Lata Mangeshkar: বকুনি শুনে অভিমানে জীবনে ২ দিনের বেশি স্কুলে যাননি লতা

Lata Mangeshkar: অল্প বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে এসে পড়ায় নিজের জীবনের শখ আহ্লাদ পূরণ করা হয়নি লতার। শখ ছিল একটা রেডিও কেনার, কিন্তু তাও কিনতে পারেননি বহুদিন পর্যন্ত। দীনানাথের কড়া নির্দেশ ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়া মেয়ে আর কিছু শুনতে পারবেন না। তবে কেএল সায়গলের গান শোনার অনুমতি ছিল শুধুমাত্র।

Lata Mangeshkar: বকুনি শুনে অভিমানে জীবনে ২ দিনের বেশি স্কুলে যাননি লতা
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 06, 2022 | 8:45 PM

ছেলেবেলা থাকে গান শিখলেও গানের ক্ষেত্রে তেমন কোনও উন্নতির লক্ষ্মণ ছিল না মেয়েটির মধ্যে। অথচ গানের পরিবারেই তাঁর জন্ম। বাবা বাড়িতে গান শেখান ছাত্রছাত্রীদের। একদিন গান শেখাতে শেখাতে কোনও কাজ আসায় মেয়েটির বাবাকে যেতে হল বাড়ির বাইরে। এক ছাত্রকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন রেওয়াজ যেনো ঠিকঠাক চলে, তিনি খানিক পরেই ফিরে আসবেন। কিছুক্ষণ পর যখন বাবা বাড়ি ফিরলেন দেখলেন মেয়েটি ওই ছাত্রটির রাগ শুধরে দিচ্ছে। তিনি আর কেউ নন সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। আর তাঁর বাবার নাম দীনানাথ মঙ্গেশকর।  

মারাঠিতে গীতিনাটক, গান লিখতেন দীনানাথ। ছেলেবেলা থেকেই বাবার নাটকে ছোট ছোট পার্ট পেতেন লতা। একবার বাবারই এক নাটকে নারদমুনীর চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা কোনও কারণে অনুপস্থিত হন। বাবার কাছে লতা আব্দার করেন ওই চরিত্রে অভিনয় করবেন। কিন্তু আব্দার শোনা মাত্রই বাতিল করলেন দীনানাথ। কিন্তু নাছোড় লতায় শেষমেশ রাজিও হতে হলে স্নেহময় বাবা। অভিনয় করলেন লতা, শুধু তাই নয় গানও গাইলেন তিনি, আর দর্শক অভিনয় আর গান শুনে এতটাই খুশি যে ফের তারা লতার গান আর অভিনয় করার দাবি জানাতে থাকেন।

খুব বেশিদিন বাঁচেননি দীনানাথ। লতার মাত্র ১৩ বছর বয়সেই প্রয়াত হন তিনি। বড় সংসারের বোঝা এসে পড়ে লতার ছোট্ট ঘাড়ে। সেই সময়ই পাশে এসে দাঁড়ালেন পারিবারিক বন্ধু তথা নবযুগ চিত্রপট সিনেমার মালিক বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকী। লতাকে তিনি গান আর অভিনয় শিখিয়ে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেন মারাঠি সিনেমাতে। কিন্তু একটি মারাঠি সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগও পেলেন কিন্তু লতার গাওয়া ‘খেলু সারি মানি হাউস ভারি’ গানটি শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে গেল। তাতেও হতাশ হননি লতা মঙ্গেশকর। মাঝে মাঝেই তিনি সিনেমায় অভিনয় আর গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন। তবে সিনেমায় অভিনয় করতে খুব একটা ভাল লাগত না লতার। কিন্তু ভাল না লাগলেও কিছু করার নেই, গোটা পরিবারের দায়িত্ব যে তাঁর কাঁধে। প্রথম ছায়াছবির গান হিসেবে বসন্ত যুগলকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে ‘পা লাগো কার জোরি’ গানটি গান লতা মঙ্গেশকর।

মঙ্গেশকর পরিবারের বন্ধু বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকী দীনানাথের পর লতার সঙ্গীতগুরু ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর লতার সঙ্গীত গুরু হন গুলাম হায়দার। নিজের ৮৪ তম জন্মদিনে লতা বলেছিলেন, তাঁর জীবনে গডফাদার ছিলেন গুলাম হায়দার। গুলামের হাত ধরেই লতা সুযোগ পান মজবুর’ (১৯৪৮) ছায়াছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহি কা না ছোড়া’ গানটি গাওয়ার। তবে লতার জীবনে প্রথম হিট গান ‘মহল’ (১৯৪৯) চলচ্চিত্রের ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটি। লতার এই গানে লিপ দিয়েছিলেন মধুবালা।

মাত্র তিন বছর বয়সে তৎকালীন বোম্বে এবং আধুনা মুম্বইতে পা রেখেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এখানকারই একটি স্কুলে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু তাঁর স্কুল জীবন ছিল মাত্র দুদিনের। কারণ প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ায় এক শিক্ষক তাঁকে হাতে ধরে লেখা শিখিয়েছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয়দিন লতা বোন আশা ভোঁসলেকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যান। যা দেখে রেগে যান ওই শিক্ষক। প্রচণ্ড বকাবকি করেন লতাকে। ব্যস খারাপ লাগে লতার, অভিমান হয় প্রচণ্ড, তৃতীয় দিন থেকে আর স্কুলমুখো হননি সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী। বাড়িতে থেকেই চালান পড়াশোনা।

নিজের কয়েক দশক ধরে চলা সঙ্গীত জীবনে নিজের গান শুনতেন না লতাজি। কারণ নিজের গান শুনলে নাকি তাঁর মন খারাপ হবে। মনে হবে গানটি ঠিক মতো গাননি, অন্যভাবে গাওয়া যেত। নিজের মোট ৭৫ বছরের সঙ্গীত কেরিয়ারে মাত্র হাতে গোনা তিন চারদিনই লতা মঙ্গেশকর কল টাইমে সময়ে পৌঁছতে পারেননি। দেরী হওয়ার কারণও শেষদিন পর্যন্ত মনে ছিল তাঁর। নিজেই বলতেন সে কথা। সারা জীবনে কখনও স্টুডিয়োতে গিয়ে চেয়ারে বসে গান রেকর্ড করেননি এই সঙ্গীত ডিভা। তাঁর মত ছিল গান দাঁড়িয়েই গাইতে হয়। আর রেকর্ডিংয়ে গিয়ে কিছুই খেতেন না তিনি, শুধু কয়েক কাপ চা ছাড়া।

অল্প বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে এসে পড়ায় নিজের জীবনের শখ আহ্লাদ পূরণ করা হয়নি লতার। শখ ছিল একটা রেডিও কেনার, কিন্তু তাও কিনতে পারেননি বহুদিন পর্যন্ত। দীনানাথের কড়া নির্দেশ ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়া মেয়ে আর কিছু শুনতে পারবেন না। তবে কেএল সায়গলের গান শোনার অনুমতি ছিল শুধুমাত্র। সায়গলের অসম্ভব ভক্ত ছিলেন লতা। নিজের জীবনের প্রথম রেডিয়ো লতা কিনেছিলেন দীনানাথের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৮ জানুয়ারি ১৯৪৭ সালে। সেই সময় লতার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস, রেডিয়ো কিনে বাড়িতে এসে যখন রেডিও অন করলেন, তখনই রেডিওতে প্রথম ঘোষণা শুনলেন সায়গলের মৃত্যু সংবাদ। রাগে দুঃখে লতা তৎক্ষণাৎ রেডিওটি দোকানে গিয়ে ফেরত দিয়ে এলেন।

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা