Interview: বাজেট থাকার কারণে বলিউডের লাক্সারি অব টাইম থাকে, যা টলিউডের নেই: রুক্মিণী মৈত্র
Interview: কনিষ্ক ভার্মার পরিচালনায় বিদ্যুৎ জামালের সঙ্গে ‘সনক’-এর সৌজন্যে বলিউড ডেবিউ করে ফেললেন রুক্মিণী মৈত্র। টলিউডে কেরিয়ার শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যেই বলিউডের প্রথম ছবি। কেমন সেই অভিজ্ঞতা? TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অভিনেত্রী।
কনিষ্ক ভার্মার পরিচালনায় বিদ্যুৎ জামালের সঙ্গে ‘সনক’-এর সৌজন্যে বলিউড ডেবিউ করে ফেললেন রুক্মিণী মৈত্র। টলিউডে কেরিয়ার শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যেই বলিউডের প্রথম ছবি। কেমন সেই অভিজ্ঞতা? TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অভিনেত্রী।
১৫ অক্টোবর ডিজ়নি হটস্টারে রিলিজ় করেছে আপনার বলিউড ডেবিউ ‘সনক’। এখনও পর্যন্ত রেসপন্স কেমন পাচ্ছেন?
ওভারহোয়েলমিং রেসপন্স পাচ্ছি। সিনেমা রিলিজ় হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত কোনও নার্ভাসনেস ছিল না। প্রোমোশনের সময় একেবারেই নার্ভাস ছিলাম না। ঠিক রিলিজ় হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে অদ্ভুত নার্ভাস লাগতে থাকে। কারণ এই ওটিটির বলগেমটা বোঝার জন্য যা-যা দরকার, সেটা জানতাম না। সিনেমাটা ভাল নাকি খারাপ, সেটা ওটিটিতে পুরোটাই অডিয়েন্স আর ভিউয়ারশিপের উপর নির্ভরশীল। ১৫ তারিখ রিলিজ় করেছে, এখনও পর্যন্ত রেসপন্স খুব ভাল।
কলকাতায় তো সকলে আপনার বলিউড ডেবিউ দেখার জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন?
অফকোর্স। দেখুন, এটা একটা অ্যাকশন ছবি। অ্যাকশন হ্যাজ় বিন অ্যাপ্রিশিয়েটেড। আর আমাদের এখানে সকলে তো আমার পারফরম্যান্স দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেনই। কেমন ভাবে লঞ্চ হবে আমার, কী রূপে দেখবেন…। যেহেতু আমি পারফরম্যান্সকেই সামনে রাখি সব সময়, এখানেও সেটা ছিল। প্রচুর প্রশংসা পাচ্ছি। মুম্বই থেকে প্রচুর ফোন পেয়েছি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বহু মানুষ ফোন করেছেন। আমি যে সময়টা এই মুহূর্তে দেখছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
টলিউডে চার বছর কাজ করলেন…
তার মধ্যে দু’বছর কনসিডার করা হবে কি? কোভিডেই তো কেটে গেল… (হাসি)।
তা অবশ্য ঠিকই। এ বার বলিউডে কাজ করলেন। দু’টো ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধরনে কী-কী পার্থক্য দেখলেন?
বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যতটুকু সামনে থেকে দেখেছি, আর হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমবার যতটুকু দেখলাম, প্রথম পার্থক্য অবশ্যই ভাষা। দু’টো ইন্ডাস্ট্রিই নিজের মতো নিজের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সকলে নিজের প্যাশন নিয়ে লড়ছে। সকলে নিজের দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাজেট পার্থক্য করে দেয়। বাজেটের কারণেই পার্থক্য তৈরি হয়।
আপনার অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন…
এখানে এক-একটা ছবি ১৫-১৬ দিনেও শুট হয়। যদিও ‘কিশমিশ’ ৩০ দিনে শুট করলাম। দিন-দিন আরও শুটিংয়ের ক্ষেত্রে দিনের সংখ্যা কমছে। আরও স্ট্রিক্ট বাজেটে আমরা কাজ করছি। ওখানে প্রায় ৯০ দিন ধরে ‘সনক’-এ আমি শুট করলাম। তারও বেশি হবে বোধহয়। আমি বলব না, বাংলা এবং হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে প্রফেশনালিজমের পার্থক্য। যেহেতু বাজেট বেশি থাকে, তাই ওরা অনেক বেশি প্ল্যান করার অ্যালাওয়েন্স পেয়ে যায়। ধরে-ধরে ছোট-ছোট জিনিসের প্রতি সময় দিতে পারে। প্রি-প্রোডাকশন অনেক সময় ধরে হয়। এখানে অ্যাকশন ছবি করার ক্ষেত্রে আমাকে অন শট বলা হয়, ‘তোমাকে এখানে লাফাতে হবে। তারপর দৌড়তে হবে। তারপর বন্দুক দিয়ে মারতে হবে।’ কিন্তু আমার ১০-১৫ সেকেন্ডের একটা অ্যাকশন সিনের জন্য ওখানে আমি ১৫ দিন ধরে রিহার্স করেছি। একটাই মুভ ক্রমাগত অভ্যেস করে গিয়েছি। যাতে অনসেট দেখতে ক্লিন লাগে। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক থাকে। আমার বা যার সঙ্গে পারফর্ম করছি, কারও চোট না লাগে। বাজেট থাকার কারণে এই লাক্সারি অব টাইম ওদের কাছে থাকে। তবে আরও একটা কথা বলব, যে মানুষ কলকাতায় দক্ষ ভাবে কাজ করেছে, সে পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় কাজ করতে পারবে। কিন্তু পৃথিবীর যে কোনও মানুষ কলকাতায় কাজ করতে পারবে না। কলকাতা বেসটা এতটাই স্ট্রং করে দেয়, যেখানে ফেলবে সেখানেই অ্যাডপ্ট করে নিতে পারবে।
দেবের প্রোডাকশনে ছাড়া আর অন্য প্রোডাকশনে কাজ করবেন কি না, এই প্রশ্ন আর নিশ্চয়ই শুনতে হয় না আপনাকে?
হা হা হা…। আমি ‘সুইৎজারল্যান্ড’ করার পরেও লোকে জিজ্ঞেস করছে, তা হলে তো আর দেব এন্টারটেনমেন্টে কাজ করবেই না? এখন ‘সনক’ করার পর লোকে ভাবছে, এ বার তো আর করবেই না। লোকে কী ভাবছে সেটা আমি ভাবলে, তা হলে সেটা আর আমার লাইফ হবে না। আমি সত্যিই কোনও প্ল্যান করে কিছু করিনি। সব সময়ই বলতাম, প্রজেক্ট পছন্দ হলে দেবের প্রোডাকশনের বাইরেও কাজ করব।
‘সনক’-এর পরে নিশ্চয়ই প্রচুর অফার আসছে?
মুম্বই থেকে বেশ কিছু অফার এসেছে। ছবি এবং ওয়েব দু’টোই। যদিও ওয়েব নিয়ে আমি এখনই খুব বেশি এগোতে চাই না। আরও কিছুদিন সিনেমাটাই করতে চাই। সিনেমার সঙ্গে সঙ্গে দারুণ ওয়েব সিরিজ এলে করব। কলকাতাতেও অনেকগুলো স্ক্রিপ্ট শুনেছি। কিন্তু এখনও মনের মতো স্ক্রিপ্ট পাচ্ছি না। নিজে দেখতে চাই, এমন সিনেমা এখন সত্যিই পাচ্ছি না। আমি কোয়ালিটিতে কাজ করতে চাই সব সময়। কোয়ান্টিটিতে নয়।
‘সনক’-এর অফার কী ভাবে এসেছিল?
বলিউডে প্রথমে স্ক্রিপ্ট রিডিং হয় না। ওখানে কনসেপ্ট বলা হয়। জানতে চায় ইন্টারেস্টেড কি না। তারপর স্ক্রিপ্ট। ‘সনক’-ও সে ভাবেই হয়েছিল। আমাকে আগে কনসেপ্ট শুনিয়েছিল। তারপর কাস্টিং ডিসকাস করে। কনসেপ্ট শুনে আমি রাজি হওয়ার পর স্ক্রিপ্ট রিডিং হয়েছিল।
ডেবিউ হিসেবে এই ছবিটা বেছে নিলেন কেন?
জীবনে একটা অ্যাকশন ছবি করতে চেয়েছিলাম। একটা অ্যাকশন ছবির সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে থাকুক, এটা চেয়েছিলাম। বিপুল শাহ, বিদ্যুৎ জামাল বেস্ট। ২০২১-এর অ্যাকশন ছবি যদি কেউ দেখতে চান, ‘সনক’ দেখবেনই। সে কারণেই ‘সনক’ করেছি।
দেব ‘সনক’ দেখে কী বললেন?
দেব দেখেছে সিনেমাটা। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি, দেবের টুইট চারিদিকে। প্রাউড অফ ইউ…। ও গর্বিত। তা ছাড়া ও বলেছে, ‘আমার-তোমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাদ দিয়ে আমি খুব খুশি একটা বাঙালি মেয়ে এটা করেছে।’ ও আমাকে লঞ্চ করেছিল। সে জন্য আরও বেশি খুশি। ওর কথা হল, ‘আমি যে ঘোড়ার উপর টাকা লাগিয়েছিলাম, সে যে রেস জিতছে, এটা দেখে আমার ভাল লাগছে।’ ক্রিটিকের থেকেও বেশি দেব আমার মেন্টর। দেবের বলাতেই আমি অভিনয় করতে এসেছি। ফলে ওর কোথাও একটা দায়িত্বও আছে। ‘সনক’-এর অফারও যখন এল আমার কাছে তখনও করব কি না, নিশ্চিত ছিলাম না। ভাবছিলাম। আমার মা আর দাদার পর দেবই বলেছিল তোমার এটা করা উচিত। কমপ্লিট প্যাকেজ হিসেবে এই লঞ্চটা খুবই ভাল ছিল। এত বড় প্রোডাকশন হাউজ। গানেও গ্ল্যামারাস অবতার। আবার এমন চরিত্র, যেখানে পারফরম্যান্সের সুযোগ রয়েছে।
‘সনক’-এ কাজ করে নতুন কী শিখলেন?
এখানে পরিচালকেরা ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেন প্রত্যেকটা সিনের আগে। কিন্তু ওখানে এই পদ্ধতিটাই ফলো করা হয় না। অন্তত আমি যে ছবিটা করেছি, সেখানে এটা ফলো করা হয়নি। ওরা ছেড়ে দেয় আর্টিস্টকে। বলে, তুমি তোমার মতো করো। আমি মাঝেমধ্যে আমার পরিচালককে জিজ্ঞেস করতাম, ‘তুমি ইনস্ট্রাকশন দেবে না?’ ও বলত, ‘না। তুমি ভালই করছো। উই আর হ্যাপি।’ এই ছোট-ছোট ব্যাপারগুলোও থাকে।
আপনি নতুন যা শিখলেন, টলিউডে কাজ করতে গিয়ে সেগুলো নিশ্চয়ই শেয়ার করবেন?
প্রোডাকশন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে—যেমন মুম্বইতে আমাদের কল শিটের একটা ফর্ম্যাট ছিল। পরের পাঁচদিনের কল শিট চলে আসত। এতে আর্টিস্টদের বুঝতে সুবিধে হত। আমার কবে কী আছে, বোঝা যেত। প্ল্যান করা যেত। ‘কিশমিশ’-এ যখন অনসম্বল কাস্ট নিয়ে কাজ হল, আমি পরিচালক রাহুলকে ওটা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘এমন ভাবে করো, যাতে কোনও সিনিয়র আর্টিস্টকে সেটে এসে বসে না-থাকতে হয়।’ তাতে সকলেরই লস অব এনার্জি হয়। কারও সময় যাতে নষ্ট না হয়।
‘সনক’-এর শুটিংয়ের সময় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, কঠিন সময় পেরিয়ে এখন সাফল্যের দিন…
সত্যি। খুব কঠিন সময় গিয়েছে। মা সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে বিএমসি থেকে ফোন করেছিল আমাকে। লীলাবতীতে ভর্তি করা হয়েছিল আমাকে। মাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের টেস্ট করিয়ে দিল্লিতে দাদার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালে সাত-আটদিন খুব কঠিন সময় গিয়েছে। অচেনা শহরে… নিজের শহরে যেখানেই থাকি আমার মনে হয় আমি রাজা। যদিও প্রোডাকশন আমাকে খুবই কমফর্টেবল ফিল করিয়েছে। এখন যদি কিছু হয়, আমি জানি মুম্বইতেও আমার পরিবার আছে।
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
আরও পড়ুন, Koneenica Banerjee: ‘আয় তবে সহচরী’র হাত ধরে মিলে গেল কনীনিকার অতীত এবং বর্তমান!