লিক।
”গোড়াতেই তো গলদ”
দাদা আমার ছেলের ইংরেজিটা ঠিক আসে না। শহর অঞ্চলে এই ছবিটা প্রায় দেখাই যায়। ছেলে মেয়েদের ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করার প্রবণতা বাড়ছে। স্কুলেও মাতৃভাষায় কথা বলতে দেওয়া হয় না। বাড়িতে মা-বাবারও অধিকাংশ সময় চাপ দিয়ে বলে থাকেন, ‘বেড়াল নয়, বল Cat. বাংলা বলছো কেন?’ এর ফলেই কিছুটা বাংলার প্রতি অনীহা তো এসেছেই। এটা ঘটনা। কটা মানুষ এখন ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতে পারবেন, এটা একটু ভেবে দেখার আছে। আসলে আমরা তো শব্দ হারিয়ে ফেলছি। এটাই মূল সমস্যা বলেই উল্লেখ করলেন পবিত্র সরকার।
”রাজ্যের শহর আর গ্রামের ছবিটা কিন্তু আলাদা”
”মুখ্যমন্ত্রী মূলত যে বিষয়টাকে তুলে ধরেছেন, ব্যবসা, হকার, রাস্তাঘাটের ছবি, সেখানে দাঁড়িয়ে একটা কথা ভুললে চলবে না যে ছবিটা শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রে কিন্তু আলাদা। আগে আসি শহুরে প্রসঙ্গে। এখানের মানুষ আর্থিকভাবে খানিকটা হলেও সচ্ছল। ফলে সকলেই চেষ্টা করছেন সন্তানদের ইংরেজি মিডিয়ামে শিক্ষা দেওয়ার। যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়ছে, তাদের ক্ষেত্রে খোঁজ নিয়ে দেখবেন, ৭০ শতাংশ মানুষ বাধ্য হচ্ছেন বাংলা মিডিয়ামে পড়াতে আর্থিক টানাপোড়েনের জন্য। এই ছেলে মেয়েগুলোই যখন শিক্ষিত হচ্ছে, বড় হচ্ছে, সে কী করবে? চাকরি কোথায়? সরকারি চাকরি করবে? তা তো দুর্নীতি মুক্ত নয়। তাহলে নিশ্চয়তা কোথায়? ফলে অধিকাংশই রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ তো গেল শহরের গল্প, এবার আসি গ্রামের কথায়, কটা সরকারি স্কুলে সঠিক লেখাপড়া হচ্ছে? এই প্রশ্ন মনে থাকত না, যদি না সম্প্রতিতে এতধরনের খবর চোখে আসত। এখন তো শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন জাগে মনে। নিয়োগ প্রক্রিয়াও তো অভিযোগের তালিকার বাইরে নয়। তাহলে আমি যদি ধরেই নেই শিক্ষকদেরই গোড়ায় গদল, ব্যাকরণের ঘাটতি সেখান থেকেই, তবে তিনি কী শিক্ষা দেবেন? সেখান থেকে কটাই বা কৃতি ছাত্রছাত্রী তৈরি হবে! যদিও কয়েকজনের জন্য সকলে আজ কালিমালিপ্ত, এভাবে না কোনওদিন ভাবতে চেয়েছি, না বলতে চেয়েছি, কিন্তু আজ মনে প্রশ্ন জাগাটা কি স্বাভাবিক নয়! সেই কারণেই তো বাংলায় বাঙালি কমছে, আসেই সেই জায়গাগুলো কি ফাঁকা থাকবে?” সংশয় প্রকাশ করেন গৌতম বসু মল্লিক।
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন— আজকের বাংলা ভাষা একদিনে রাতারাতি হয়ে যায়নি। আজকের বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় দেখছি ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করছে। কেন করছে জানি না। পশ্চিমবঙ্গ কবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্দোলন করলো, যেখানে হিন্দি ভাষা ক্রমশ বাংলা ভাষাকে গ্রাস করে ফেলছে?
”ইংরেজরা যথাযথভাবে সেই ভাষা না শিখতে পারায়, তারা একধরনের ভাষা উদ্ভব করে ফেললো ‘হামি টোমাকে মারিয়া ফেলিবে’।” যেখানে দাঁড়িয়ে, ”নরকের ভয়কে উপেক্ষা করে বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষায় প্রথম গ্রন্থ বীরবলের হালখাতা রচনা করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী।” যদিও প্রমথ চৌধুরীর বাংলাকে সেই সময় গ্রহণ করেছিলেন প্রায় সকলেই। তবে সেই সময় যে ভাষাকে নিয়ে চুলচেরা বিচার চলছিল, সেই ভাষার বর্তমান স্বরূপ দেখলে কি আর আদপে এই ভাষার নাম বাংলা থাকতো! ভাষাবিদদের মনে এই প্রশ্ন প্রতিটা মুহূর্তে খোঁচা দিয়ে চলেছে।
বাঙালিদের নিজেদের কি কোনও খামতিই নেই? নিজেদের সংস্কৃতিকে কি যথাযথ মর্যাদা বাঙালিরা দিচ্ছেন? নিজেদের দিকেই আঙুল তুললেন সিনেপাড়ার একগুচ্ছ তারকা…
এদিকে কঠিন পরিস্থিতি, অন্যদিকে বাঙালিরা নিজেরাই পালাবদলের দৌড়ে নাম লিখিয়েছে। ‘প্রত্যেকটা স্টেটের একটা নিজস্ব পরিচিতি আছে। একটা সংস্কৃতি আছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে নানাজনের নানা মত হলেও, বাঙালি যে আর খাঁটি বাঙালি নাই, তা বছর ২০ আগে, গানে-গানে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছন্দে-তালে সুর মিলিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন, হায় বাঙালি হায় তুমি আর বাঙালি নাই…। ‘চলন, বলন, কথার ধরন… দেখলে তা খানিকটা বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না’– ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে এ কথা বললেন খরাজবাবু। আচ্ছা, চারপাশের পরিবেশটা খুব দ্রুতটার সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে না! খাদ্যরসিক বাঙালির পছন্দের খাবারের তালিকায় তো মাছ-ভাতের পাশে সুসি-সিজলার জায়গা করে নিচ্ছে! না, এতে কোনও সমস্যা নেই। বরং বাঙালিদের এই সহজে গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষমতাটাই যেন তাঁদের ১০ পা এগিয়ে রাখে। বাঙালির কাছে আজ ব্রাত্য কিছুই নয়। একই সুরে অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী বললেন, ”অন্যের ভাষা, অন্যের সংস্কৃতির সঙ্গে কিন্তু আমার বিন্দুমাত্র বিরোধ নেই। তবে অন্য রাজ্য, অন্য ভাষাভাষির মানুষেরা নিজেরটা নিয়ে যতটা গর্ববোধ করেন, সেটা বাঙালিদের মধ্যে কমে যাচ্ছে।”
মানুষের রুচির বদল ঘটছে…
আজ কোথায় আধুনিক গান, কোথায় পাড়ায় পাড়ায় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জলসা…! নেই বলা যাবে না, তবে তার সংখ্যা কমেছে, শহুরে মানুষের হাতে এখন সময় কোথায়? বাংলার বুকেও রাজত্ব করছে হিন্দি গান। আক্ষেপ করলেন গায়ক রূপঙ্কর বাগচি। বললেন, ”হিন্দি গান তো চিরকালই জনপ্রিয় ছিল আমাদের এখানে। পাশাপাশি এখন দেখছি পাঞ্জাবি গানও খুব চলছে। আবার দক্ষিণী গানের একটা নতুন চল শুরু হয়েছে। তাহলে আমরা যাঁরা গান বাজনা করছি, আমরা কি মানুষকে আনন্দ দিতে পারছি না? এ প্রশ্ন আমার মনে মাঝে-মাঝে উঁকি দেয়। আমরা হয়তো সেই পর্যায়, সেই স্মার্টনেসটায় পৌঁছতে পারছি না। একটা সময় মানুষের সঙ্গে সংযোগের এক বড় মাধ্যম ছিল বাংলা আধুনিক গান, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদের গান, কিংবা রজনীকান্ত সেনের গান কিংবা দীজেন্দ্রলাল রায়ের গান, সেটা আজ কোথায়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো অজস্র গান তৈরি করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় তাঁর জনপ্রিয়গানগুলো নিয়ে আমরা চর্চা করি। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় বাঙালিরা (কেবল পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কথা বলছি, প্রবাসে নয়) একটু বাঙালিয়ানা হারিয়ে ফেলছেন।”
এখন তো কালচার ককটেল
”ধরা যাক এখন আধুনিকতাকে সম্পর্ক যেমন রয়েছে, সেখানে তো ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’– তো ‘তুই’-এ চলে গিয়েছে। মার্জিতভাবটা কোথায়? আমরা প্রত্যেকটা জায়গার কালচারকে না মিলিয়ে মিশিয়ে ফেলছি। এটাকে যদি ইংরেজি করি, তবে কালচার ককটেল বলা যেতে পারে। এই দেখুন না, আমি যে নিজে কথা বলছি, তার মাঝেও তো ইংরেজি শব্দ থাকছে। একেবারে জগাখিচুড়ি ব্যাপার। সে খাবার ক্ষেত্রে হোক কিংবা পরা ক্ষেত্রে হোক, সব জায়গায় ছাপ ফেলে যাচ্ছে। ফলে বাংলা আর বাংলা থাকছে কই…! প্রশ্ন তোলেন অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়। ”
‘ফেলুদা-কে চিনছে ইংরেজিতে?’
পর্দার একেনবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বাঙালিরা নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে মোটেও ভাবছে না। অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, ”বাঙালিরা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি যে খুব যত্নবান, সেটা আগলে রাখতে চায়, এটা বলার জায়গা নেই। একটা সময় যে কারণে পশ্চিমবঙ্গের নাম ছিল, এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষেরা আসেন, থাকেন, খুব সহজে মিশে যেতে পারেন, বাংলা তাঁদের একাত্ম করে নেয়, সেটা সত্যি খুব গৌরবের বিষয়, তবে তার সঙ্গে নিজের সংস্কৃতি, ভাষার প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রবণতাটা কোথাও গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।” বাঙালিরা বাংলা বই পড়ছে ইংরেজিতে। ‘আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’ এই বিষয়টা যেন মেনে নিতে পারেন না অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। বললেন, ”এখন তো হামেশাই দেখা যায় যে, এক জায়গায় তিন বাঙালি বসে ইংরেজি কিংবা হিন্দিতে কথা বলছেন। সেটাকে আবার সূচক হিসেবেও অনেকে ধরে নেন। মনে করেন এটা শিক্ষিত হওয়ার, আধুনিক হওয়ার একটা লক্ষণ। আমাদের ভাষার মধ্যে শুদ্ধতা কমে গিয়েছে। আমরা বাংলা বলতে বলতে তার মধ্যে অনেক অন্য ভাষায় প্রয়োগ করে ফেলি। অন্য যতবেশি ভাষা জানা যেতে পরে, সেটা তো গুণ। সেটা আমার দক্ষতা। একাধিক ভাষা জানাটা তো দোষের নয়। সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের ভাষাকে কম গুরুত্ব দেওয়া, এটা অন্যায়। তা বলে গায়ের জোর দেখানো নয়, অন্যত্র, যেখানে বাংলা ভাষার চল নেই, সেখানে গিয়ে নিশ্চয়ই বাংলা বলব না। অন্যভাষা জানা থাকলে তো অনেক সাহিত্য পড়া যায়। তাই না! তাই বলে বাঙালি হয়ে বাংলা সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ পড়ব, এটা সত্যি দুর্ভাগ্যের।”