Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

World Cancer Day-Aindrila Sharma-Sabyasachi Chowdhury: ‘আমার যখন চুল উঠে টাক হয়েছিল, সব্যসাচী সেই টাকেই চুমু খেত…’

দু-দু'বার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। দু'বারই হারিয়েছেন মারণরোগকে। তাঁর কঠিন সংগ্রামে পাশে পেয়েছেন প্রেমিক ও অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীকে। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে TV9 বাংলা তুলে ধরল এক যোদ্ধার লড়াইয়ের কথা। ঐন্দ্রিলা হয়ে উঠেছেন অনেকের মনের ভরসা।

World Cancer Day-Aindrila Sharma-Sabyasachi Chowdhury: 'আমার যখন চুল উঠে টাক হয়েছিল, সব্যসাচী সেই টাকেই চুমু খেত...'
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।
Follow Us:
| Updated on: Feb 04, 2022 | 2:20 PM

রাস্তা দিয়ে হাত ধরে যেতে-যেতে সুন্দরী মেয়েটি জিজ্ঞেস করেছিল, “আচ্ছা তুমি আমাকে কতখানি ভালবাসো?” প্রেমিক ছেলেটির উত্তর, “অ-নে-এ-এ-এ-ক-টা।” হঠাৎ চুপ থেকে মেয়েটি ফের প্রশ্ন করে, “আমি যদি সুন্দর না থাকি, আমাকে ভালবাসবে?” ছেলেটি মাথা নেড়ে বলেছিল, “হ্যাঁ।” বাস্তবে সেই ‘হ্যাঁ’কে ‘না’ হতে দেখেছেন অনেক প্রেমিকা। কথায় যা শুনতে ভাল লাগে, কর্মে পরিচয় দিতে গেলে আকাশ-জমির ফারাক! সেই ফারাক মিলিয়ে দিয়েছেন দু’টি মানুষ। সব্যসাচী চৌধুরী ও ঐন্দ্রিলা শর্মা। প্রেমিকার ক্যান্সার, প্রেমিকও এক আত্মা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রেমিকার ‘একাকী’ লড়াইয়ে। কে বলে মানুষ বড়ই একা! একা এসেছ যখন, একাই যাবে ভুবন ছেড়ে। কে বলে? এক আত্মা, এক প্রাণ… একই কষ্টে জর্জরিত মানুষ… এক অসম্ভব সুন্দর যাত্রার কথা হোক আজ, বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে।

মেয়েটির বয়স অল্প। সিরিয়ালে অভিনয় করেন – ঐন্দ্রিলা শর্মা। ছেলেটিও অভিনেতা। বিগত কয়েক বছর ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’ হিসেবেই তাঁকে চিনেছেন দর্শক – সব্যসাচী চৌধুরী। গত বছরের ঘটনা। হঠাৎই জানা যায় ফুসফুসে ক্যান্সার রোগ বাসা বেঁধে বসে আছে ঐন্দ্রিলার। ক্যান্সারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার আলাপ হয় তাঁর। ফলে লড়াই অচেনা নয়।। শুরুতে চিকিৎসা করাতে চাননি। কিন্তু করাতে হয়েছে। কারণ, চারপাশের মানুষগুলো যে বড্ড ভালবাসে তাঁকে। তাই চিকিৎসা শুরু হয়। সর্বদা সেজেগুজে থাকা অভিনেত্রীর চেহারা পালটাতে থাকে। কিন্তু পালটাননি প্রেমিক সব্যসাচী। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর প্রেম। অনেকটা তাঁর কারণেই মনে জোর পেয়েছেন ঐন্দ্রিলা। লড়াইয়ে জিতেছেন। ক্যান্সারকে হারাতে পেরেছেন। সবটা কী ভাবে সম্ভব হল, TV9 বাংলাকে একান্তভাবে জানিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। সব্যসাচীকে যোগাযোগ করা হলে, ঈষৎ লাজুক সুরে অভিনেতা বলেছেন, “ওঁরই তো লড়াই, ওই বলুক।”

কেমন আছ ঐন্দ্রিলা?

অনেক বড় একটা যুদ্ধ ছিল। লড়াইয়ের পর কোপ আপ করা কঠিন। শারীরিক শক্তি থাকে না। মন থেকে চাইলেও শরীরের জোর ফিরে পেতে সময় লাগে। আমার তো সবে একমাস হল চিকিৎসা শেষ হয়েছে।

এখন তো বিশ্রামে থাকতে হবে…

ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেয়েছি। আগের মতো এনার্জি এখনও আমার আসেনি। ৫-৬ মাস কিংবা একবছর সময় লাগবে। কিন্তু মানসিক ভাবে অনেকটাই ভাল আছি এখন।

সব্যসাচীর পোস্ট থেকেই জেনেছি তুমি নাকি ‘বিগ বস’ ভালবাসো?

(গলায় আনন্দ) তেজস্বী জিতেছে দেখলে তো। করণ-তেজস্বীর মধ্যে প্রেমও আছে। কিন্তু আমার মনে হত তেজস্বীই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে। করণ ততটা পারেনি। মাঝেমধ্যে মনে হত করণের নেচার ডমিনেটিং। তাই তেজস্বী জিতেছে বলে আমি বেশ খুশিই হয়েছি।

বাংলায় ‘বিগ বস’ ফের শুরু হলে অংশ নিতে চাইবে?

আমি যে চ্যানেলের হয়ে কাজ করি, ওরাই তো বিগ বস করত। কথাও হয়েছিল, তৃতীয় সিজ়ন আসতে পারে। জানো, আমার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। হলে নিশ্চয়ই অংশ নেব।

তোমার কাছের মানুষ সব্যসাচীর ব্যাপারে কী বলবে?

আমার জার্নির পুরোটাই ওর জার্নি ছিল। আমার যা হয়েছিল, সেটা একা-একা লড়াই করা প্রায় অসম্ভবই বলব। সব্যসাচীকে সকলে এতখানি বাহবা দেয়, কারণ অন্য মানুষদের সকলে এই সময়গুলোয় পাশে থাকে না। এই ধরনের অসুখ হলে অনেকেই ছেড়ে চলে যায়।

কিন্তু সব্যসাচী বলেছে, পাশে থাকাটাই স্বাভাবিক, সেটা নিয়ে আলোচনা হলে ও কুণ্ঠাবোধ করে…

ও সবাইকে সেটাই বলে। ওর কাছে বিষয়টা নর্মাল। ফলে নর্মাল ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি কেন হবে, সেটাই ওর প্রশ্ন। আর আমি বলব, আমার শারীরিক কষ্টটা কেউ ভাগ করে নিতে পারবে না, কিন্তু মানসিক কষ্টের সঙ্গী ছিল সব্যসাচী। শরীরকে ঠিক করতে হলে মনকে ঠিক রাখা খুব জরুরি। সেটা ও ক্রমাগত খেয়াল রেখেছে। ফলে শরীরে কষ্ট থাকলেও মানসিক শান্তি সারাক্ষণই ছিল। যখনই মন খারাপ হয়েছে। ডিপ্রেশন এসেছে, মাকে, দিদিকে, সব্যসাচীকে পাশে পেয়েছি। সবাই আমার ব্যাপারে খুব কনসার্নড ছিল। আমার একটা ব্লাড রিপোর্ট কিংবা ছোটখাটো কিছু হলেও খুব চিন্তা করেছে।

কিন্তু ব্যাপারটা সকলের জন্য একরকম নয়…

আমি এখানে একটা কথা বলতে চাই, যখনই কেউ এই রোগে ভোগে, তখনই তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করা হয়। সেই মানুষকে বাদের খাতায় রাখা হয়। সেখান থেকে দেখতে গেলে নিজেকে আমি লাকি মনে করি।

প্রচুর মানুষ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন। তুমি তাঁদের কী বলবে?

প্রথম যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, সেই ধাক্কা মেনে নেওয়া কঠিন। প্রথম তিন মাস মেনে নিতে কষ্ট হয়। এটা মানতে কষ্ট হয়, যে আমার অসুস্থতা হয়েছে এবং আমাকে চিকিৎসা করাতে হবে। একটা সময় আসে যখন নিজেকে বোঝাতে হয় চিকিৎসা করাতে হবে। প্রথমে বিশ্বাস করতে হয়, আমার জীবনটা আর পাঁচজন মানুষের মতো স্বাভাবিক নয়। মানতে হয়, যে আমার জীবনে স্ট্রাগল এসেছে। সেটা জয় করতেই হবে। আমি এটাই বলব, প্রত্যেকের জীবনে খারাপ সময় আসে এবং সেই খারাপ সময় চলেও যায়। আমি জানি খুব কষ্ট হয়। আমি নিজে পেয়েছি সেই কষ্ট। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতেই হবে। আমি বিশ্বাস করি রাতের পরে দিন আসে।

তোমাকে আমরা স্ক্রিনে দেখেছি। মাথায় একঢাল কালো চুল, ছিপছিপে চেহারা। ক্যান্সারের পর সেই চেহারা পালটেছে…

জানো তো, আমার কিন্তু উপসর্গ বলতে সেরকম কিছুই ছিল না। বেশ কিছুদিন ধরে খুব মন খারাপ হচ্ছিল। কোনও কারণ ছিল না মন খারাপের। চ্যানেলে আমার সিরিয়াল টপ টিআরপি দিচ্ছিল। সব্যসাচীর মতো এত কেয়ারিং একজন কাছের মানুষ পাশে রয়েছে। বাবা-মা খুশি। কিন্তু তা-ও দু’মাস ধরে মন খারাপ।

সেটাই উপসর্গ?

হ্যাঁ। শুনেছি এই অসুখের অন্যতম কারণ নাকি মন খারাপ বা ডিপ্রেশন। সেরকম হলে তো মানুষ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। কেউ কি এটা ভাবেন, আমার ক্যান্সার হয়েছে। দূরদূরান্ত সেই চিন্তাই আসার কথা নয়। আমারও আসেনি। তাই মন ভাল করার জন্য চুলে রং করলাম। আমার খুব জুতো কালেক্ট করার শখ। মন ভালো করতে দু’টো জুতোও কিনলাম। কিন্তু তাতেও দেখি কিছুতেই মন ভাল থাকছে না। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। তারপরই বুকে ব্যথা শুরু হল। ধরা পড়ল।

তাই…

আমি তো শুরুতে চিকিৎসা করাতেই চাইছিলাম না। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে আমাকে আবার একই নরক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সেটা মেনে নেওয়া আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। শুরুতে আমি মেনে নিতে পারিওনি। আর আমাদের পেশা এমন, সবসময় আয়নার সামনে থাকতে হয়। চুল থেকে নখ, সব ঠিকঠাক রাখতে হয়। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সেজেগুজে থাকতে পছন্দ করি। আগে যেহেতু এটা আমার সঙ্গে হয়েছে, তাই জানতাম, চুল উঠে যাবে, ভুরু উঠে যাবে, চোখের পাতা থাকবে না। অদ্ভুত দেখতে লাগবে আমাকে। তখন আয়না দেখা অভিশাপের মতো হয়ে উঠবে। ওটা আর একটা ট্রমা। ওটা মেনে নেওয়া ক্যান্সার পেশেন্টদের কাছে আরও একটা স্ট্রাগল। সেই সঙ্গে আশপাশের মানুষের মন্তব্য তো আছেই…

তোমাকে শুনতে হয়েছে?

আমি খুব লাকি। আমার পরিবার এবং সব্যসাচী আমার কাছে আছে। আমার যখন চুল উঠে টাক হয়েছিল, সব্যসাচী সেই টাকেই চুমু খেয়ে বলত, আমার এটাই ভাল লাগে।

কী সুন্দর…

এই ধরনের সাপোর্ট পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।

একথা সত্যি, সব্যসাচী তোমার মনকেই ভালবেসেছে…

একদম গো। একদম। ও সত্যি আমাকে অন্তর থেকেই ভালবাসে। কিন্তু আগের বার এরকমটা ছিল না।

সেটা কীরকম ছিল?

আমি তখন মুর্শিদাবাদ বহরমপুরে থাকতাম। এমন সব মন্তব্য আসত, যে দু’দিনের রাতের ঘুম চলে যেত। মা আমাকে নিয়ে বেরত। রাস্তা দিয়ে গেলে লোকজন ঘুরে-ঘুরে তাকাত। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসত।

সত্যিই দুঃখজনক…

কিছু মানুষ এখনও উন্নত হতে পারেনি। এখনও আদিমকালেই পড়ে আছে। এখনও যে সব মানুষ ক্যান্সার সাফার করছেন, তাঁকে ঘুরে তাকিয়ে দেখবেই। আমি কেয়ার করি না। পাত্তা দিই না। কিন্তু কিছু রোগীদের কাছে সেটা খুবই কষ্টের। আমি মানুষের কাছে এটাই অনুরোধ করব, প্লিজ় এই কাজগুলো করবেন না। তাকিয়ে থাকবেন না। কিংবা হাসবেন না। এমনিতেই সেই মানুষটি অনেক কষ্টের মধ্যে আছেন। তাঁকে আর জর্জরিত করবে না।

তুমি কবে আবার স্ক্রিনে আসবে?

আমার যা পরিকল্পনা, ঠিক করেছি এই মার্চ মাস থেকেই স্ক্রিনে ফিরব। আর একমাস একটু রেস্ট নিয়ে কাজ শুরু করব।

আরও পড়ুন: Madhubala: টাকা, গয়না সব কেড়ে মধুবালার ৯৬ বছরের বোনকে দেশছাড়া করল পুত্রবধূ

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ

বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা