Exclusive Jean-Luc Godard: বাংলায় তিনটি চিত্রনাট্য অনুবাদ করেছেন তাঁর, গদারের মৃত্যুতে খোলা চিঠি সঞ্জয় মুখোধ্যায়ের
Sanjay Mukhopadhyay: শুরু থেকেই গদার-প্রেমে আচ্ছন্ন ছিলেন ফিল্ম স্টাডিজ়ের অধ্যাপক সঞ্জয়। আজ তাঁর কাছে বিশেষ শোকের দিন।

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
জঁ লুক গদারের মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গে সিনেমার যুগ শেষ হয়ে গেল। যে সিনেমা লুমিয়ার ভাইরা (Lumière Brothers) তৈরি করেছিলেন, তার সর্বশেষ প্রতিনিধি এই জঁ লুক গদার। তাঁকে কেবল নবতরঙ্গের রাজদূত ভাবাও ভুল হবে। পিকাসো যেমন চিত্রকলার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছিলেন, তেমনভাবেই জঁ লুক গদার চলচ্চিত্রের ঐতিহ্যকে। ১৯৬০ সালে ‘ব্রেথলেস’ তৈরির মধ্যে দিয়ে পাল্টা সিনেমার সূচনা করেন গদার। তাঁর ‘ব্রেথলেস’, ‘মাস্কুলিন ফ্যামিনিন’, ‘টু অর থ্রি থিংস আই নো অ্যাবাউট হার’ বা অন্যান্য ছবি প্রতিমুহূর্তে তাই প্রমাণ করছিল। সিনেমাকে ভাঙতে-ভাঙতে (সিনেমা যা অনভিজাতদের জন্য অপেরা, যা নেহাতই বিনোদন এবং গল্পের বুনন) চিন্তার এক সুচারু কারুকাজ নির্মাণ করেছিলেন গদার।
আদি-যৌবনের এক সাক্ষাৎকারে গদার বলেছিলেন, “আমি তো মূলত প্রাবন্ধিক।” অর্থাৎ, তিনি প্রবন্ধে সিনেমার সমালোচনা করেন এবং সিনেমায় প্রবন্ধের সামলোচনা করেন। এই যে সমালোচনা প্রবৃত্তি, এটা আমাদের সিনেমায় ছিল না। বিশ শতকের অন্যান্য মাধ্যমগুলিতে – উপন্যাসে যেমন জেমস জয়েস, নাটকে বার্টল্ট ব্রেখট, কবিতয় টি এস ইলিয়ট – বিষয়টি ঢুকিয়েছিলেন। কেউ প্রত্যাশাও করেননি, সিনেমার মতো সাধারণ মাধ্যমে এই কাজ করা যায়। কিন্তু গদার ও তাঁর সঙ্গীরা সিনেমার গতিপথ পাল্টে দেন। এই যে আজ আমরা আধুনিক চিন্তাশীল সিনেমাকে দেখছি, সেই সিনেমার জনক তিনি।
আজ তিনি চলে গেলেন। এটা একটি মহীরুহ পতন। একে চলচ্চিত্রকারের মৃত্যু বলে না। যেমন লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে কেউ লিওনার্দো দা ভিঞি পুরোটা বলেনই না। ‘লিওলার্দো’ই বলেন। পাবলো পিকাসোকে বলেন কেবল ‘পিকাসো’। তেমনই কেবল ‘গদার’। তিনি নিজেই সিনেমা, নিজেই শিল্প। ৯১ বছর বয়সে তাঁর চলে যাওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু যাঁরা জীবনে একদিনের জন্য ক্যামেরায় লুক থ্রু করেছেন, অথবা, কোনও সিনেমা দেখে একলাইনও লেখার কথা ভেবেছেন, তাঁরা সকলেই এই সুইস-ফরাসি চিরতরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন। তিনি ইতিহাসে প্রবেশ করেছেন। তাঁকে আমাদের প্রণাম।
(বাংলায় জঁ লুক গদারের তিনটে চিত্রনাট্য অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। শুরু থেকেই গদার-প্রেমে আচ্ছন্ন ছিলেন সঞ্জয়। আজ তাঁর কাছে বিশেষ শোকের দিন।)
অনুলিখন: স্নেহা সেনগুপ্ত





