‘‘আমি তো দেখতে সুন্দর নই… এটাই আমার স্পেশ্যালিটি’’

World Left handers day: অভিনেত্রী মানসী সিনহা লেফট হ্যান্ডারস গোষ্ঠীভুক্ত। বাঁ হাতে লেখা বা খাওয়ার কারণে কী-কী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি? TV9 বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন।

‘‘আমি তো দেখতে সুন্দর নই... এটাই আমার স্পেশ্যালিটি’’
Follow Us:
| Updated on: Aug 13, 2021 | 2:21 PM

‘‘বাঁয়ে হাত কা খেল’’—ডানপন্থী, থুড়ি, ডান-হাতিদের এই বাঁ-হাতিদের প্রতি অসচেতন অথচ অতি-পরিচিত অবজ্ঞা দীর্ঘদিনের।

আজ, ১৩ অগস্ট। ইন্টারন্যাশনাল লেফট্ হ্যান্ডারস ডে। বাঁ-হাতিদের জন্য বছরে নির্দিষ্ট একটা দিন। এখনও গোষ্ঠীগত ভাবে বাঁ-হাতিদের সংখ্যা কম। সে জন্য কখনও তাঁরা বিদ্রুপের শিকার হন, কখনও আবার তাঁদের আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অভিনেত্রী মানসী সিনহা (এই মুহূর্তে ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ এবং ‘কন্যাদান’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন) লেফট হ্যান্ডারস গোষ্ঠীভুক্ত। বাঁ হাতে লেখা বা খাওয়ার কারণে কী-কী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি? TV9 বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন।

আমি বাঁ হাতে লিখি। বাঁ হাতে সেলাই করি, আঁকি। খাওয়ার সময় চামচে খেলে বাঁ হাতে খাই। আর হাত দিয়ে খেলে ডান হাতে। জন্মের পর থেকে এটাই আমার অভ্যেস। তবে আমাদের, মানে লেফট্ হ্যান্ডারদের জন্যও যে আলাদা করে একটা দিন ক্যালেন্ডারে নির্দিষ্ট করা রয়েছে, সত্যি বলতে কী… তা জানতুম না।

জন্মের পর যখন খাওয়া, পেন্সিল ধরা এগুলো নিজে-নিজে করতে শুরু করলাম, সবটাই বাঁ হাতে করছি দেখে আমার মা (প্রয়াত শিল্পী মণিদীপা রায়) সব কিছু ডান হাত দিয়ে করাবে বলে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বাঁ হাতে যাঁরা সব কিছু করেন, তাঁদের সংখ্যা কম। তাই-ই মা ভেবেছিল, মেয়েকে আর পাঁচজনের মতো করতে হবে। তাই সেই যুদ্ধ। সে সময় আমাদের চিকিৎসক ছিলেন বিষ্ণু মুখোপাধ্যায়। উনি মাকে বলেছিলেন, একেবারেই এ সব চেষ্টা করবেন না। ও বায়োলজিক্যালি বাঁ হাতে লিখছে। সেটা অপরাধ নয়। আবার বাইরে থেকে চেষ্টা করলে ও শুধরে যাবে, এমনও নয়। বরং বেশি জোর করলে ওর ক্ষতি হবে। মা বুঝলেন, বুঝে ছেড়ে দিলেন।

1

তারপর শুরু হল আমার স্কুল। বাগবাজার মাল্টিপারপাস। মা ওখানে পড়াতেন। পরে রামকৃষ্ণ আশ্রমে পড়াতেন। আমি বাগবাজার মাল্টিপারপাসে পড়তাম। আক্ষরিক অর্থেই ওটা আমার সেকেন্ড হোম। লোকসমাজে, স্কুলে, কলেজে বা বন্ধুমহলে বাঁ-হাতি হওয়ার জন্য আমি কিন্তু কখনও নেগেটিভ ভাইব পাইনি। বরং ‘ওমা তুই বাঁ হাতে লিখিস’, ‘অমিতাভ বচ্চন বাঁ হাতে লেখে, দেবশ্রী রায় বাঁ হাতে লেখে, হৃতিক রোশন বাঁ হাতে লেখে’, এ সব বলত সকলে। আর স্কুলে দিদিরা অত্যন্ত মাদারলি ছিলেন। প্রচুর প্যাম্পার করতেন। বরং অনেক সময় অন্য ক্লাসের মেয়েরা আমাকে দেখতে আসত। বলত, ‘ওমা! তুই বাঁ হাতে লিখিস! দেখি তো, লিখে দেখা।’ তখন তো আমি সেলেব্রিটি। আমি কিন্তু ডান হাতেও লিখতে পারি। ছোটবেলা থেকে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু স্পিড অত্যন্ত কম। অনেকে যেমন একেবারেই পারেন না, আমার তেমন নয়। তবে স্পষ্ট হাতের লেখায় দু’পাতা লিখতে দু’ঘণ্টা লাগবে। অনেকে আবার বলতেন, ‘লেফট্ হ্যান্ডারদের ভীষণ বুদ্ধি হয়।’ সে অবশ্য আমারও দুর্বুদ্ধি কিছু কম নেই।

2

বিয়ের পর লেফট্ হ্যান্ডার হওয়ার সমস্যা হয়েছিল। শাশুড়ি মা বিরক্ত হতেন। বাঁ হাতে খাবার দিতাম। সেটা ওঁর পছন্দ ছিল না। উনি বলতেন, ‘ডান হাতে দিতে পারলে দাও। না হলে তুমি দিও না।’ কিন্তু শ্বশুরমশাই সাপোর্ট করেছিলেন। উনি শাশুড়িকে বলেছিলেন, ‘আমাদের যেমন ডান হাত, ওর বাঁ হাত। ওতে তো কোনও অসুবিধে নেই।’ ফলে শ্বশুরমশাইয়ের সাপোর্টে শাশুড়ি মায়ের আপত্তি মিলিয়ে গেল।

আমার পরিবারে কিন্তু লেফট্ হ্যান্ডার আর কেউ নেই। আমি সব সময়ই আলাদা। মা একটা বড় মুশকিলে পড়েছিলেন। আমাকে উল বোনা শেখাতে পারেননি। তাতে মায়ের সমস্যা হত। কারণ মা যে দিকে ধরছেন, আমি তো উল্টো ধরছি। ফলে ঘর গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। তখন মা বলতেন, ‘কেন তুই লেফ্টি হলি বল তো?’

এ ছাড়া আমি দিব্যি আছি। কোনও সমস্যা হয়নি। বরং এটা নিজের স্পেশ্যালিটি ভেবেছি। আমি তো দেখতে সুন্দর নই। কিছু তো একটা থাকতে হবে। এটাই আমার স্পেশ্যালিটি।

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস