Mangeshkar Sisters: ইতিহাসের একমাত্র ছবি, গান গেয়েছিলেন লতা-আশা-উষা, মঙ্গেশকর বোনেদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন মান্না দে!
মঙ্গেশকর কন্যারা অর্থাৎ লতা, আশা এবং উষা তিন বোনেরই এক মাত্র ছবি এটি, যেখানে তিনজনেই গান গেয়েছেন। হ্যাঁ, আর কোনও ছবি ভারতবর্ষের ইতিহাসে নেই যেখানে মঙ্গেশকর বোনেদের গান শোনা গিয়েছে।
তিনি এখন সুরের আকাশের শুকতারা! কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলেও গতরাতেই সুরসম্রাজ্ঞীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রবিবার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে প্রয়াত হন লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। প্রত্যেক ভারতবাসীর মনের গহীন কোণে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কেরিয়ারের শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে, ‘বড়ি মা’ (Badi Maa) ছবিতে গান গেয়ে। প্রথম গানেই ছাপ ফেলেছিলেন। তৈরি করে নিয়েছিলেন নিজস্ব শ্রোতাকুল। জন্ম হয়েছিল মহারাষ্ট্রে (Maharashtra)। কিন্তু গায়িকির গণ্ডিটা মরাঠি বা হিন্দি ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সব আঞ্চলিক ভাষায় পাল্লা দিয়ে গান গেয়েছিলেন তিনি। আর সেই সব আঞ্চলিক ভাষায় লতাজির শব্দোচ্চারণ শুনে তিনি যে আদতে মরাঠি, তা বোঝার জো থাকত না। এতটাই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন প্রত্যেক ভাষায় গান।
১৯৬৭ সালটা কন্নড় ছবির জন্য একটা মার্ক করা বছর ছিল। কারণ, সে বার প্রথম কোনও কন্নড় ছবিতে গান গেয়েছিলেন লতা এবং সেটিই ছিল তাঁর শেষ কন্নড় ছবির গান। ছবির নাম ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’। লক্ষ্মণ বেরালেকর, জনপ্রিয় মরাঠি সঙ্গীত পরিচালক, লতার ছোট্ট কন্নড় সঙ্গীত কেরিয়ারে ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’ ছবিতে সুর দিয়েছিলেন। লতাকে দিয়ে তিনি যে গানটি গাইয়েছিলেন, সেটি ছিল ‘বেল্লানে বেলাগায়িথু’। সেই ছবিতে লতা মঙ্গেশকর আরও একটি গান গেয়েছিলেন, যার নাম ‘এল্লারো ইরাতিরো এন্ডারে বারাতিরো’।
কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই একটি সিনেমা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর তার কারণ কি শুধুই লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া একমাত্র দুটি গান। সুরসম্রাজ্ঞীর ফিল্মি কেরিয়ারের একম-এব কন্নড় ছবি? না, আরও একটি দিক দিয়ে ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’ ছবিটি ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। মঙ্গেশকর কন্যারা অর্থাৎ লতা, আশা এবং উষা তিন বোনেরই এক মাত্র ছবি এটি, যেখানে তিনজনেই গান গেয়েছেন। হ্যাঁ, আর কোনও ছবি ভারতবর্ষের ইতিহাসে নেই যেখানে মঙ্গেশকর বোনেদের গান শোনা গিয়েছে।
দাদাসাহেব ফালকে এবং পদ্মবিভূষণে ভূষিত আশা ভোঁসলে ওই কন্নড় ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’ ছবিতে যে গানটি গেয়েছিলেন, তার নাম ‘ইয়াকো ইয়েনো সেরাগা নিল্লাভালদু’। আবার চার বোনের সবথেকে ছোট অর্থাৎ উষা মঙ্গেশকরের কণ্ঠস্বরে শোনা গিয়েছিল ওই ছবির আর এক হিট গান, ‘ইয়ারিভা নান মানা মারুলাগিসিদাভা’। লতা, আশা, উষার পাশাপাশি ৬৭-র এই কন্নড় সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকটি গেয়েছিলেন আর এক কিংবদন্তি শিল্পী, মান্না দে। ওই ছবির দুটি গান গেয়েছিলেন তিনি।
আশ্চর্যজনক ভাবে, ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’ ছবির ক্রিয়েটিভ দায়িত্বভার সামলেছিলেন যাঁরা, তাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন মরাঠি সিনেমার দিকপাল। আর তার মূল কারণ ছিলেন ছবির প্রযোজক। মিস্টার অনন্ত হিরেগোওদার মরাঠি ছবির খুব ভক্ত ছিলেন। তাঁর প্রিয় মরাঠি সিনেমা ছিল ‘ছত্রপতি শিবাজি’। আর মরাঠি ছবির প্রতি তাঁর এই অপার ভালবাসার কারণেই ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’-র ক্রিয়েটিভ ইউনিট তিনি মহারাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ছবির পরিচালক বিটি আথানিও ছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধু। তাই বিষয়টা মানিয়ে নিতে দুজনের একফোঁটাও অসুবিধা হয়নি। রেজ়াল্ট – আজও কন্নড় কেন, দেশের আঞ্চলিক ছবির জগৎে ‘ক্রান্তিবীরা সাঙ্গোলি রায়ান্না’ কাল্ট হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
আরও পড়ুন: ‘৫০- এর দশকে একটা গানের জন্য লতাজি নিতেন ৫০০ টাকা! আর আশা ভোঁসলে পেতেন মাত্র ১৫০ টাকা
আরও পড়ুন: ‘কোকিল কন্ঠীর’ প্রয়াণে দু’দিন রাষ্ট্রীয় শোক জ্ঞাপনের ঘোষণা কেন্দ্রের
আরও পড়ুন: দেবী বিসর্জনের দিনেই চলে গেলেন জীবন্ত সরস্বতী: পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী