Singer KK Death: রেডিয়োর জনপ্রিয় শোয়ের প্লে-লিস্ট থেকে কেকের তিনটি গান কোনওদিন মুছে যায়নি: শ্রী
Sree Basu on KK: আজ সকালে সকলের প্রচণ্ড মন খারাপ। সকাল ৭টায় আমি স্টুডিয়োতে এসেছি। দেখি কেউ নেই। আমি একা। ঢুকে দেখলাম টেবিলের উপরে কেকের গতকালের কনসার্টের টিকিটটা রাখা।
শ্রী বসু
অনেকেই জানেন একটা দীর্ঘ সময় ধরে রেডিয়োতে আমি একটি অনুষ্ঠান করতাম, যার নাম ‘৯০ নট আউট’। মূলত ৯০-এর গান বাজানো হত সেই শোয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ৯০ মানে আমরা জানি কারা সেই সময়টায় রাজত্ব করেছেন। সেখানে ইন্ডি পপের জগতে যদি শান একজন হয়ে থাকেন, তাহলে নির্দ্বিধায় কেকে আরও একজন।
আমাদের রেডিয়োর প্লে-লিস্টে অনেক সময় রিফ্রেশমেন্ট হয়। একটা গান অনেকদিন বাজানোর পর পাল্টাতে হয়। অন্য একটা-দু’টো গান ঢোকে। কিন্তু তিনটে গান, আমার এখনও মনে আছে, কোনওদিনও ‘৯০ নট আউট’-এর প্লে-লিস্ট থেকে সরেনি। একটা ‘আপকি দুয়া’, একটা ‘ইয়ারোঁ’ এবং তৃতীয়টা ‘পল’। এই তিনটে গান ক্রমাগত বেজে গিয়েছিল ‘৯০ নট আউট’-এর প্লে-লিস্ট। এ জন্য নয় যে আমি ব্যক্তিগতভাবে গানগুলো পছন্দ করি। বা যিনি গান সাজাতেন, তিনি সেগুলো পছন্দ করতেন। সেগুলো এই জন্যই থাকত কারণ, গানগুলো এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, সেগুলো আমরা কোনওদিনও প্লে-লিস্ট থেকে সরানোর কথা ভেবে উঠতে পারিনি। এটা আমি একটা রেডিয়ো স্টেশনের কথা বলছি না। আমার ধারণা সব রেডিয়ো স্টেশনের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি।
বর্তমানে আমি আর রেডিয়োতে নেই। কিন্তু আমি ভাল করেই জানি, যখনই জনপ্রিয় কেউ চলে যান, হঠাৎই হোক কিংবা আশঙ্কা করা হচ্ছে এমন কেউ, যদি প্রস্তুতও থাকি— আগেও যেমন হয়েছে ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) কিংবা সুশান্ত সিং রাজপুতের ক্ষেত্রে— মিডিয়ার কর্মীদের ব্যস্ততা তখন খুব বেড়ে যায়। পুরনো সাক্ষাৎকার, পুরনো ছবি, পুরনো গান খুঁজে বের করে, সেগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরের শোয়ে চালানো হয়। আমি গতকাল রাতে ভাবছিলাম, যদি আমি এখনও রেডিয়োতে কাজ করতাম, এই পুরোটা সাজিয়ে আমাদের প্রত্যেককে রেডি করে দিতে হত মীরের জন্য। যে মীর পরদিন সকালে লাইভ শোটা করবে, সেখানে মীরের নিজস্বতা যা থাকার তা তো থাকবেই, সেখানে আমাদের সাজিয়ে দেওয়া অংশগুলোও থাকবে। মিডিয়ার কর্মী হিসেবে তখন আমাদের ব্যস্ততা থাকে—শকড অবস্থায় থাকলেও, কিন্তু পাশাপাশি যেটা থাকে, তা হল পেশার স্বার্থে চরম ব্যস্ততা। সাংঘাতিক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে তখন। মন খারাপের মধ্যেই আমাদের এই কাজগুলো করে যেতে হয়। কারণ এটা আমাদের কাজ, এটা আমাদের পেশা।
এখন আমি আর রেডিয়োতে নেই। এখন আমার সম্পূর্ণ নতুন জগৎ। আজ সকালে সেটে সকলের প্রচণ্ড মন খারাপ। সকাল ৭টায় আমি স্টুডিয়োয় এসেছি। দেখি কেউ নেই। আমি একা। মেকআপ রুমে ঢুকে দেখলাম টেবিলের উপরে কেকের গতকালের কনসার্টের টিকিটটা রাখা। যে কনসার্টের টিকিট জোগাড় করে দিয়েছিল আমার স্বামী। সেটে আমরা যারা একসঙ্গে অভিনয় করি, তাদের মধ্যে চার তরুণ ছেলেমেয়ে এসে বলেছিল, “শ্রীদি, আমরা কেকের শো দেখতে যাব।”
ওদের টিকিটের বন্দোবস্তও আমার স্বামী করে দিয়েছিল। একজন-দু’জন যেতে পারেনি। তাই আজ সকালেও টিকিটগুলো টেবিলের উপরেই রাখা ছিল। সকালে ফাঁকা মেকআপ রুমে এসে চোখ গেল সেই টেবিলের উপর… টিকিট তখনও সেখানে পড়ে তারপর একে-একে অনেকে মেকআপ রুমে ঢুকল। মেকআপ করতে-করতেও শুনে গিয়েছি স্পিকারে-চলা কেকের একের পর-এক গান। ‘ইয়ারোঁ’, ‘পল’, ‘আলবিদা’, ‘খুদা জানে’, ‘অভি অভি’…
আমার সঙ্গে কেকের কোনও ছবিও নেই। আমি কোনওদিনও ওঁর কনসার্ট দেখেও উঠতে পারিনি। এবারেরটাই সুযোগ ছিল। কিন্তু যেতে পারিনি। একটা রেডিয়ো শোয়ের মাধ্যমেই হোক কিংবা বেড়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে, আমাদের সময় বেশি কিছু তো ছিল না। দূরদর্শনের পর্দায় মেরেকেটে কয়েকটা ইন্ডিপপ গান চলত। তাই-ই হয়তো এই সব শিল্পীর মনের মধ্যে এতখানি গেঁথে গিয়েছে। কেকের চলে যাওয়ার আকস্মিকতাটা তা-ই মেনে নেওয়া যায় না। আমার গলা শুনেও হয়তো সেটা বোঝা যাচ্ছে। ঠিক কী রকম যে লাগছে, বলে হয়তো বোঝাতেও পারছি না…