Manoj Bajpayee: ‘সেন্সর হলে ওটিটি ধ্বংস হয়ে যাবে’, KIFF-এ ‘ক্লাস’ নিতে এসে বিস্ফোরক মনোজ বাজপেয়ী

Kolkata Film Festival 2023: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আঙিনায় সিনেমা নিয়ে মাস্টারক্লাস নিলেন ‘সত্যা’র ভিকু মাত্রে। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘জোরাম’-ও দেখার অনুরোধ জানালেন কলকাতাবাসীকে। এরই মাঝে সাক্ষাৎকারে উঠে এল বেশ কিছু বিষয়।

Manoj Bajpayee: ‘সেন্সর হলে ওটিটি ধ্বংস হয়ে যাবে’, KIFF-এ ‘ক্লাস’ নিতে এসে বিস্ফোরক মনোজ বাজপেয়ী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 12, 2023 | 9:27 PM

‘ফ্যামিলি ম্যান’ মনোজ বাজপেয়ী হাজির কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। কলকাতার সিনেপ্রেমীদের জন্য তিনি খালি হাতে আসেননি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আঙিনায় সিনেমা নিয়ে মাস্টারক্লাস নিলেন ‘সত্যা’র ভিকু মাত্রে। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘জোরাম’-ও দেখার অনুরোধ জানালেন কলকাতাবাসীকে। এরই মাঝে সাক্ষাৎকারে উঠে এল বেশ কিছু বিষয়। মনোজ তাঁর এনএসডি (NSD)-র দিনগুলো মনে করে খুবই উৎসাহিত হয়ে উঠলেন। সেই সঙ্গে হয়ে পড়লেন নস্ট্যালজিক। তিনি বলেন, “দিল্লির এনএসডি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বাইরে এসে লড়াই করার সাহস তৈরি করে দিয়েছে। এখনও আমি মাঝেমধ্যে অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার সুযোগ পাই। অনেক সময় আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ পাই সেখানকার পড়ুয়াদের সঙ্গে। আমার থেকে সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনারও সুযোগ ঘটে। তবে এটা হলফ করে বলতে পারি, যতবার যাই, শুধু ঋদ্ধ হয়েই ফিরে আসি। আমরা ভাগ্যবান যে, এই রকম অ্যাকাডেমি আমাদের দেশে আছে।” এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর কণ্টে ঝরে পড়ে আক্ষেপ, “মন খারাপও হয় এটা দেখে যে, আমরা এই অ্যাকাডেমির সেভাবে যত্ন করতে পারি না। খুব অবহেলিত হয়।”

এরপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়: কয়েক দশক ধরে তিনি অভিনয় করছেন, ভারতীয় ছবিতে মহিলাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না কেন? উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট সম্পর্কে তাঁর কী ধারণা, এই প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা জানালেন, বাড়িতে তিনি দেখেছেন তাঁর মা শুধু সংসারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলেই নিতেন না, সঙ্গে সংসারের সবকিছু নির্ধারণের ক্ষমতাও তাঁর হাতেই ছিল। মনোজের কথায়, “আর বাবাকে দেখেছি মায়ের কথাকে মান্যতা দিতে।” তাই মনোজের মতে, তিনি নিজের বাড়িতেই দেখেছেন উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের জীবন্ত রূপ। তাই তিনি মনেপ্রাণে চান নারীরা সবক্ষেত্রেই সমানাধিকারের অধিকারী হোক। তিনি আরও যোগ করেন, সমান অধিকার বোঝানোর জন্য কোনও ‘ইজ়ম’ ফলো করার প্রয়োজন নেই।

বাংলায় এসেছেন, তবে বাংলা ছবি কি দেখেছেন মনোজ বাজপেয়ী? উত্তরে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ সময় আমি যদি ছবি দেখি তাহলে সেই ছবি মূলত হয় বাংলা, মালায়ালি, তামিল ও তেলুগু। এই ছবিগুলি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দি ছবি খুব কমই দেখা নয়। বাংলার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক দেখে বড় হয়েছি। এঁরা যা করে গিয়েছেন, সেই সৃষ্টি দেখেই উৎসাহিত হই।” ওটিটি আসায় কী সুবিধা হয়েছে, জানতে চাইলে তাঁর উত্তর, “লকডাউনের সময় ওটিটি দেখার সুযোগ হয়েছে দর্শকদের। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ভাষার ওটিটি মাধ্যম থেকে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী আর কলাকুশলীরা উঠে আসছেন।”

ওটিটিতে কি সেন্সর থাকা উচিত? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ব্যাখ্যা করে বললেন, “সেন্সর হলে ওটিটি ধ্বংস হয়ে যাবে। কোনও একটা মাধ্যমে থাকতেই হবে যেখানে পরিচালক মন খুলে কাজ করতে পারেন। প্রথম দিকে আমরা দেখেছি ভুরি-ভুরি ভায়োলেন্স আর সেক্স দেখানো হত। তবে যতদিন এগোচ্ছে, ততই দেখা যাচ্ছে যে, পরিচালকরা দায়িত্ববান হচ্ছেন। তাই প্রয়োজন না হলে নতুন কনটেন্টের ক্ষেত্রে পরিচালকরা সেক্স বা ভায়োলেন্ আর সেভাবে ব্যবহার করেন না। আসলে পরিচালকরা যথেষ্ট ক্রিয়েটিভ ও বুদ্ধিমান। তাই নিজেদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েই ওটিটি পরিচালনা করছেন এবং করবেনও।”

ওটিটির প্রসঙ্গ আসতেই তাঁকে ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর পরবর্তী সিজ়ন নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, “আর বেশি দেরি নেই। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর তৃতীয় সিজ়নের শুটিংয়ের কাজ শুরু হবে। আর সব ঠিক থাকলে ২০২৫-এই ‘ফ্যামিলি ম্যান’ দেখা যাবে।”

আরও একটি প্রশ্ন করা হয় অভিনেতাকে: গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওটিটিকে সংযোজন করা হয়েছে, কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও কি ওটিটিকে যুক্ত করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রত্যেক চলচ্চিত্র উৎসবের নিজস্ব কিছু চরিত্র থাকে; সেটা একমাত্র তাঁদেরই (এক্ষেত্রে উৎসব কমিটিকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি) নির্বাচন করার অধিকার আছে যে, তারা ওটিটি সংযোজন করবে কি না। ‘বলিউড’ শব্দটাকে অপছন্দ করেন অভিনেতা। তিনি বলেন, “কে এই ‘বলিউড’ নামকরণ করেছেন জানি না। তবে আমাদের বহু লিগ্যাসি আছে। তাই ‘হিন্দি ছবি’ বলতেই পছন্দ করি।” তাঁর সংযোজন, “যখন অমিতাভ বচ্চন মেইনস্ট্রিম ছবি করতেন, তখনও দেখা যেত প্রতিটি চরিত্র ছিল সমাজের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত, সমাজের প্রতিনিধিত্ব করত। তবে যতদিন গিয়েছে, সেই হিরোদের আমরা হারিয়েছি। এখন সব হিরোরা গ্রীক গডের মত দেখতে।” ‘জোরাম’ দেখার অনুরোধ জানিয়ে মনোজ বলেন, “এই ছবিটি দেখতে অনুরোধ করব। সমাজ কোন ছবি দেখবে, সেটা দর্শকদেরই নির্ধারণ করতে হবে। তাঁরা যে ছবি দেখবেন, সেই ছবিই তৈরি হবে। আর সিনেমা যদি সমাজকে প্রভাবিত, করত তাহলে এতদিনে যত ভাল ছবি হয়েছে, তাতে সমাজে কোনও অন্যায়ই থাকত না।”