Ke Huy Quan: রিফিউজি ক্যাম্প থেকে অস্কারজয়, কে হুই কোয়ানের জীবন যেন আস্ত চিত্রনাট্য

Oscar 2023: 'এভরিথিং এভরিওয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স' ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে সেরা পুরুষ অভিনেতার অস্কার পেয়েছেন ৫২ বছর বয়সি কে হুই কোয়ান। দ্বিতীয় এশিয়ান অভিনেতা হিসেবে অস্কার পেলেন তিনি।

Ke Huy Quan: রিফিউজি ক্যাম্প থেকে অস্কারজয়, কে হুই কোয়ানের জীবন যেন আস্ত চিত্রনাট্য
কে হুই কোয়ান।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 15, 2023 | 2:00 PM

এবারের অস্কারে প্রায় ‘এভরিথিং’ (পড়ুন প্রায় সবক’টি অস্কার) ছিনিয়ে নিয়েছে আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন কমেডি ফিল্ম ‘এভরিথিং এভরিওয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’। পেয়েছে সেরা পিকচার, সেরা পার্শ্বচরিত্র (পুরুষ), সেরা অভিনেত্রী, সেরা পরিচালনা, সেরা সম্পাদনা, সেরা লেখনীর জন্য অস্কার। পুরুষ পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জিতেছেন কে হুই কোয়ান। তাঁর অস্কার জয়ের পাশাপাশি সকলে মুগ্ধ হয়েছেন কোয়ানের জীবনের গল্প শুনে। তা যে স্বয়ং একটি ছবির চিত্রনাট্য়! মঞ্চে দাঁড়িয়ে অস্কার হাতে তাঁর সেই কাহিনি বিশ্ববাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছন এই অভিনেতা। জানিয়েছেন, তাঁর জীবন শুরু হয় একটি নৌকোয়। একটি রেফিউজি ক্যাম্পে থেকেছিলেন একবছর। সেই সময়টি থেকে আজকের অস্কারের মঞ্চে তাঁর দাঁড়িয়ে পুরস্কৃত হওয়া – এ যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কোয়ান।

কোয়ানের বয়ানে:

“একটা সময় জীবন আমাকে রেফিউজি (পড়ুন উদ্বাস্তু) বানিয়ে রেখেছিল। আমার মাথার উপর ছাদের স্থায়িত্ব ছিল না। অনিশ্চিত জীবন ছিল। কিন্তু আজ আমি বিশ্বাস করি এমন প্রতিকূলতা থেকেই মানুষ অস্কার, অলিম্পিক পদক কিংবা নোবেল পুরস্কারও পেতে পারেন। তাই হাল না ছেড়ে আরও একবার ভাবুন। আমি এই অস্কার আমার স্ত্রী ইকোকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনিই আমাকে ২০ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বলে গিয়েছিলেন, একটা দিন আসবেই যেদিন আমি এই ভাবে আপনাদের সামনে অস্কার হাতে দাঁড়িয়ে থাকব। স্বপ্ন দেখলে, তা সত্যি করায় বিশ্বাস করতে হয়। আমি হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম প্রায়…”

ইউনাইটেড নেশনের হাই কমিশনার ফর রেফিউজিস (UNHCR)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩২ মিলিয়ান উদ্বাস্তু আছেন গোটা বিশ্বে। তাঁদের মধ্যে ৪.৯ মিলিয়ান উদ্বাস্তু বাসস্থানের খোঁজ করছেন। কোয়ানের জীবনযুদ্ধ, ভারতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জীবন সংগ্রাম যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ এ ক্ষেত্রে।

কোয়ানের জীবনযাত্রা:

১৯৭১ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভিয়েতনামে জন্ম হয় অভিনেতা কে হুই কোয়ানের। তাঁরা তখন ৯জন ভাই-বোন। ১৯৭৮ সালে কোয়ানের গোটা পরিবারই পালিয়ে আসে সাইগনে। সেখানে তাঁদের জীবন শুরু হয় নৌকোয়। কোয়ান হোয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। এটা এটি চিন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ভিয়েতনামের সংখ্যাগরিষ্ঠরা নিপীড়িন চালায় তাঁদের উপর। সেই সময় হোয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই ভিয়েতনাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট-ছোট নৌকোয় ঠাঁই নিয়েছিলেন। সামুদ্রিক ঝড়, জলদস্যুদের আক্রমনের সম্মুখীন হয় সেই সব ছোট নৌকো। ঠিক যেমন ঘটেছিল সিরিয়ায়। সেখানকার নিপীড়িত মানুষও ছোট-ছোট নৌকোয় পালিয়ে গ্রিসে কিংবা ইতালিতে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন।

এভাবে পালিয়েই কোয়ানের মা এবং আরও তিন ভাই-বোন মালেশিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। কোয়ান, তাঁর বাবা এবং পাঁচ ভাই-বোন পৌঁছেছিলেন হংকংয়ে। আর ৮ লক্ষ উদ্বাস্তুর মতো তাঁদের পালিয়ে আসাও সফল হয়েছিল সেই সময়। ইউনাইটেড নেশনের হাই কমিশনার ফর রেফিউজিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২ থেকে ৪ লক্ষ উদ্বাস্তু সেই বার সমুদ্রেই মারা গিয়েছিলেন।

গোটা এক বছর কোয়ান পরিবার বিভিন্ন রেফিউজি ক্যাম্পে থাকতে শুরু করে। সেই ক্যাম্পগুলিতে অনেক মানুষ একসঙ্গে বসবাস করত। দুর্বল স্বাস্থ্য়ব্য়বস্থা এবং অল্প পরিমাণ রেশন পেতেন তাঁরা। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঠিক করে উদ্বাস্তুদের তাঁদের দেশে ঠাঁই দেবে। এবং সেই ভাবেই ক্যালিফোর্নিয়ায় ফের মিলিত হয় হোয়ান পরিবার। অভিনয় জগতেও পা রাখেন হোয়ান। শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’, ‘দ্য টেম্পল অফ ডুমস’-এ।

আর একটু বড় হতেই আরও বেশি অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন কোয়ান। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, এশিয়ার মানুষদের হলিউডে অভিনয় করার সুযোগ বেশি নেই। একটা সময় সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন হোয়ান। বহু ছবিতে স্টান্ট কোরিওগ্রাফার এবং সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে আসে জীবনের মোড় ঘোরানো চরিত্র – ‘এভরিথিং এভরিওয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব। এবং আজ তিনি অস্কার জয়ী!